ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

পুকুরে মাছ নয়, কাঠ চাষ!

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, এনভায়রনমেন্ট স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৬
পুকুরে মাছ নয়, কাঠ চাষ! ছবি:বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): শেষ হয়ে এসেছে পুকুরে মাছচাষের দিন, এবার কাঠচাষের পালা! ধারণাটি একদম অভিনব হলেও অর্থ আয়ের দিক থেকে মাছ অপেক্ষা কোনো অংশেই কম নয় এই মূল্যবান কাঠ। প্রয়োজন শুধু সাহস আর পুকুরে কাঠচাষের ইচ্ছা!

এমন ধারণা থেকেই পুকুরে কাঠচাষে নেমেছেন স্থানীয়রা।

সৃষ্টি করেছেন এমন একটি বিরল ঘটনার প্রত্যক্ষ প্রমাণ! যা কখনও এর আগে শোনা যায়নি।

সম্প্রতি লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের চোরাই কাঠ পার্শ্ববর্তী গ্রামের পুকুর থেকে উদ্ধার করেছে বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ।

কমলগঞ্জ এলাকার করাতকলগুলোতে নজরদারির ফলে গাছচোররা তাদের বাড়িতে বসিয়েছে অস্থায়ী করাতকল। লাউয়াছড়ার বন থেকে কাঠ কেটে চিরে সেগুলো বনবিভাগের কর্মীসহ সাধারণ মানুষের চোখ ফাঁকি দিয়ে সংরক্ষণ করে চলেছে পুকুরের পানিতে।

বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ মৌলভীবাজার রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) তবিবুর রহমানের নেতৃত্বে রেঞ্জ ও বিট কর্মকর্তারা কমলগঞ্জ উপজেলার ৫নং সদর ইউনিয়নের সনর মিয়ার বাড়ির পুকুর থেকে ৩৫ ঘনফুট ইউক্যালিপটাস অবৈধ কাঠ উদ্ধার করেন।

৪৬ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের (বিজিবি) সদস্যরাও এই অবৈধ কাঠ উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন। পরে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বন মামলা দায়ের করা হয়।

এর দু’দিন আগে মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) একই এলাকার রূপ মিয়ার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ২১ ঘনফুট ইউকিলিপটাস কাঠ উদ্ধার করা হয়। তখন অস্থায়ীভাবে স্থাপন করা করাতকলের সরঞ্জামগুলো বন বিভাগের নজরে আসে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যে বাড়ি থেকে কাঠগুলো উদ্ধার করা হয় এটি ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ইক্যোসিস্টেমস অ্যান্ড লাইভলিহুডস (ক্রেল) প্রকল্পের রক্ষিত এলাকার একটি প্রদর্শনী সবজি চাষের বাড়ি। ক্রেলের প্রজেক্টের সুবিধাভোগী সদস্য হয়েও তারা লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের বনায়ন ধ্বংসের সঙ্গে সরাসরি জড়িত।

এসিএফ তবিবুর রহমান এ প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কড়া নজরদারির ফলে বনের ভেতর থেকে বিছিন্নভাবে কাটা ইউক্যালিপটাস কাঠগুলো এখন আর তারা স্থানীয় করাতকলগুলোতে নিয়ে যেতে পারছেন না। তাই নিজেরাই বাড়িতে অস্থায়ী করাতকল বসিয়ে বাড়ির পুকুরে মাছচাষের বদলে অভিনব পদ্ধতিতে কাঠগুলো পুকুরে লুকিয়ে রাখছেন।

তিনি আরও বলেন, আমাদের সোর্সের মাধ্যমে আমরা এই বিশেষ পুকুরটির সন্ধান পাই। রূপ মিয়ার এল প্যার্টানের বাড়ির বামপাশের রুমের পেছনেই রয়েছে হাতে টানা করাতকল। ভাড়া করা চারজন করাতি দিয়ে তিনি কাঠগুলো কাটতেন। পুকুর থেকে ইউক্যালিপটাস কাঠ উদ্ধারের পর তাদের বাড়ির খাটের নিচ ও ঘরের ছাদ থেকে কিছু সেগুন ও চাপালিশ কাঠও জব্দ করা হয়েছে।    

স্থানীয় করাতকলগুলোতে প্রায়ই আমরা বিশেষ অভিযান অব্যাহত রেখেছি, যেনো অবৈধ কাঠগুলো কোনোভাবে ওখানে প্রবেশ না করতে পারে, বলেন এ বন সংরক্ষণ কর্মকর্তা।    

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩০ ঘন্টা; এপ্রিল ২৩, ২০১৬
বিবিবি/এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।