ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

মাগুরায় অপচিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২১
মাগুরায় অপচিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ হাসিনা ক্লিনিক

মাগুরা: মাগুরায় ডাক্তারের অপচিকিৎসার কারণে আবারও এক প্রসূতি নারীর মৃত্যর ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মাগুরার বহুল আলোচিত চিকিৎসক মাসুদল হকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেছে নিহতের পরিবার।

ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন অভিযুক্ত পলিথিন ডাক্তার খ্যাত চিকিৎসক মাসুদুল হক।

মাগুরা ঋষিপাড়া এলাকায় হাসিনা ক্লিনিকে বুধবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকালে অস্ত্রপচারের পরই প্রসূতির মৃত্যুর এ ঘটনা ঘটে।  

জানা যায়, মহাম্মাদপুর উপজেলার রাজাপুর গ্রামের দরিদ্র প্রসূতি গৃহবধূকে চিকিৎসার জন্য বুধবার সকালে হাসিনা ক্লিনিকে আনা হয়। পরে চিকিৎসক মাসুদুল হক তাকে অস্ত্রপচার করার কিছু সময়ের মধ্যেই প্রসূতির মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় দিনভর নানা দেনদরবার শেষে বুধবার রাতেই পলিথিন ডাক্তার ক্ষ্যাত অপচিকিৎসক মাসুদুলসহ অজ্ঞাত আরও তিন জনকে আসামি করে মাগুরা সদর থানায় মামলা দায়ের করেছে ভুক্তভোগী পরিবার।

নিহতের ভাই রুবেল অভিযোগ করেন, তার বোন মৌসুমীকে বুধবার সকাল ৬টায় হাসিনা ক্লিনিকে আনা হলে তার সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য ক্লিনিক কতৃপক্ষ ডাক্তার মাসুদুল হককে দিয়ে অস্ত্রপচার করান। এই অস্ত্রপচারের কিছু সময় পরই মৃত্যু হয় তার। ডাক্তারের অপচিকৎসা ও ক্লিনিক কতৃপক্ষের অবহেলার কারণে বোনের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করে তিনি অপচিকিৎসক মাসুদুলসহ অজ্ঞাত আরও তিন জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন।

এছাড়াও ক্লিনিকের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও চিকিৎসায় অবহেলার বিষয় ওই এজাহারে উল্ল্যেখ করে তিনি বোনের মৃত্যুর জন্য দায়ী অপচিকিৎসক মাসুদুল ও ক্লিনিক কতৃপক্ষের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।  

নিহত মৌসুমির স্বামী দরিদ্র হাবিবার হোসেন বাংলানিউজকে জানান, ভোর ৬টার দিকে প্রসূতি স্ত্রীকে নিয়ে হাসিনা ক্লিনিকে ভর্তি করে রেখে অর্থ ও খাবার আনার জন্য রাজাপুর নিজ বাড়িতে ফিরে যান। এ সময় অস্ত্রপচারের জন্য রক্তের প্রয়োজন বলে জানায় ক্লিনিক কতৃপক্ষ। এ অবস্থায় তিনি জরুরি ভিত্তিতে মাগুরার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে মাগুরা মীরপাড়া মোড়ে এলে তার স্ত্রীর মৃত্যর খবর জানতে পারেন। ইতোমধ্যে মীরপাড়া থেকে সামান্য ব্যবধানে পিটিআই স্কুলের সামনে অবস্থিত ক্লিনিকটিতে এলে ক্লিনিকের মালিক অ্যাম্বুলেন্সযোগে তার স্ত্রীর মরদেহ নিয়ে তাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেছেন বলে জানতে পারেন তিনি। এ অবস্থায় তিনি পরিবারের অন্যদের জানিয়ে মরদেহ নিয়ে ক্লিনিকে ফিরে আসার জন্য বলেন। পরে মরদেহ ফিরিয়ে আনা হোলেও ক্লিনিকের মালিককে খুজে পাননি তারা।  

তিনি জানান ভর্তির পর পরই তড়িঘড়ি অস্ত্রপচার ও আকস্মিক রক্তের ব্যবস্থার কথা বলার পরই মৃত্যুর ঘটনাসহ কর্তৃপক্ষ কাউকে কিছু না জানিয়ে মরদেহ নিয়ে তড়িঘড়ি করে বাড়িতে রওনা হয়ে যাওয়ার নানা বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন তারা।

এনিয়ে জানতে চাইলে ক্লিনিক মালিক সামনে না এসে দিনভর তার লোকজন পাঠিয়ে মরদেহ নিয়ে বাড়ি ফিরে যাবার জন্য চাপ প্রয়োগসহ নানাভাবে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন। পরে বিকেলে থানায় গিয়ে অভিযোগ জানালে পুলিশ অভিযোগ আমলে নিয়ে মরদেহ নিজ হেফাজতে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। রাতে এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন তারা।  

মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদিন বাংলানিউজকে জানান, সিজারিয়ান অপারেশনে পর মৌসুমি (২৫) নামে এক প্রসূতির মৃত্যর ঘটনায় চিকিৎসকের অবহেলা ও ক্লিনিকের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করে নিহতের ভাইয়ের দেওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত চিকিৎসক মাসুদুর রহমানসহ অজ্ঞাত তিন জনকে আসামি করে বুধবার রাতে থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে পাঠানো হয়।  

তিনি আরও জানান, এর আগেও অভিযুক্ত ডাক্তারের অপচিকিৎসায় রোগী মৃত্যর ঘটনায় সদর থানায় একটিসহ আদালতে একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। তাদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২১
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।