ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর করণীয় বিষয়ে গোলটেবিল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০২৪
রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর করণীয় বিষয়ে গোলটেবিল রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর করণীয় বিষয়ে দৈনিক কালের কণ্ঠের গোলটেবিল | ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: রমজান মাসে ডায়াবেটিস রোগীর করণীয় বিষয়ে দৈনিক কালের কণ্ঠের গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার (৫ মার্চ) রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের কনফারেন্স রুমে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

গোলটেবিল বৈঠক আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশ এন্ড্রোকাইন সোসাইটি এবং রেডিয়ান্ট ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি।

বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি সভাপতি অধ্যাপক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, একজন ডায়াবেটিস রোগী রোজা রাখতে পারেন কি না? বাংলাদেশে এডাল্ট পপুলেশনের প্রতি সাতজনের একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্তের ৯৮ শতাংশই রোজা রাখতে চান। তারা যেন ভালোমতো রোজা রাখতে পারেন, এন্ড্রোকাইনলজিস্ট হিসেবে সেই দায়িত্ব আমাদের। কালের কণ্ঠের আজকের এই আয়োজন থেকে আমাদের ডায়াবেটিস রোগীরা উপকৃত হবেন আশা করি।

দৈনিক কালের কণ্ঠের সহকারী সম্পাদক আলী হাবিবের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে আলোচনা করেন বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক অধ্যাপক ফারুক পাঠান, বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম, দপ্তর সম্পাদক ডা. আফসার আহাম্মদ (মেরাজ), বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির  সভাপতি (নির্বাচিত) ডা. ফারিয়া আফসানা, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. মারুফা মোস্তারী, বৈজ্ঞানিক সম্পাদক ডা. এম সাইফুদ্দিন, সদস্য (নির্বাহী কমিটি) ডা. আহসানুল হক আমিন, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. মির্জা শরিফুজ্জামান, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহকারী সার্জন ডা. আফিয়া যায়নব তন্বী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট ডা. সৈয়দ আজমল মাহমুদ, বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির সদস্য (নির্বাহী কমিটি) ডা. আহমেদ ইফরাদ বিন রওনক।

অধ্যাপক ফারুক পাঠান বলেন, ডায়াবেটিস রোগীরা রোজা রাখতে চাইলে দুই থেকে তিন মাস একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন। রোগীর বর্তমান রোগের বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসক ঝুঁকি নির্ণয় করবেন। যারা উচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন তাদের আমরা রোজা রাখতে বারণ করি। তা স্বত্বেও রোগী রোজা রাখতে চাইলে আমাদের তাদের সহযোগিতা করতে হবে। তাকে বলতে হবে, আপনি রোজা রাখলে এই এই নিয়ম মেনে চলতে হবে। সেই কারণে রমজানে ডায়াবেটিস শিক্ষায় ফোকাস করা উচিত।

তিনি আরও বলে, দুই-তিন মাস আগে থেকে যদি নফল কিছু রোজা রাখার প্রাকটিস করতে পারি, সেটা আমাদের রমজান মাসে কাজে দেবে। ডায়াবেটিস শিক্ষা রোজার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। যারা এ শিক্ষা নিয়েছেন তাদের ঝুঁকি কম থাকে, ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণে থাকে।

অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, ডায়াবেটিসের রোগীরা ১৪/১৫ ঘণ্টা না খেয়ে থাকলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে যাবে, হাইপোগ্লাইসেমিয়া হবে, এটাই সব থেকে বড় ঝুঁকি। ডায়াবেটিস রোগীর রোজা রাখার ক্ষেত্রে সকল ঝুঁকি যদি একত্র করি, তাহলে হাইপোগ্লাইসেমিয়াই হয়তো ঝুঁকি বিবেচনায় ৮০/৮৫ শতাংশ দখল করে নেবে। হাইপোগ্লাইসেমিয়া কাদের হবে, যাদের এর আগে অন্য স্বাভাবিক সময়েও হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়েছিল। আবার যাদের রক্তের গ্লুকোজের কন্ট্রোল ভালো নয়।

তিনি আরও বলেন, যারা রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজের সমস্যা নিয়ে বার বার হাসপাতালে ভর্তি হোন, যাদের সম্প্রতি হার্ট এটাক হয়েছে, রিং বা বাইপাস সার্জারি করা হয়েছে, তাদের রোজা রাখার ঝুঁকি বেশি। যাদের মানসিক অবস্থা খুব বেশি সুস্থির নয়, তারা কম বা বেশি বয়সের হোক তারাও ঝুঁকিতে থাকবেন।  তারপরেও আমরা রোগীর ইচ্ছাকে সম্মান প্রদর্শন করি, রোগীর পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা করি। সকল ডায়াবেটিস রোগী রোজায় কম বেশি ঝুঁকিতে থাকবে। আমাদের কাজ হলো তাদের সহযোগিতা করা। এ ক্ষেত্রে সব থেকে ভালো হয় তিন মাস আগে থেকে চিকিৎসা শুরু করলে।

বক্তারা ডায়াবেটিস রোগীর প্রাক রমজান ঝুঁকি নিরূপণ ও শিক্ষা, রোজার সময় ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য সমন্বয়, রোজার সময় ব্যায়াম ডায়াবেটিস রোগীর, রোগীদের মুখে থাওয়ার ওষুধ এবং ইনসুলিন কীভাবে সমন্বয় করা যায়, রোজা রাখা অবস্থায় কী জটিলতা হতে পারে, রোজা রাখা অবস্থায় গ্লুকোজের পরিমাণ যেন কমে না যায়, রোজার সময় ডায়াবেটিস পরিমাপ কীভাবে কতবার করবে, লিভার, কিডনি ও অন্যান্য অসুস্থতাসহ ডায়বেটিস রোগীর রোজার সময় করণীয় কী এবং ডায়াবেটিস রোগীদের কোন অবস্থায় রোজা ভেঙে ফেলা উচিত—বিস্তারিত আলোচনা করেন। পাশাপাশি রোজা রাখার আগেই ডায়াবেটিস  রোগীদের এন্ড্রোকাইনলজিস্টের পরামর্শ নেওয়ার কথা বলেন বক্তারা।

তারা আরও বলেন, ডায়াবেটিস রোগীরা রোজা থাকা অবস্থায় অবশ্যই নিয়মিত রক্তের গ্লুকোজ মেপে দেখবেন। রোজা থাকা অবস্থায় কারও যদি শরীর খারাপ লাগে, বুক ধড়ফড় করে, ঘাম হয়, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা যদি ৩.৯ এর কম থাকে তাহলে তাকে রোজা ভেঙে ফেলতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০২৪
আরকেআর/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।