ঢাকা, সোমবার, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২৬ মে ২০২৫, ২৮ জিলকদ ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

হাসপাতালে বিষপান করলেন জুলাই অভ্যুত্থানে চোখ হারানো ৪ জন 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:৩২, মে ২৫, ২০২৫
হাসপাতালে বিষপান করলেন জুলাই অভ্যুত্থানে চোখ হারানো ৪ জন  বর্তমানে চারজন শঙ্কামুক্ত রয়েছেন।

ঢাকা: ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জুলাই অভ্যুত্থানে চোখ হারানো চারজন রাজধানীর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে বিষপান করেছেন। এরা হলেন শিমুল, মারুফ, সাগর ও আখতার হোসেন (তাহের)।

বিষপানের পর তাৎক্ষণিকভাবে তাদের শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তারা শঙ্কামুক্ত রয়েছেন।

রোববার (২৫ মে) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে হাসপাতালটির পরিচালকের কক্ষে একটি বৈঠক চলাকালে এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সিইও (অবসর প্রাপ্ত) লে. কর্নেল কামাল আকবার ও জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট পরিচালকদের সঙ্গে এক বিশেষ মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন।

সভায় জুলাই যোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা, সামাজিক মর্যাদা ও ভবিষ্যৎ জীবনমান নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা হয়। দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে তাদের নানাবিধ সমস্যা, উদ্বেগ এবং সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা উন্মোচিত হয়।

এ আলোচনার মূল লক্ষ্য ছিল, জুলাই যোদ্ধাদের প্রতি কোনও প্রকার অবহেলা বা অবমূল্যায়ন যেন না হয়, তা নিশ্চিত করা। সভায় এই মহান মুক্তিকামীদের জীবনমান উন্নয়নে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবও গৃহীত হয়।

কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তেই জুলাই যোদ্ধাদের মধ্যে ৪ জন যোদ্ধা, ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম হতাশা, দুশ্চিন্তা ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে নিজেদের জীবনের প্রতি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়ে বিষপান করেন। কিছুদিন আগে বিদেশ চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরেছেন এর মধ্যে সেই আহত যোদ্ধাও আছেন।

তাৎক্ষণিকভাবে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এবং হাসপাতালের ব্যবস্থাপনায় দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে, আক্রান্ত যোদ্ধাদের সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের জরুরি বিভাগে স্থানান্তর করেন এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করেন।

পরবর্তীতে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সিইও (অবসর প্রাপ্ত) লে. কর্নেল কামাল আকবার নিজে উপস্থিত থেকে বাকি যোদ্ধাদের আশ্বস্ত করে বলেন, জুলাই যোদ্ধারা আমাদের অহংকার। তাদের মনোবল যেন ভেঙে না পড়ে, সে জন্য ফাউন্ডেশন প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। চিকিৎসা, পুনর্বাসন, ও সামাজিক স্বীকৃতি নিয়ে ফাউন্ডেশন সরকার ও সংশ্লিষ্ট সকল মহলের সাথে সক্রিয়ভাবে যোগাযোগ করছি। আমাদের প্রতিটি যোদ্ধা যেন সাহসিকতার সঙ্গে জীবনের সঙ্গে লড়াই করতে পারে, সে জন্য আমরা তাদের পাশে আছি ও থাকব।

বিষপানের ঘটনা নিশ্চিত করে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে আহত হয়ে ভর্তি থাকা চারজন আজ বিষপান করেছেন। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বর্তমানে তারা সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন।

আহতদের একজন বলেন, এই সরকারের কাছ থেকে কিছু পেতে হলে আন্দোলনে নামতেই হয়। শান্তিপূর্ণভাবে কিছু চাওয়া যায় না। আমাদের চিকিৎসার জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি।

জুলাই গণ-আন্দোলনে চোখ হারানো আহতরা বলছেন, দীর্ঘ নয় মাসেও তাদের উন্নত চিকিৎসা বা পুনর্বাসনের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বরং প্রতিশ্রুতি দিয়ে নানা টালবাহানা করা হচ্ছে।

এর আগে গতকাল শনিবার (২৪ মে) দুপুরে রাজধানীর শাহবাগে জুলাই ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) সঙ্গে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন ১০/১২ জন আহতকে আর্থিক সহায়তা এবং পুনর্বাসন বিষয়ে বাকবিতণ্ডায় হয়।  

এসময় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) উদ্দেশ্যে আহতরা বলেন, স্যার আমাদের হয় সহযোগিতা দেন, না হয় আমাদের বিষ কিনে দেন খেয়ে মরে যাই। তাহলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।  

আরকেআর/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।