ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

ভুলতা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রোগী দেখেন পিয়ন

সাইফুল ইসলাম, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৪
ভুলতা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রোগী দেখেন পিয়ন ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রূপগঞ্জ (নারায়নগঞ্জ): নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে চিকিৎসকদের নিয়োগ দেওয়া পিওন ছলিম উদ্দিন নামে এক পিয়ন রোগী দেখেন ও তাদের ওষুধ দেন! দীর্ঘদিন ধরে এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এ অবস্থা বিরাজ করলেও দেখার কেউ নেই।

শুধু তাই নয়, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবনের দ্বিতীয় তলার দুটি ফ্ল্যাটের মধ্যে একটি ফ্ল্যাট অন্যত্র ভাড়া দেওয়া বলেও অভিযোগ উঠেছে।

স্বাস্থ্য কেন্দ্রে না এসে মাসে মাসে বেতন-ভাতা তুলে নিচ্ছেন সেখানে নিয়োজিত ডাক্তাররা। তারা প্রাইভেট ক্লিনিকে বসছেন নিয়মিত।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তোফাজ্জল হোসেন সরদারকে ম্যানেজ করেই ওই সব চিকিৎসকরা হাসপাতালে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে প্রাইভেট চেম্বারে বসেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ভুলতা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে চারজন ডাক্তার  দায়িত্বে রয়েছেন।

এরা হলেন- ডা. গোলাম সাদিক, সহকারী হিসেবে রয়েছেন মেজবাউল হাসান প্রধান ও নীলিমা রানী দাস। আর পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে রয়েছেন আয়েশা সিদ্দিকা।

অভিযোগ রয়েছে- এদের মধ্যে ডা. গোলাম সাদিক, সহকারী মেজবাউল হাসান প্রধান ও নীলিমা রানী দাস মাসে ২/৪ দিন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে যান। প্রতিদিন বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে বসাই তাদের কাজ।

শুধু তাই নয়, এ তিন ডাক্তার ব্যক্তিগতভাবে ৯ হাজার টাকা বেতন দিয়ে ছলিম উদ্দিন ওরফে চাচা নামে এক ব্যক্তিকে পিয়ন পদে নিয়োগ দিয়েছেন। পিয়ন ছলিম উদ্দিন ওই তিন ডাক্তারের দায়িত্ব নিয়ে রোগী দেখেন ও ওষুধ বিতরণ করেন।
pion_1
স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আগত রোগীদের সমস্যা শুনে ওষুধ দিয়ে থাকেন তিনি। এতে করে রোগীরা ভুল ওষুধ সেবন করে আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

কয়েকদিন ধরে সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, ডা. গোলাম সাদিক, মেজবাউল হাসান প্রধান ও নীলিমা রানী দাস স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসেননি। তাদের কক্ষগুলো খালি রয়েছে। এসেছেন পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের আয়েশা সিদ্দিকা। এসময় স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রোগীরা এসে ভিড় জমাচ্ছেন। গরীব রোগীরা ডাক্তার না পেয়ে পিওন ছলিম উদ্দিনের (চাচা) চিকিৎসা সেবা নিয়ে চলে যাচ্ছেন।

পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের আয়েশা সিদ্দিকা দুঃখ করে বাংলানিউজকে বলেন, ভাই আমি ব্যস্ত থাকি পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ নিয়ে। স্বাস্থ্য বিভাগের বিষয়টি নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। কারণ আমি এ কেন্দ্রে নিয়মিত বসে থাকি। এখানে রোগীরা ডাক্তার নিয়ে যেসব সমালোচনা করে তাতে আমারই লজ্জা লাগে। আমারতো কিছু করার নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসা এক রোগীল মা রুবি আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, আমার ছেলে রিফাত মিয়ার জ্বর হয়েছে। তাই ডাক্তার দেখাতে ভুলতা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে এসেছিলাম। ডাক্তার না থাকায় প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যাচ্ছি।

রোগী জামির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, পিয়ন ছলিম উদ্দিনের ওষুধ খেয়ে আমি আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। এখন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ডাক্তার দেখাতে এসেছিলাম কিন্তু ডাক্তার কখনই পাই না।

রোগী তাসলিমা বেগম, আলাতুন নেছা, আম্বিয়া খাতুনসহ আরো অনেকেই এ ধরনের অভিযোগ করেন।
pion_2
অভিযোগ রয়েছে- ডা. গোলাম সাদিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবনটির দ্বিতীয় তলার একটি ফ্ল্যাট অন্যত্র ভাড়া দিয়েছেন। এতে ওই ফ্ল্যাট থেকে প্রতি মাসে প্রায় ৬ হাজার টাকা ভাড়া পেয়ে থাকেন।

এ বিষয়ে সহকারী ডাক্তার মেজবাউল হাসান প্রধান ও নীলিমা রানী দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের সিনিয়র ডা. গোলাম সাদিক। তার সঙ্গে কথা বলেন।

এ ব্যপারে অভিযুক্ত ডা. গোলাম সাদিক বাংলানিউজকে বলেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বিভিন্ন কাজে বাইরে থাকতে হয়। আর এ জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অনেক সময় রোগীরা আমাদের পান না।

পিওন ছলিম উদ্দিনের বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একজন ফার্মাসিস্ট নেই, নেই একজন পিয়ন। তাই আমরা ব্যক্তিগতভাবে টাকা দিয়ে তাকে রেখেছি। এছাড়া তিনি পুরনো একজন মানুষ। কিছুটা অভিজ্ঞতা রয়েছে।

ডাক্তার না থাকলে তিনি রোগী দেখেন ও ওষুধ দেন বলে স্বীকার করেন ডা. গোলাম সাদিক।  

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তোফাজ্জল হোসেন সরদার বাংলানিউজকে বলেন,  এ ধরনের ঘটনা আমার জানা ছিল না। যেহেতু জেনেছি এর উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব। এছাড়া তাকে ম্যানেজ করার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০১৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।