ঢাকা: মানুষের আয়েশি আর উন্নত যানবাহনে চলাচল দেখে প্রাণীরা বুঝি বেশ হতাশ। অনেকেই হয়তো ভাবে ইস্, তাদের জন্যও যদি থাকতো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত উড়োজাহাজ, উন্নত বাস-ট্রেন আর নৌপথে চলার বিশেষ ব্যবস্থা।
হয়তো মানুষের মতো উড়োজাহাজ বানাতে এখনও কোনো প্রাণীর পদক্ষেপ দেখা যায়নি, তবে বুদ্ধির দিক থেকে এরাও যে পিছিয়ে নেই- সেটা মানতেই হবে! মাঝে মাঝে এদের বিচিত্র সব কাণ্ডকারখানা স্রেফ তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো!
এ ধারাবাহিতকায় এবারের গল্প কাঠঠোকরা আর বেজির। কাঠঠোকরা বুঝি এবার কাঠমিস্ত্রিগিরির কাজ বাদ দিয়ে জনহিতকর কাজে নামলো! একই সঙ্গে উড়োজাহাজের ভূমিকাও পালন করছে সে। বাদামী এক বেজিকে দিব্যি পিঠে চড়িয়ে উড়তে দেখা গেল পূর্ব লন্ডনের হর্নচার্চ কান্ট্রি পার্কের উপর দিয়ে।
তবে এ কাজটি সে যে মোটেও আনন্দ নিয়ে করছে না, তা নিশ্চিত। হয়তো বেজির দেওয়া হুমকির মুখে পড়েই তাকে পিঠে নিয়ে উড়তে হয়েছে কাঠঠোকরার।
দৃশ্যটি এখন পর্যন্ত যাদের চোখেই পড়েছে, সবারই চক্ষু চড়কগাছ। তাদের মধ্যে একজন আলোকচিত্রী মার্টিন লে মেই। তিনি এসেক্স শহরের একজন প্রকল্প পরিচালক।
এসেক্সের রেইহ্যাম বিলের পাখি সংরক্ষণ কেন্দ্রের এ আলোকচিত্রী ঘটনাটি দেখে চমকিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তুলে ফেলেন কিছু ছবি। আর টুইটারে পোস্ট করতেই নিমেষে অনলাইনে ঝড়! সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার হাজার ছাড়িয়ে মিলিয়ন।
এবার একটু ঘটনার পেছনের গল্পটি দেখা যাক। ৫২ বছর বয়সী এ আলোকচিত্রী তার স্ত্রীকে বন্য কাঠঠোকরা দেখাতেই হর্নচার্চ পার্কে নিয়ে গিয়েছিলেন। তবে সেখানে গিয়ে এমন অদ্ভুত ঘটনা দেখবেন, তা সত্যিই অভাবনীয় ছিল বলে জানান তিনি।
প্রায় ২০ মিনিটের মতো তারা কাঠঠোকরা দেখার জন্য হাঁটছিলেন। অন্যান্য পাখি উঁকিঝুকি দিলেও মিলছিল না কাঠঠোকরার খোঁজ। হঠাৎ তারা শুনতে পেলেন পাখির যন্ত্রণাকাতর ধ্বনি। হুস করে জঙ্গলের ভেতর থেকে বের হলো এক সবুজরঙা কাঠঠোকরা।
মার্টিনের সামনে দিয়েই উড়ে গেল কাঠঠোকরাটি। গাছের ফাঁক দিয়ে কোনোরকমে দেখা গেল তাকে। মার্টিন ও তার স্ত্রী দেখলেন, তারস্বরে চিৎকার করে প্রায় লাফিয়ে লাফিয়েই উড়ছিল কাঠঠোকরা। তবে বোঝা গেল না তার অদ্ভুত এ আচরণের কারণ। যাই হোক, তার ক্যামেরার ক্লিক চরতেই থাকলো।
উড়তে উড়তে পাখিটি যখন তাদের সামনে এলো, তখনই মার্টিন থমকে গেলেন। এটা কী দেখছেন তিনি! একটি বেজি কাঠঠোকরার পিঠ জড়িয়ে ধরে আছে আর কাঠঠোকরা উড়ছে!
তাদের থেকে প্রায় ২০ মিটার দূরে গিয়ে নামলো কাঠঠোকরাটি। মার্টিন তার স্ত্রীকে বলেন, এবার হয়তো বেজিটি কাঠঠোকরাকে খেয়ে ফেলবে।
কিন্তু না! কাঠঠোকরাটি বেজিকে ঘাসের ওপর নামিয়ে প্রাণ নিয়ে পালালো। আর দেখা গেল না তাকে।
মার্টিন বলেন, তার তোলা ছবিগুলোর মধ্যে এমন অম্লমধুর ছবি আর নেই। অামার ধারণা, আমার স্ত্রীও অভিভূত!
নিমেষেই হাজার হাজার মানুষ এ ছবির ভক্ত বনে গেছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, কাঠঠোকরার পিঠে বেজির এ দৃশ্য প্রথম হলেও, প্রাণিজগতে এমন ঘটনা আরও রয়েছে।
গত বছর এপ্রিলে এন্দ্রি সাইওয়েদি ইংল্যান্ডের বোর্নমাউথে নিজ বাগানের পুকুরে এমনই একটি ছবি তোলেন। যেখানে একটি ব্যাঙ গোল্ডফিশের পিঠে চড়ে সাঁতার কাটছিল।
কি অদ্ভুত তাই না!
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫২ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০১৫