ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

লোকালয়ে সুন্দরবনের বাঘ, আতঙ্কে গ্রামবাসী 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২৩
লোকালয়ে সুন্দরবনের বাঘ, আতঙ্কে গ্রামবাসী 

খুলনা: খুলনার কয়রা উপজেলার আড্ডা ও বানিয়াখালি গ্রামে লোকালয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে সুন্দরবনের বাঘ। লোকালয়ে বাঘের উপস্থিতি টের পাওয়ায় আতঙ্কে রয়েছেন দুই গ্রামের হাজারো মানুষ।


 
সুন্দরবস সংলগ্ন হড্ডা ও বানিয়াখালি গ্রামের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান,  বাড়ির সামনের বেড়িবাঁধে বাঘের পায়ের একাধিক ছাপ দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তারা। স্থানীয় বাসিন্দাদের সতর্কতার সঙ্গে চলাচল করার পরামর্শ দিয়েছে বন বিভাগ।

বন বিভাগ বলছে, বৃহস্পতিবার( ১৪ডিসেম্বর)  উপজেলার কয়রা নদী পার হয়ে দুটি বাঘ হড্ডা ও বানিয়াখালী গ্রামে ঢুকে পড়ে। বৃহস্পতিবার সকালে হড্ডা গ্রামে অবস্থিত সুন্দরবনের বানিয়াখালী ফরেস্ট স্টেশন থেকে দু'শ মিটার দূরে বেড়ীবাঁধের রাস্তার উপর প্রথমে একটি ছোট বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পান গ্রামবাসী। পরে তার একটু দূরে হড্ডা গ্রামের ফুলতলা খালের অপরপারে লোকালয়ে অপেক্ষাকৃত বড় আরও একটি বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পান গ্রামের লোকজন। এরপর থেকে বনসংলগ্ন আশপাশের এলাকায় বাঘের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

খবর পেয়ে বন বিভাগ, ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম (ভিটিআরটি), কমিউনিটি প্যাট্রোলিং গ্রুপ (সিপিজি) সদস্যসহ গ্রামবাসী লাঠিসোঁটা নিয়ে ওই এলাকায় তল্লাশি করেছেন। বাঘটি লোকালয়ে এলেও পরে আবার সুন্দরবনে ফিরে গেছে বলে পায়ের ছাপ দেখে তারা ধারণা করছেন।

বন সংলগ্ন মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের হড্ডা গ্রামের ইউপি সদস্য মহোশীস কুমার সরদার জানান, বর্তমানে শুষ্ক মৌসুমে ভাটার সময় নদীতে পানি একেবারেই কমে যায়।  বৃহস্পতিবার  সুন্দরবন থেকে প্রায় শুকিয়ে যাওয়া কয়রা নদী পার হয়ে দুটি বাঘ হড্ডা গ্রামে ঢুকে পড়ে। বাঘ দুটি নদীর তীরসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়িয়েছে। সকালে গ্রামবাসী ওইসব স্থানে বাঘের তাজা পায়ের ছাপ দেখতে পেয়ে বন বিভাগকে খবর দেয়। তবে নদীর পাড়ে বাঘের সর্বশেষ পায়ের ছাপ দেখে ধারণা করা হচ্ছে, বাঘ দুটি বনে ফিরে গেছে।

সুন্দরবনের বানিয়াখালী ফরেস্ট স্টেশনের কর্মকর্তা মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, লোকালয়ে বাঘ আসার খবর দেয় স্থানীয় বাসিন্দারা। ঘটনাস্থলে গিয়ে দুটি বাঘের অসংখ্য পায়ের তাজা ছাপ দেখতে পেয়েছি। আশেপাশে তল্লাশিও করা হয়েছে। বেশ কিছু জায়গায় বাঘ দুটি বিচরণ করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, বাঘ দুটি সুন্দরবনে ফিরে গেছে। তবে আবার বাঘ যাতে লোকালয়ে ফিরে কোনো মানুষের ক্ষতি না করতে পারে, সে জন্য এলাকাবাসীকে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বনরক্ষীদের লোকালয় সংলগ্ন নদীতে টহলে জোরদার করা হয়েছে। এর দুই দিন আগে কাশিয়াবাদ স্টেশনের অধিনস্থ শত্যপির খালে একটি বাঘ দেখতে পায় ৪ নং কয়রার জেলেরা।
 
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার বলেন, শীত মৌসুমে সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রা উপজেলার নদীতে পানি কমে গেছে। পানি কমে যাওয়ার কারণে বনের বাঘ নদী পার হয়ে লোকালয়ে চলে আসে। বনকর্মীরা খবর পেয়ে ওই এলাকায় গিয়ে দুটি বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পেয়েছে। পায়ের ছাপ দেখে মনে হয়েছে আজ ভোরের দিকে বাঘ দুটি লোকালয়ে এসে আবার বনে ফিরে গেছে।

বাঘ লোকালয়ে চলে আসার পিছনে বাঘ ও বন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশ কিছু কারণে সুন্দরবনের বাঘ-ভেলো কলায় আসে। কারণগুলো হলো- বনে বাঘের প্রয়োজনীয় খাদ্যের অভাব, বাঘের খাদ্যাভাব হওয়ায় মানুষ খাওয়ার চিন্তা থেকে লোকালয়ে প্রবেশ করছে, সুন্দরবন সংলগ্ন নদী ও খাল ভরাট হওয়ায় বাঘ সহজেই লোকালয়ে প্রবেশ করতে পারছে, কুয়াশার কারণে শীতে বিড়াল জাতীয় প্রাণীরা দিক হারিয়ে লোকালয়ে আসে, বয়োবৃদ্ধ বাঘ শিকারের সক্ষমতা হারিয়ে লোকালয়ে আসে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২৩ 
এমআরএম/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।