ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

বারডেমে রোগীদের ভোগান্তি দীর্ঘ সিরিয়ালে!

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৬
বারডেমে রোগীদের ভোগান্তি দীর্ঘ সিরিয়ালে! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ডায়াবেটিস রোগীদের চিকিৎসার ভরসাস্থল রাজধানীর শাহবাগের বারডেম জেনারেল হাসপাতাল। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রোগীরা এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। ফলে সকাল থেকেই হাসপাতালে রোগীদের ভিড় লেগেই থাকে।

ঢাকা: ডায়াবেটিস রোগীদের চিকিৎসার ভরসাস্থল রাজধানীর শাহবাগের বারডেম জেনারেল হাসপাতাল। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রোগীরা এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন।

ফলে সকাল থেকেই হাসপাতালে রোগীদের ভিড় লেগেই থাকে।

তবে সেবা নিতে আসা রোগীর তুলনায় সুযোগ-সুবিধা অপ্রতুল হওয়ায়  নানা ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাদের। বিশেষ করে ডাক্তার দেখাতে ও বিভিন্ন পরীক্ষা করাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দীর্ঘ সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে অসুস্থ রোগীদের।
 
রোববার (২০ নভেম্বর) বারডেম জেনারেল হাসপাতালে সরেজমিনে ঘুরে রোগীদের দীর্ঘ সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে ভোগান্তিতে পড়ার চিত্র দেখা গেছে।
 
ক্যাশ কাউন্টারে, ডাক্তারের রুমের সামনে, রক্ত পরীক্ষাগারে, লিফটের সামনে, ইসিজি রুম, ডায়াবেটিস গাইড নিতে, রেজিস্ট্রেশন করতে, এক্সরে রুমসহ প্রতিটি স্থানে রোগীদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। এসব লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অনেকেই হাঁফিয়ে ওঠেন। আত্মীয়-স্বজন সঙ্গে থাকলে তাকে লাইনে রেখে ওয়েটিং রুমে বসে পড়েন।

হাসপাতালে সেবা নিতে আসা ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের অর্ধেকের বেশি প্রবীণ। এসব অসুস্থ বয়স্ক রোগীরাই বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
 
রোগীদের অভিযোগ, দিন দিন ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কিন্তু সে তুলনায় বারডেম হাসপাতালের সেবার মান বাড়ছে না।
 
রোগীরা জানান, বিভিন্ন কাউন্টারে টাকা জমা দিয়ে স্লিপ নিয়ে সেসব কাজ শেষে ডাক্তারকে দেখাতে হয়। তবে কাউন্টারগুলোর সিরিয়াল অনেক লম্বা থাকে। তাই লাইনের প্রথমদিকে জায়গা পেতে  ডাক্তার আসার আগেই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন তারা।

এসব শেষে ডাক্তারের রুমের সামনে আবার দীর্ঘ সিরিয়ালে পড়তে হয়।

নারায়ণগঞ্জ থেকে হাড়ের ব্যথা নিয়ে মিতালী রানী এসেছেন অর্থোপেডিকের ডাক্তার দেখাতে। রক্ত পরীক্ষা ও এক্সরে করাতেই তার ৫ ঘণ্টা লেগে যায়। রিপোর্ট নিয়ে চিকিৎসকের রুমের সামনে সিরিয়াল নিয়ে বসেছিলেন।
 
হাড়ের ব্যথা হওয়া অংশটুকু দেখাতে দেখাতে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘কয়েকদিন থেকে হাড়ে প্রচণ্ড ব্যথা। আমার আবার ডায়াবেটিসও আছে। এজন্য হাড়ের চিকিৎসার পাশাপাশি ডায়াবেটিসটাও চেক করতে হচ্ছে। এ কারণে বারডেমে এসেছি সেই বেলা বারোটায়, এখনও ডাক্তার দেখাতে পারিনি। এখানে চিকিৎসা ভালো বলেই আসি। তবে ডাক্তার দেখানো, টাকা জমা দেওয়া, রক্ত পরীক্ষা- সবকিছুতেই দীর্ঘ লাইন। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পায়ে ব্যথা ধরে গেছে’।
 
ঘুরে দেখা গেছে, ক্যাশ কাউন্টারে প্রতিটি বুথের সামনেই দীর্ঘ লাইন। ওয়েটিং রুমেও শত শত রোগী ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন। ডাক্তারদের সহকারীদের রোগীদের সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
 
হাসপাতালের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. হোসনে আরার রুমের সামনে রোগীদের সিরিয়াল সমন্বয় করছিলেন আলমগীর। দীর্ঘ সিরিয়ালের কারণে তাকে হিমশিম খেতে দেখা গেছে। সব রোগীই ব্যস্ততা দেখিয়ে আগে সিরিয়াল চাচ্ছিলেন।
 
আলমগীর বাংল‍ানিউজকে বলেন, ‘সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বারডেমে রোগীর চাপ বেশি থাকে। সিরিয়াল সামলাতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। অবশ্য, এখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থা ভালো। তাই কষ্ট হলেও মানুষ ভালো চিকিৎসা নিয়ে ফিরে যান’।
 
১৫ নম্বর ক্যাশ কাউন্টারে দাঁড়িয়ে রোগী সেকেন্দার অভিযোগ করে বলেন, ‘আরে বাবা, লাইনে দাঁড়াতে তো সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে, যারা টাকা জমা নিচ্ছেন, তাদের ব্যবহারের। কিছুক্ষণ পর পর তারা বাইরে যান, ফোনে কথা বলেন। মাঝে মাঝে বুথে টাকা নেওয়া বন্ধ করে বলেন, ‍অন্য বুথে যান। তখনই খারাপ লাগে’।
 
বারডেম হাসপাতালের আবাসিক সার্জন  ডা. মহাম্মুন্নবী ফিরোজ বাংলানিউজকে বলেন, ‘লাইনে দীর্ঘ অপেক্ষার কারণে রোগীদের ভোগান্তির চিত্র আমরাও লক্ষ্য করেছি। আমাদের সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে স্পেসের অভাব। কয়েক বছর আগে প্রতিদিন রোগী আসতেন ১ হাজার ৫শ’ জন করে। এখন প্রতিদিন রোগী আসেন সাড়ে তিন হাজারের বেশি। রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের সামলাতে’।
 
‘দিনে দিনে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এ কারণে আমরা সরকারের কাছে বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিকার পাইনি’।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৬
এমসি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।