ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

ডায়রিয়া নিয়ে সতর্কতা ও করণীয়

অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০২২
ডায়রিয়া নিয়ে সতর্কতা ও করণীয়

রাজধানীর মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)-এ প্রতিদিন গড়ে ১ হাজারের বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে। রোগী সামলাতে আইসিডিডিআরবি হাসপাতালের বাইরে অস্থায়ী তাঁবু টানানো হয়েছে।

হাসপাতালে ভর্তি রোগীর ২৩ শতাংশ কলেরায় আক্রান্ত। গত মঙ্গলবার আইসিডিডিআরবিতে ১২৭২ জন, বুধবার ১২৩৩ জন এবং বৃহস্পতিবার ২৪ ঘণ্টায় ১১৭৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, প্রতিষ্ঠানের ৬০ বছরের ইতিহাসে এত রোগীর চাপ তারা দেখেনি।

ডায়রিয়া নিয়ে সতর্কতা
১। বাইরের খোলা পানি খাওয়া যাবে না। অবশ্যই সম্পূর্ণ নিরাপদ ও ফুটানো পানি পান করতে হবে।
২। বাইরের খাবারের ব্যাপারেও খুব‌ই সতর্ক হতে হবে। বিশেষ করে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পরিবেশন করা হয় এমন খাবার এড়িয়ে যেতে হবে।
৩। রাস্তার পাশে এই সময় অনেক খোলা পরিবেশে লেবুর শরবত, আখের রস, জুস বা ফল কেটে বিক্রি করা হয়। এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
৪। অত্যধিক গরমে অধিক পানি পিপাসা লাগাই স্বাভাবিক। চেষ্টা করতে হবে নিরাপদ পানি সাথে বহন করা।

ডায়রিয়া নিয়ে কিছু ভুল ধারণা ও করণীয়
মূলত গরমকালে ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। ঠিকভাবে পানি ও লবণ পূরণ করা হলে এটি কখনো গুরুতর আকার ধারণ করে না। বেশির ভাগ ডায়রিয়া এমনিতেই সেরে যায়। কিন্তু ডায়রিয়া হলে ওরস্যালাইন, খাওয়া এমনকি এর চিকিৎসা নিয়ে এখনো রয়ে গেছে কিছু ভুল ধারণা:

১. যাদের উচ্চ রক্তচাপ, তারা ওরস্যালাইন খেতে পারবেন কিনা?
উচ্চ রক্তচাপ আছে এমন রোগীরা ডায়রিয়ার আক্রান্ত হলে ওরস্যালাইন খেতে বিভ্রান্তিতে ভোগেন। কেননা স্যালাইনে লবণ আছে, তাদের আশঙ্কা ওরস্যালাইন খেলে রক্তচাপ বাড়তে পারে। এটি গুরুতর ভুল ধারণা। প্রতিবার পাতলা পায়খানার সঙ্গে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি ও লবণ বের হয়ে যায় এবং তা যথাযথভাবে পূরণ করা না হলে রোগীর পানিশূন্যতা, লবণশূন্যতা এমনকি রক্তচাপ কমে গিয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করে মৃত্যুও হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ক্ষেত্রে ওরস্যালাইন খেতে নিষেধ নেই।

২. ডায়াবেটিসের রোগীরা কি ওরস্যালাইন খেতে পারবেন না?
ওরস্যালাইনে চিনি বা গ্লুকোজ থাকে, তাই ডায়াবেটিস রোগীরা ওরস্যালাইন খেতে ভয় পান, মনে করেন, ওরস্যালাইন খেলে ডায়াবেটিস বাড়তে পারে।  কিন্তু মনে রাখতে হবে, ওরস্যালাইনে যে সামান্য চিনি বা গ্লুকোজ আছে, তা অন্ত্রে লবণ শোষণের কাজে ব্যয়িত হয়। সুতরাং ডায়রিয়ার সময় ডায়াবেটিস রোগীরা নির্দ্বিধায় ওরস্যালাইন খেতে পারবেন।

৩. কিডনি রোগীরা কি ডায়রিয়া হলেও মেপে পানি খাবেন?
যারা কিডনির জটিলতায় ভোগেন তারা অনেকেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন, কারণ স্বাভাবিকভাবে তাদের নিয়মিত নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি মেপে খেতে বলা হয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ডায়রিয়ার অধিক পরিমাণ পানি শরীর থেকে বেরিয়ে যায়, ফলে পানিশূন্যতার ফলে কিডনি রোগ আরও বাড়তে পারে। সুতরাং প্রয়োজনে অতিরিক্ত তরল গ্রহণ করতে হবে।

৪. ডায়রিয়ার রোগীরা কি স্বাভাবিক খাবার খাবেন?
অনেকেই বিভ্রান্তিতে ভোগেন, ডায়রিয়া হলে স্বাভাবিক খাবার খেতে পারবেন কিনা। আসলে ঘরে তৈরি পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত সব ধরনের স্বাভাবিক খাবারই খেতে মানা নেই। ভাত, মাছ, সবজি ইত্যাদি স্বাভাবিক ও সহজপাচ্য খাবার খেতে কোনো বাধা নেই। স্তন্যপানরত শিশুরা কোনো অবস্থাতেই বুকের দুধ খাওয়া বন্ধ করবে না।

৫. সারা দিনে এক প্যাকেট স্যালাইন খেলেই চলবে?
স্যালাইন কতটুকু খেতে হবে তা নির্ভর করবে কতবার পাতলা পায়খানা হচ্ছে বা কতটুকু পানি হারাচ্ছেন তার ওপর। ডায়রিয়ার কারণে একজন মানুষ মাত্র কয়েক ঘণ্টায় এক দেড় লিটারের বেশি পানি হারাতে পারেন। সবচেয়ে সহজ হিসাব হলো প্রতিবার পায়খানা হওয়ার পর স্যালাইন খাওয়া এবং অল্প অল্প করে সারা দিন বার বার খাওয়া। এর বাইরে সারা দিন পানি ও তরল খাবার যেমন স্যুপ, ডাবের পানি ইত্যাদি খেতে হবে।

৬. বমি বা পাতলা পায়খানা দ্রুত বন্ধের জন্য ওষুধ সেবন প্রয়োজন কিনা?
অনেক সময় ফুড পয়জনিংয়ের কারণে বমি বা পাতলা পায়খানা হয়ে থাকে। মানুষ স্বভাবতই ফার্মেসি থেকে বমি বা পাতলা পায়খানা দ্রুত বন্ধের জন্য ওষুধ খান, যা একেবারেই ঠিক নয়। অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত ওষুধ খাওয়া ঠিক হবে না, কারণ পয়জনিংয়ের ক্ষেত্রে বরং কিছু সময় বমি ও পাতলা পায়খানার মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ পয়জন বের হয়ে যায়।

৭. অ্যান্টিবায়োটিক কি জরুরি?
সব ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক জরুরি নয়। প্রয়োজন হলো, দেহের লবণ ও পানিশূন্যতা পূরণ। দরকার হলে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া যেতে পারে।

৮. শিরায় স্যালাইন নিতেই হবে?
অনেকে শিরায় স্যালাইন নিতে ভয় পান। কিন্তু ডায়রিয়ায় মাত্রা যদি তীব্র হয় তাহলে শুধু মুখে স্যালাইন পান করে শরীরে সৃষ্ট পানিশূন্যতা পূরণ করা সম্ভব না। তাই প্রয়োজনে শিরায় স্যালাইন নিতে হবে।

লেখক: মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০২২
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।