ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

পরিবেশের তোয়াক্কা না করেই চলছে মৌলভীবাজারের শিল্পনগরী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৯
পরিবেশের তোয়াক্কা না করেই চলছে মৌলভীবাজারের শিল্পনগরী

মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) শিল্প নগরীতে পরিবেশের তোয়াক্কা না করেই চলছে বেশ কিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠান। মোট শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রায় অর্ধেকেরও বেশি প্রতিষ্ঠানের নেই পরিবেশ বিষয়ক ছাড়পত্র। যেসব প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র রয়েছে, তারা পরিবেশ  আইন ও বিধিমালা না মেনেই কাজ করে যাচ্ছে।

বিসিক ও পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার বিসিক শিল্পনগরীতে অনুমোদিত শিল্প ইউনিট রয়েছে ৬৪টি ও উৎপাদনরত রয়েছে ২৮টি। উৎপাদনরত শিল্প ইউনিটের মধ্যে মাত্র ১৪টির পরিবেশগত ছাড়পত্র রয়েছে।

তার মধ্যে ৬টি প্রতিষ্ঠান ছাড়পত্র নেওয়ার পর আর কোনোদিন নবায়ন করেনি। ছাড়পত্র আছে কিন্তু উৎপাদন বন্ধ এমন প্রতিষ্ঠান আছে আরো ৭টি।

পরিবেশের ছাড়পত্র আছে এমন প্রতিষ্ঠান কোনো পরিবেশ-আইন মানছেনা। শিল্পনগরীর পুরো এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে কলকারখানার বর্জ্য-আবর্জনা। যেখানে-সেখানে ফেলা হচ্ছে দূষিত পানি। যারা কারখানায় কেমিক্যাল ব্যবহার করছেন, তাদের পরিবেশগত ছাড়পত্রে এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) করা শর্ত দেওয়া থাকলেও তা মানছেন কেউ।

কেমিক্যাল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মধ্যে গ্রীনট্রাস্ট লেটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, বিসমিল্লাহ রাবার এন্ড লেটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, মেসার্স শেখ সন্স অ্যান্ড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ ও এপেক্স ব্যাটারি লিমিটেড এর এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) করা কথা থাকলেও তা মানছেন না প্রতিষ্ঠান মালিকেরা। তার বিপরীতে বর্জ যেখানে সেখানে ফেলে দূষিত করছেন আশপাশের এলাকা।

গ্রীন ট্রাস্ট লেটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানের মূল ফটকের সামনের রাস্তায় বিষাক্ত কেমিক্যালযুক্তত রাবার রোদে শুকাতে দেওয়া হয়েছে। পাশে ফেলে রাখা আছে এই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন আবর্জনা। কারখানার ভেতরে কোনো ধরনের সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই কাজ করছেন শ্রমিকরা। এছাড়া ইটিপি না করে কেমিক্যাল মেশানো পানি পাশের ফসলি জমিতে ফেলে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।

বিসিক শিল্পনগরীর পার্শ্ববর্তী লামাগোমরা এলাকার কৃষক সিতার মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, বিসিকের এসিড ও কেমিক্যাল মেশানো পানি আমাদের ফসলি জমিতে পড়ে জমি নষ্ট হয়ে গেছে। সে মাটিতে কোনো ফসল হচ্ছেনা। জমিতে নামলে বিষাক্ত পানি পায়ে লেগে পায়ে পঁচন লাগে, এলার্জি হয়। আমরা বারবার বিসিককে অভিযোগ করার পরও কোনো সমাধান পাইনি।

সম্প্রতি এসব প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়ে এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) করা নির্দেশনা দিয়েছে পরিবেশে অধিদপ্তর। তার মধ্যে বিসমিল্লাহ রাবার অ্যান্ড লেটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ-কে ইটিপি না করলে প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

এব্যাপারে বিসমিল্লাহ রাবার এন্ড লেটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের অংশীদারি ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে আমাকে নোটিশ করা হয়েছে। আমাদের স্বল্প পুঁজির ব্যবসা। একটা ইটিপির ব্যয় অনেক টাকা। ইটিপি করতে যে সময় লাগবে সে সময় আমাদের দেওয়া উচিৎ। এতোদিন কেন করেননি? এমন প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি তিনি।

এই শিল্পনগরীর সর্ববৃহৎ খাবার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এ-ওয়ান ব্রেড অ্যান্ড বিস্কুট ফ্যাক্টরি পরিদর্শন করে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির সামনের অংশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ময়লা আবর্জনা। প্রতিষ্ঠানটির ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে পাশের একটি খালি ইউনিটে। এসব আবর্জনা থেকে দুর্গন্ধ আশপাশে  ছড়িয়ে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতিকর হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায় প্রতিষ্ঠানটির পরিবেশগত ছাড়পত্র থাকলেও তা নবায়ন করা নেই। ছাড়পত্রের মধ্যে যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছে, তা মানছেনা প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানের মালিক নাইম সারফারাজের আরেকটি ময়দার মিল রয়েছে শ্রীমঙ্গলে। সেটিরও কোনো পরিবশেগত ছাড়পত্র নেই বলে জানা গেছে। তবে প্রতিষ্ঠানের মালিক নাইম সারফারাজ তার সব কাগজপত্র ঠিক আছে বলে বাংলানিউজের কাছে দাবি করেন।

বিসিক মৌলভীবাজারের শিল্প নগরী কর্মকর্তা শাহনেয়াজ শাওন বাংলানিউজকে বলেন, আমি এখানে জয়েন করা পরপরই যে প্রতিষ্ঠানগুলো অনিয়ম করছে, তাদের নোটিশ করে সতর্ক করেছি। পরিবেশগত ছাড়পত্র সংগ্রহ ও নিয়ম অমান্য করার বিষয়টি নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা এর ব্যবস্থা নেবে। তবুও আমরা প্রতিষ্ঠানগুলোকে জানিয়েছি।

এব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ে সহকারী পরিচালক বদরুণ হুদা বাংলানিউজকে বলেন, বিসিক শিল্পনগরীতে কেমিক্যাল ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ইস্টার্ন এলায়েন্স নামক একটি প্রতিষ্ঠান ইটিপি ব্যবহার করছে। বাকি আরো ৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইটিপি করার জন্য নোটিশ করা হয়েছে তারা কার্যকর উদ্যোগ না নিলে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এছাড়া বিসিকে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানকে পরিবেশের ছাড় না থাকা ও পরিবেশ দূষণ করার জন্য আমরা নোটিশ করেছি। সে অনুযায়ী কাজ না হলে আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।