ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

পলিথিনের ব্যাগ-বস্তায় সয়লাব খুলনা

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০২১
পলিথিনের ব্যাগ-বস্তায় সয়লাব খুলনা পলিথিনের ব্যাগ। ছবি: বাংলানিউজ

খুলনা: খুলনায় প্লাস্টিকের বস্তা ও পলিথিনের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। পরিবেশ অধিদপ্তর বা জেলা প্রশাসনের কোন অভিযান না থাকায় নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের বস্তা ও পলিথিনের ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পলিথিন ব্যাগে সয়লাব হয়ে গেছে বাজার। প্রকাশ্যে বিক্রি ও বাজারজাত করা হচ্ছে এসব নিষিদ্ধ পলিথিন।

ব্যবহার-নিষিদ্ধ পলিথিনের এই ভয়াল থাবায় প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপন্ন হয়ে উঠেছে। পলিব্যাগের ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে বলে দাবি পরিবেশবাদিদের।

মাছ বাজার-কাঁচা বাজার থেকে শুরু করে প্রতিটি দোকানে ও শপিংমলে পণ্য সামগ্রী পলিথিনে ভরে গ্রাহকদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। আইন-নির্দেশ উপেক্ষা করে মিলমালিকেরা আগের মতো প্লাস্টিকের বস্তায় চাল বিপণন করে চলেছেন। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন পাটের বস্তার দাম বেশি ও সহজে পাওয়া যায় না অপরদিকে প্লাস্টিকের বস্তার দাম তুলনামূলক কিছুটা কম।

খুলনার সর্ববৃহত বাজার বড় বাজারের চালের আড়তে গিয়ে দেখা গেছে, কাজী সোবহান, এরফান,নজরুলসহ আরও অনেক কোম্পানি প্লাস্টিকের বস্তায় চাল বাজারজাত করছে। ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার, চিনি, মরিচ, হলুদ, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, ডাল, ধনিয়া, আলু, আটা, ময়দা, তুষ-খুদ-কুড়া এই  ১৭টি পণ্যের সংরক্ষণ ও পরিবহনে পাটজাত মোড়কের ব্যবহারের বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে প্লাস্টিকের বস্তার ব্যবহার চলছে দেদারছে।

নগরীতে ব্যাপক হারে ব্যবহার হচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিন। আর ব্যবহৃত এসব পলিথিন যত্রতত্র ফেলে দেওয়া হচ্ছে। ফলে জনস্বাস্থ্য পড়েছে হুমকির মুখে। পরিত্যক্ত পলিথিন বিনষ্ট করছে মাটির উর্বরতা। মাটি ঘুঁড়লেই উঠে আসছে শত শত পলিথিন ব্যাগ।

আড়ত মালিকরা বলছেন, তাদের কিছু করার নেই।

জিয়াউল হক নামের এক আড়তদার বলেন, মিল মলিকরা পাস্টিকের বস্তায় চাল পাঠায়। তাই আমরাও প্লাস্টিকের ব্যাগেই বিক্রি করি। আমাদের তো কিছু করার নেই।

তিনি বলেন, আমরা চাই পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পাস্টিকের বস্তায় নয় পাটের বস্তায় চাল বাজারজাত করা হোক।

খাসা-অর্গানিক পণ্যের মালিক মো. হেলাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, যেকোনো কিছু কিনলেই এখন ফুটপাতের দোকান থেকে শুরু করে বড় দোকানগুলোও পলিথিন ব্যাগ দিচ্ছে। এগুলো ব্যবহারে পরিবেশ বিপর্যয়ের কথা কেউ চিন্তা করছে না। খুলনায় বৃষ্টির সময় জলাবদ্ধতার জন্য এই পলিথিন ও প্লাস্টিকের বস্তা দায়ী। তাই পলিথিন ও প্লাস্টিকের বস্তার বিকল্প পাট পণ্যের ব্যবহারের দাবি জানাচ্ছি।

জানা যায়, পলিথিনের ভয়ানক ক্ষতির দিক চিন্তা করেই ১ জানুয়ারি ২০০২ থেকে ঢাকা শহরে এবং ১ মার্চ ২০০২ সাল থেকে সারাদেশে পলিথিনের উৎপাদন ও বাজারজাত সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। সে সময় বিকল্প হিসেবে পাটের তৈরি সামগ্রীর দিকে মানুষ ঝুঁকে পড়তে শুরু করেছিল। কাগজের তৈরি ঠোঙার ব্যবহারও বেড়ে গিয়েছিল। পরে আবারও পলিথিনের ব্যবহার বাড়তে থাকে। ফলে ২০১০ সালে সরকার দ্বিতীয়বারের মতো বাজারে পলিথিন বন্ধে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। সে সময় ১৭টি পণ্যের মোড়ক হিসেবে প্লাস্টিক বা পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় ২০১৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনি সংরক্ষণ এবং পরিবহনে বাধ্যতামূলকভাবে পাটের বস্তা ব্যবহারের নির্দেশ দিয়ে আদেশ জারি করে। এরপর ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে দুই দফায় আদেশ দিয়ে আরও ১১টিসহ মোট ১৭টি পণ্যের মোড়ক হিসেবে পাটের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) খুলনা জেলা নির্বাহী সদস্য এসএম ইকবাল হোসেন বিপ্লব বাংলানিউজকে বলেন, প্লাস্টিকের বস্তা ও পলিথিনের ব্যবহার খুলনায় দিন দিন বাড়ছে। অবৈধ পলিথিনের কারখানাও গড়ে উঠেছে খুলনায়। পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব বিষয়ে কোন খেয়াল নেই। নেই কোন অভিযান। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিনের ব্যবহার কমিয়ে বিকল্প হিসেবে পাটের তৈরি ‘সোনালী ব্যাগ’ ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারপরও পলিথিনের ব্যবহার কমছে না। রাইস মিল, চিনি কল, সার কারখানা, ডালের মিল প্রভৃতিতে পাটের বস্তার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে যথাসাধ্য জোরালো উদ্যোগ দেওয়া দরকার। বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকলগুলো এখন বস্তা উৎপাদনে কাজ করছে। এতে পাটকলগুলোর লোকসান কমে আসবে ও বাঁচবে কৃষক।

তিনি আরও বলেন, আইন পাস হওয়ার পর কিছুদিন পাটের (চটের) ও কাগজের ব্যাগের ব্যবহার লক্ষ্য করা গেলেও প্রচার-প্রচারণার অভাব এবং মানুষের অসচেতনতার অভাবে আবার পলিথিনের ব্যবহার ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযান চালিয়ে কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড, ব্যাংক ঋণ সুবিধা বন্ধ, লাইসেন্স বাতিল করলে প্লাস্টিকের বস্তা ও পলিথিনের ব্যবহার অনেকটা কমে আসবে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক সাইফুর রহমান খান বাংলানিউজকে বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরে দুই মাস ধরে কোন ম্যাজিস্ট্রেট নেই, এর কারণে অভিযান চালানো যাচ্ছে না। ম্যাজিস্ট্রেটের জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি। একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে এখানে দেওয়া হয়েছিল কিন্তু তিনি অন্য জায়গায় বদলি নিয়ে গেছেন। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাদের ম্যাজিস্ট্রেট আছে তারা অভিযান চালাতে পারবে। ম্যাজিস্ট্রেট আসলে আমরা আবার অভিযান পরিচালন করবো।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০২১
এমআরএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।