ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

কী এমন রয়েছে ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে?

শেখ তানজির আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২২
কী এমন রয়েছে ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে?

সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার উপকূলীয় শ্যামনগর উপজেলার সোয়ালিয়ায় স্থাপিত ‘ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল’ এতোদিন প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকা মানুষের কাছে ‘চিকিৎসা বন্ধু’ হিসেবে পরিচিত পেলেও সম্প্রতি এর স্থাপত্য শৈলী নজর কেড়েছে বিশ্ববাসীর।

স্থানীয় প্রযুক্তি ও নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে এর স্থপতি ও ঢাকা ভিত্তিক স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান আরবানা’র পরিচালক কাশেফ মাহবুব চৌধুরী হাসপাতালটি নির্মাণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে।

যা ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালকে এনে দিয়েছে বিশ্বসেরা ভবনের খেতাব।

গত ২৬ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ব্রিটিশ আর্কিটেক্টস (রিবা) ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের স্থাপত্য শৈলীকে কম খরচে ব্যতিক্রমী নকশায় নির্মিত ভবন হিসেবে বিশ্বসেরা ঘোষণা করে। এজন্য স্বাভাবিকভাবেই কৌতুহল জাগার কথা, কী এমন রয়েছে ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে?  

সূত্র মতে, শ্যামনগরের সোয়ালিয়ায় প্রায় ২ একর জমির ওপর ২০১৩ সালে হাসপাতালটির নির্মাণ কাজ শুরু করে এনজিও ফ্রেন্ডশিপ। ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০১৮ সালে। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত এই হাসপাতালে ৪১ হাজার বর্গফুট জায়গাজুড়ে রয়েছে ২০টি ভবন। যা সম্পূর্ণ স্থানীয় প্রযুক্তি ও নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে নির্মিত। আউটডোর-ইনডোর চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ ২০টি ভবনে অডিটোরিয়াম, কনভেনশন সেন্টার, ক্যানটিন, প্রার্থনা কক্ষ, চিকিৎসক-নার্সসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে তিনটি অপারেশন থিয়েটার ও অত্যাধুনিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাসহ ২৪ ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস।

হাসপাতালটিতে দন্ত, চোখের ছানি, জরায়ু ক্যান্সার, হৃদরোগ, মগুরপা, ঠোঁটের তালুকাটা, বার্ন, অর্থপেডিক, ডায়াবেটিক, ফিজিওথেরাপি, স্ত্রী রোগ ও শিশুরোগসহ আউটডোরে সব ধরনের রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। ছয় জন চিকিৎসক, ১২ জন নার্স ও অন্য সহকারীদের সমন্বয়ে ২০ বেডের হাসপাতালটিতে রয়েছে চারটি ওয়ার্ড। এতোকিছুর পরও এখন হাসপাতালটির মূল আকর্ষণ এর স্থাপত্য শৈলী।

স্থাপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী হাসপাতালটি নির্মাণের ক্ষেত্রে স্থানীয় পরিবেশ-প্রতিবেশের ওপর বিশেষ নজর রেখেছেন। যেখানে গোটা শ্যামনগরে লবণাক্ততার কারণে মানুষের জীবন জর্জরিত, সুপেয় খাবার ও ব্যবহার্য পানির চরম সংকট, স্থানীয় পরিবেশ-প্রকৃতি বিপর্যস্ত, সেখানে হাসপাতালটির স্থাপত্য শৈলীর মাধ্যমে মনোরম পরিবেশ তৈরির পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলার চেষ্টা করেছেন তিনি।

যার মূল আকর্ষণ বা ক্রীড়ানক হাসপাতালটির ভেতরে ১০ ফুট প্রশস্ত জলাশয়। ইটের গাঁথুনি আর ঢালাইয়ে বানানো দেয়াল ও ছাদের ভবনে নেই পলেস্তারা। নিচ দিয়ে বয়ে চলেছে পানির প্রবাহ। রয়েছে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার বিশেষ ব্যবস্থা। লবণাক্ততার মধ্যে স্বাদু পানির এই জলাশয়গুলোই হাসপাতালটির স্থাপত্য শৈলীর মূল আকর্ষণ। যা প্রচণ্ড গরমেও হাসপাতালের পরিবেশ ঠাণ্ডা রাখে। একই সঙ্গে সুপেয় পানির সংকট মোকাবিলায়ও সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

ফ্রেন্ডশিপের মিডিয়া কনসালটেন্ট জুনায়েদ আলী সাকী স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, শ্যামনগরে শুধু মাটির ওপরে নয় নিচেও লবণাক্ততা। এই পানি খাওয়া, রান্না কিংবা গোসলেও ব্যবহার করা যায় না। বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য এই অঞ্চলে অনেকটা যুদ্ধ করে মানুষ। এটিই মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। এসব কথা চিন্তা করেই ভবনটির নকশা করা হয়েছিল।

 

বাংলাদেশ সময়: ২১৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২২
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।