ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে এক চিকিৎসকের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে আরিফ হোসেন (১৮) নামে চিকিৎসা নিতে আসা মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত এক রোগীর বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত যুবককে আটক করে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, রোগী মানসিক সমস্যায় ভুগলে পরিবার থেকে আগেই তা জানানো উচিত। তারা প্রশ্ন তুলেছেন- ‘যদি ওই রোগী ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করতেন, তখন কী হতো?’
শুক্রবার (২৭ জুন) বিকেল পৌনে ৫টার দিকে ঢামেকের জরুরি বিভাগে এ ঘটনা ঘটে।
হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের সহকারী ইনচার্জ মো. মাসুদ বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, জরুরি বিভাগের ইমার্জেন্সি অপারেশন থিয়েটারের (কক্ষ-৪) নিউরোসার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মনিমুল আহমেদের গালে থাপ্পড় মারেন আরিফ। পরে আনসার সদস্যরা তাকে আটক করে পুলিশ ক্যাম্পে নিয়ে আসেন। এরপর তাকে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়।
অভিযুক্ত আরিফের বাবা মো. তাজউদ্দিন জানান, তারা নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লার কাশিপুর খিল মার্কেট এলাকায় থাকেন। আরিফ একটি ছাপাখানায় কাজ করতেন। কয়েক মাস আগে তার মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসার পাশাপাশি ফকিরের ঝাড়ফুঁকও চলছিল।
তিনি জানান, সপ্তাহখানেক আগে ফতুল্লা শান্তিনগর এলাকায় সোহেল নেতা নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা হলে আরিফকে তিনি ডাকেন। তখন আরিফের অস্বাভাবিক আচরণে ক্ষিপ্ত হয়ে কয়েকজন মিলে তাকে মারধর করেন। এরপর থেকে আরিফ ঠিকমতো হাঁটতেও পারছিলেন না। তখন তাকে নারায়ণগঞ্জের ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। চিকিৎসকরা মাথার সিটি-স্ক্যান করাতে এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢামেকে পাঠান।
তাজউদ্দিন আরও বলেন, আজ জরুরি বিভাগে টিকিট কেটে ৪ নম্বর কক্ষে ঢোকার পর চিকিৎসক জানতে চান, আমরা কোথা থেকে এসেছি। ঠিক তখনই আরিফ হুট করে চিকিৎসকের গালে থাপ্পড় মারেন।
আরিফের মা শিল্পী বেগম বলেন, ‘আমার ছেলের মাথায় সমস্যা। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি। মাথায় সমস্যার কারণে না বুঝে ডাক্তারকে মেরেছে। ডাক্তাররা তাকে পুলিশ ক্যাম্পে দিয়েছেন। ’
ঘটনার পর জরুরি বিভাগে নিউরোসার্জারি চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। অন্যান্য বিভাগের সেবা চললেও নিউরোসার্জারি বিভাগ প্রায় ঘণ্টাখানেক বন্ধ থাকার পর আবার চালু হয়।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক (আরএস) মোস্তাক আহমেদ বলেন, কর্তব্যরত চিকিৎসকের গায়ে হাত তুলেছেন চিকিৎসা নিতে আসা আরিফ নামে একজন রোগী। এ ঘটনায় পরিবার জানিয়েছে, ওই যুবক মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। তবে এটা আগেই জানানো উচিত ছিল। রোগী যদি ধারালো কোনো অস্ত্র দিয়ে হামলা করতেন, তখন কী হতো? এসব ঘটনা এড়াতে আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা দরকার।
তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিয়ে আবারও কথা হয়েছে।
হামলার বিষয়ে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, চিকিৎসকদের নিরাপত্তা বিষয়টি নিয়ে আবারও আলোচনা হয়েছে।
এজেডএস/এসআরএস