ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

কুকুর-বিড়ালের আবাসিক হোটেল ফারিঘর!

মিরাজ মাহবুব ইফতি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৪ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০২২
কুকুর-বিড়ালের আবাসিক হোটেল ফারিঘর! পোষা কুকুরকে আদর করছেন এক নারী। ছবি: রাজীন চৌধুরী

ঢাকা: বিড়ালের রাত কাটাতে ৫০০ টাকা আর কুকুরের রাত কাটাতে দিতে হবে ১৫০০ টাকা। হ্যাঁ ঠিকই পড়েছেন বা ঠিকই শুনেছেন।

দেশে এই প্রথম কুকুর ও বিড়ালের আবাসিক হোটেল ফারিঘর।

বাড়িতে যারা কুকুর বা বিড়াল পোষেন তাদের কথা মাথায় রেখে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় পোষা প্রাণীর জন্য আবাসিক হোটেল খুলেছেন নুজহাত নাবিলা, আয়ারল্যান্ড প্রবাসী খালিদ ফারহান এবং প-ফাউন্ডেশনের ফাউন্ডার রাকিবুল হক এমিল। কর্মজীবী মানুষ অফিসে কিংবা লম্বা সময়ের জন্য কোথাও বেড়াতে গেলে তাদের পোষা প্রাণী রেখে যেতে পারবেন এই ফারিঘরে।

মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মিরপুর-২ নম্বর (চিড়িয়াখানা রোড) ব্লক-এ, ৮০ নম্বর প্লটের তিনতলায় পোষা প্রাণীর আবাসিক হোটেল ফারিঘর উদ্বোধন করা হয়।  হোটেলটির সাজসজ্জা ও নকশা করেছেন দুই স্বত্বাধিকারী নুজহাত নাবিলা ও রাকিবুল হক এমিল। মঙ্গলবার (১ মার্চ) দুপুরে আর্কিটেক্ট, ফারিঘর স্বত্বাধিকারী নুজহাত নাবিল বাংলানিউজকে বলেন, ‘যখন আমি সিডনিতে ছিলাম, তখন পোষা প্রাণীর হোটেলের কাজে যুক্ত ছিলাম। দেশে এসে পোষা প্রাণীর জন্য ডেডিকেটেড একটি স্থান মিস করছিলাম। পোষা প্রাণীদের জন্য প-ফাউন্ডেশনে অনেক দিন আমি ভলেন্টিয়ার হিসেবে কাজ করেছি। সেখান থেকেই পরিচয় হওয়ার প-ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান রাকিবুল হক এমিল ভাইয়ের সঙ্গে। আমরা তিনজন অংশীদার মিলেই তৈরি করেছি পোষা প্রাণীর আবাসিক হোটেল ফারিঘর। ’তিনি বলেন, ‘বাসা-বাড়ির সহযোগীরা ও মা-বাবা পোষা প্রাণী দেখভালে অভ্যস্ত নয়। প্রাণীগুলোর প্রয়োজন পেশাদার পরিচর্যা। আমাদের এই উদ্যোগ প্রাণীপ্রেমীদের স্বস্তি দেবে। হোটেলের কেয়ার কিপার ২৪ ঘণ্টা কুকুর-বিড়ালের খেয়াল রাখছেন। প্রাণীগুলোর যে খাবারে অভ্যস্ত সে খাবার অভিভাবক বা আমরা নিশ্চিত করছি।  হোটেলগুলোতে যেমনি মানুষের বিনোদনের কথা মাথায় রাখা হয়, ঠিক তেমনিভাবে ফারিঘরে পোষা প্রাণীদের বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ’কুকুর-বিড়ালের বিনোদন ব্যবস্থা: 

ফারিঘরে কুকুর ও বিড়ালের জন্য রাখা হয়েছে গান শোনা থেকে শুরু করে টিভি দেখার ব্যবস্থা। যদি কোন পশুর অভিভাবক কোন ভিডিও দিয়ে যান সেই ভিডিও প্রাণীটিকে দেখানো হয়।

স্বাস্থ্যসেবা:

পোষা প্রাণীগুলোর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে রয়েছে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসাসেবা। হোটেলটির ভবনের দোতলায় রয়েছে একটি পশু হাসপাতাল। সেখানে দেওয়া হয় পোষা প্রাণীর চিকিৎসা।  হোটেলের ধারণক্ষমতা:

ফারিঘরে ১৪টি বিড়াল রাখার কেবিন রয়েছে। কিন্তু একটি পরিবার বা একই মালিকের বিড়াল হলে কেবিন ভাগাভাগি করে ২৫টি বিড়াল রাখা যাবে। এছাড়াও এখানে তিনটি কুকুর রাখার কেবিন রয়েছে।

কেবিন ও ঘরের ধরন: 

প্রতিটি কুকুরের ঘরের দৈর্ঘ্য ৯ ফুট ও প্রস্থ ৫ ফুট। বিড়ালের কেবিনের দৈর্ঘ্য ৫ ফুট, প্রস্থ ৪ ফুট। হোটেলটিতে আলাদা আলাদা বিছানা-বালিশ দিয়ে সাজানো হয়েছে কুকুর বিড়ালের জন্য। আদর-আপ্যায়নের সঙ্গে রয়েছে প্রতিটি প্রাণীর আলাদা লিটার (পটি) ব্যবস্থা। সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা: 

অভিভাবকরা চাইলে ২৪ ঘণ্টাই দেখতে পারবে তাদের পোষা প্রাণীটিকে। সেজন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে সিসি ক্যামেরার।

প্রাণীর শরীরে পোকা থাকলে: 

পোকা বা (পলি-ফি) নিয়ে আসা বিড়ালকে দেওয়া হয় টিকা। যাতে করে অন্য প্রাণীর মধ্যে পোকার ছড়িয়ে পড়তে না পারে। এজন্য পশু মালিকদের গুনতে হয় ৩০০ টাকা। ফারিঘরে পোষা প্রাণী রাখতে হলে: 

অভিভাবকদের দিতে হবে ভোটার আইডিকার্ডের ফটোকপি বা নাম্বার।
কুকুর ও বিড়ালের ভ্যাকসিনেশনের রেকর্ড জমা দিতে হবে।
প্রাণীর অন্য কোন সমস্যা থাকলে জানাতে হবে কর্মকর্তাদের।
পোষা প্রাণীর ব্যবহার কেমন তাও জানাতে হবে কর্মকর্তাদের।

ফারিঘরে কুকুর-বিড়াল রাত কাটানোর প্যাকেজ: 

বিড়ালের জন্য ৫ দিন ৪৭০ টাকা। ১০ দিন ৪৫০ টাকা ও ২০ দিন ৪০০ টাকা গুনতে হবে মালিককে। বিড়ালের এক রাতে কাটাতে দিতে হবে ৫০০ টাকা।  কুকুরের ৫ দিনের জন্য দিতে হবে ১৩শ টাকা করে মোট ৬ হাজার ৫০০ টাকা। ১০ দিনের জন্য ১২শ টাকা করে মোট ১২ হাজার টাকা। একরাত কাটানোর জন্য দিতে হবে ১৫০০ টাকা। কুকুর-বিড়ালের প্রতিদিনের খাবার খরচ বহন করবে প্রাণীটির অভিভাবকরা। প-ফাউন্ডেশনের ফাউন্ডার ও চেয়ারম্যান রাকিবুল হক এমিল বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা তিন অংশীদার, প্রত্যেকেই প্রাণীপ্রেমী। এই জায়গা থেকেই আমাদের চিন্তা পোষা প্রাণীদের জন্য আবাসিক হোটেল তৈরি করার। ২০ লাখ টাকা মূলধন নিয়ে আমরা এই ব্যবসায়ী নেমেছি। আমরা প্রত্যেকেই প্রাণী কল্যাণের সঙ্গে জড়িত আগে থেকেই, চিন্তা ছিল এমন একটা কিছু করার। ’

তিনি বলেন, ‘প্রাণীদের প্রতি একটি দায়িত্বের জায়গা থেকে হোটেলটি তৈরি করা। ব্যবসাটি আমার পেশা নয়, এটা আমার দায়িত্ব। বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর্কিটেকচারে পড়ালেখা শেষ করেছি এটাই আমার পেশা। ’ 

এক প্রশ্নের জবাবে এমিল বলেন, ‘গুলশান-বারিধারায় আরেকটি শাখা খোলার ইচ্ছা আছে। অনেক বিদেশি ও অ্যাম্বাসেডর পশু পালন করেন। তাদের কথা চিন্তা করে ভবিষ্যতে বারিধারা ও গুলশান এলাকায় পোষা প্রাণীর জন্য হোটেল খুলবো আমরা। ’ 
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে প-ফাউন্ডেশনের ফাউন্ডার এমিল বলেন, ‘ঢাকার আশপাশে যেতে ৩০-৪০ মিনিট যাতায়াতের সময় লাগে এমন দূরত্বে একটি রিসোর্ট করতে চাই। ঢাকার আশপাশে এনিমেল রিসোর্ট করার ইচ্ছে আছে। সেখানে যেন প্রাণীগুলো নির্ভয়, নিরিবিলি খেলাধুলা ও সময় কাটাতে পারে। রিসোর্টটিতে রাখতে চাই পশু-পাখির জন্য বিভিন্ন ধরনের রাইড ও পুল। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০২২
এমএমআই/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।