ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

আবারও ডিম দিয়েছে খানজাহান আলী দীঘির কুমির, বাচ্চা ফোটা নিয়ে শঙ্কা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট     | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০২৩
আবারও ডিম দিয়েছে খানজাহান আলী দীঘির কুমির, বাচ্চা ফোটা নিয়ে শঙ্কা

বাগেরহাট: বাগেরহাটের আধ্যাত্মিক সাধক হযরত খানজাহান আলী (রহ.) -এর মাজার সংলগ্ন দীঘিতে থাকা মিঠাপানির মা কুমির ডিম দিয়েছে। এবার মা কুমিরটি প্রায় ৫০-৬০টি ডিম দিয়েছে।

তবে এই ডিম ফুটে বাচ্চা হওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। কারণ এর আগে অনেকবার এই মা কুমির ডিম পাড়লেও, কোনো বাচ্চা ফোটেনি। যার কারণে কুমিরের ডিম দেওয়া নিয়ে ফকিরদের মধ্যে তেমন কোনো আগ্রহ নেই।  

কুমির বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরুষ কুমিরটির বয়স বেশি হওয়ায় প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে।  

খানজাহান আলী (রহ.) -এর মাজারের প্রধান খাদেম ফকির শের আলী বলেন, ধারণা করছি প্রায় মাস খানেক আগে কুমিরটি দীঘির পূর্ব পাড়ের বিনা ফকিরের বাড়ির পাশে ডিম পেড়েছে। কয়েকদিন আগে আমাদের চোখে পড়েছে। এই নিয়ে অনেকবার এই মা কুমিরটি দীঘিতে ডিম পেড়েছে। কিন্তু কখনও বাচ্চা হয়নি। এভাবে বাচ্চা না হলে কুমিরের বংশ বাড়বে না। মাজারের দীঘি থেকে মিঠাপানির কুমির হারিয়ে যাবে। ফলে মাজারের ঐতিহ্য ধরে রাখা সম্ভব হবে না।

বার বার ডিম দিলেও বাচ্চা না ফোটার কারণ অনুসন্ধানে কাজ করেছে বাগেরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের কর্মকর্তারা। তাদের দাবি বয়সের কারণে প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলায় মাজারের কুমিরের ডিমে বাচ্চা ফুটছে না।  

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির বলেন, বয়সের কারণে প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলায় দীঘিতে থাকা মিঠাপানির কুমির দু’টি বার বার ডিম দিলেও কোনো বাচ্চা হচ্ছে না। এছাড়া এখানে থাকা কুমিরদের খাবারের বিষয়ে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। মাজারে আসা ভক্ত ও দর্শনার্থীরা খাবার হিসেবে যে যার মতো চর্বিযুক্ত মাংস দেন। ফলে কুমির দুইটির পেটে অতিরিক্ত চর্বি জমে গেছে। বাচ্চা না ফোটার এটাও অনেক বড় কারণ। তবে নতুন করে অল্প বয়সী দুইটি নারী-পুরুষ কুমির দীঘিতে ছাড়তে পারলে বাচ্চা ফোটানো সম্ভব বলে আশা রাখি।  

সুলতানী শাসন আমলে খ্রিস্টীয় ১৪ শতকের প্রথম দিকে হযরত খানজাহান আলী (রহ.) বাগেরহাটে ‘খলিফাতাবাদ’ নগর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। সে সময় তিনি ৩৬০টি দীঘি খনন করেন। এর মধ্যে সব থেকে বড় ‘ঠাকুর দীঘি’, স্থানীয়দের ধারণা এই দীঘির আয়তন ৩৬০ একর। যে দীঘির পাড়ে তার সমাধি রয়েছে। এই দীঘিতে তিনি দুইটি মিঠাপানির প্রজাতির কুমির এনেছিলেন। যাদের নামছিল ‘কালাপাহাড়’ ও ‘ধলাপাহাড়’। খানজাহান (রহ.) -এর মৃত্যুর পর মাজারের খাদেম ও ভক্তরা ওই কুমির দুইটিকে নিয়মিত খাবার দিতেন। দীর্ঘদিন পর্যন্ত ওই কুমির যুগলের বংশ ধরেরা এখানে বসবাস করছিল। কিন্তু বিভিন্ন সময় এই দীঘির কুমির মারা যাওয়ার পরে মাত্র দুইটি কুমির ছিল। এরই মধ্যে মাজারের দীঘিতে মিঠাপানির কুমিরের বংশ বিস্তারের জন্য ২০০৫ সালে ভারতের মাদ্রাজ থেকে ছয়টি কুমির এনে এখানে ছাড়া হয়। মাদ্রাজি কুমির হিংস্র প্রকৃতির ছিল। তাদের মারামারির কারণে হযরত খানজাহান (রহ.) -এর আমলের একটি কুমির ‘কালাপাহাড়’ অসুস্থ হয়ে পড়ে। ২০০৬ সালে কুমিরটি মারা যায়। সর্বশেষ ২০১৫ সালে অবশিষ্ট একটি কুমির ধলা পাহাড়ের মৃত্যু হয়। এর মধ্য দিয়ে খানজাহান আলী (রহ.) -এর আমলের কুমির যুগের সমাপ্তি ঘটে। এই সময়ে মাদ্রাজ থেকে আনা ৬টি কুমিরের ৪টি কুমির মারা যায়। বর্তমানে মাজার দীঘিতে দুইটি কুমির রয়েছে।

** আবারও ডিম দিয়েছে পিলপিল, বাচ্চা ফোটা নিয়ে শঙ্কা

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০২৩
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।