ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

বিশুদ্ধ খাদ্যের স্বপ্ন কতো দূর!

রহমান মাসুদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৪
বিশুদ্ধ খাদ্যের স্বপ্ন কতো দূর!

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রীর ভেজাল খাদ্যের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা বিষুদ্ধ খাদ্য নিরাপত্তায় কতোটা ভূমিকা রাখবে তা নিয়ে সন্দিহান সংশ্লিষ্টরা। ভেজাল খাদ্য উৎপাদকদের ক্ষমতা ও কৌশলই এমন সংশয়ের জন্ম দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।


 
ঢাকা সাউথ সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, দেশের প্রায় সব কোম্পানির উৎপাদন প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ ও বিষুদ্ধ খাদ্য আইন পরিপন্থি। তাই কোম্পানিগুলোর ক্ষমতা আর কৌশলের কাছে স্বাস্থ্যবিভাগকে বারবার হেরে যেতে হয়।

তিনি বলেন, প্রথমে দুই সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বরত ফুড অ্যান্ড স্যানিটেশন ইনসপেক্টর ও নমুনা সংগ্রহকারীর দিকে তাদের নজর থাকে। বড় ধরনের মাসোহারা দিয়ে প্রায় সব কোম্পানি এদের ম্যানেজ করে।
 
এছাড়াও যে ২/১জন ফুড অ্যান্ড স্যানিটারি ইনসপেক্টর ও নমুনা সংগহকারীর সঙ্গে কোম্পানিগুলোর বনিবনা হয়না তারা বাজার থেকে নমুনা সংগ্রহ করে। ওই নমুনা প্রথমে ডিসিসি, পরে বিভিন্ন পরীক্ষণাগারে পাঠানো হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে বেশিরভাগ পরীক্ষণাগারের সক্ষমতা ও সদিচ্ছায় ঘাটতি দেখা দেয়।
 
তিনি বলেন, ২/১টি গবেষণাগার ভেজাল পণ্য উৎপাদক সিন্ডিকেটের কাছে বিক্রি হয়ে থাকে। তরা কোন রকমে একটা প্রতিবেদন দিয়ে থাকে- যা ডিসিসির স্বাস্থ্য বিভাগে জমা হয়। কিন্তু কোম্পানির পেইড এজেন্ট আছে এখানেও। তারা সব খবরই সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে সঙ্গে সঙ্গে অবহিত করে। তাই মামলা হওয়ার আগেই অনেক কিছু থেমে যায়।
 
বিষুদ্ধ খাদ্য আদালতের বিশেষ নির্দেশে যেসব পণ্য বিশেষভাবে সংগৃহীত হয় এবং পরীক্ষা হয়, সেগুলোতে ভেজাল প্রমাণিত হলে দেশের একমাত্র খাদ্য আদালতে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে বিষুদ্ধ খাদ্য আইন অনুযায়ী ভেজাল খাদ্য উৎপাদন ও বিপণনের অভিযোগে মামলা করেন নমুনা সংগ্রহকারী ইনসপেক্টর। কিন্তু মামলা হওয়ার পর কোম্পানিগুলো উচ্চ আদালতে রিট করে মামলার বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ চান অথবা উচ্চ আদালতে এ বিষয়ে মীমাংসা চান। আর হাজার মামলার ভিড়ে মামলাগুলো আদালতে পড়ে থাকে দিনের পর দিন। কিন্তু কোম্পানিগুলোর ভেজাল পণ্য উৎপাদন থেমে থাকে না।
 
উচ্চ আদালতে আশ্রয়
বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতে ভেজাল খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও বিপণনের দায়ে দেশের প্রায় সব খাদ্যপণ্য উৎপাদক ও প্রস্তুতকারীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ কোম্পানি বিশেষ এ আদালত থেকে মামলা উচ্চ আদালতে নিয়ে যায়। ডিসিসির কেবল একজন ফুড অ্যান্ড স্যানিটারি ইনসপেক্টরের এমন মামলার সংখ্যা ১৯। এরমধ্যে কেবল তিনটি মামলার মীমাংসা হয়েছে।
 
অমীমাংশিত মামলার মধ্যে রয়েছে- ড. মুহম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ ড্যানোন ফুডস লিমিটেড, ফজলুর রহমানের সিটি গ্রুপ, সমবায়ী প্রতিষ্ঠান মিল্কভিটা, মোস্তফা কামালের ফ্রেস ও মেঘনা গ্রুপ, ড. আরিফ দৌলার এসিআই ফুডস, নিয়াজ রহিমের আগোরা, আহমেদ ফুড প্রডাক্টস, ফখরুদ্দীন ফুডস প্রডাক্টস, ইপ উন জী এবং আইনুল হক সরদারের বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড ও রূপচাঁদা,  কাজী রুহুল আমিনের প্রিন্স ফুড প্রডাক্টস, আবুল কালামের সুপার অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড ও পুষ্টি সয়াবিন তেল, শেখ আমানুল্লাহর আফতাব ফুড প্রডাক্টস, মসরুর চৌধুরীর নন্দন মেগাশপ, আব্দুল মজীদ চৌধুরীর ইয়াম্মী ইয়াম্মী ফুডস অ্যান্ড ফ্লেভারস লিমিটেড, পোলার আইসক্রীম, সেভয় আইসক্রীম ও অনিল ঘোষের গাওয়া ঘি এর মামলা।
 
ডিসিসি সাউথ ও নর্থের ২২ ইনসপেক্টরের প্রায় সবারই এমন একাধিক মামলা উচ্চ আদালতে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর অমীমাংসিত অবস্থায় রয়েছে।
 
বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতের সাবেক এক বিচারক এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, কোম্পানিগুলোর হাত অনেক লম্বা। তারা নানা প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করে। পরে একেএকে সবাইকে টাকা দিয়ে কিনতে চায়। তাতেও সফল না হলে মামলা, উচ্চ আদালতে নিয়ে গিয়ে বছরের পর বছর ফেলে রাখে এবং অবাধে ক্ষতিকর খাদ্য পণ্য উৎপাদন করে যায়।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।