ঢাকা, শনিবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

বিলীনের পথে প্রজাপতি

সাগর ফরাজী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০২২
বিলীনের পথে প্রজাপতি

সাভার (ঢাকা): দুই দশক আগেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) প্রজাপতির প্রজাতির সংখ্যা ছিল ১১০টি, যা বিলুপ্ত হতে হতে এখন দাঁড়িয়েছে ৫২টিতে। অরণ্য ও জীব বৈচিত্রের ধ্বংসের কারণে এই পতঙ্গটির বিভিন্ন জাত হারিয়ে যাচ্ছে পরিবেশ থেকে।

এক সময় দেশে সাড়ে চার শাতাধিক প্রজাতির প্রজাপতি ছিল, যা কমতে কমতে এখন অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছে।

এ অবস্থায় প্রজাপতি সংরক্ষণ ও গণসচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছরের মতো এবারও ‘উড়লে আকাশে প্রজাপতি, প্রকৃতি পায় নতুন গতি’ স্লোগানকে সামনে রেখে শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) জাবিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রজাপ্রতি মেলা-২০২২।

এদিন সকাল থেকেই জাবির জহির রায়হান মিলনায়তনে শিশু-কিশোরদের জন্য প্রজাপতি বিষয়ক ছবি আঁকা ও কুইজ প্রতিযোগিতা, প্রজাপতি বিষয়ক আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনী, জীবন্ত প্রজাপতি প্রদর্শন, প্রজাপতি চেনা প্রতিযোগিতা, প্রজাপতির আদলে ঘুড়ি উড়ানো প্রতিযোগিতা, বারোয়ারি বিতর্ক প্রতিযোগিতা, প্রজাপতি বিষয়ক ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী করা হয়। রাজধানীসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন পরিবার নিয়ে আসেন এ প্রদর্শনী দেখতে।

মেলায় আসা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবির) প্রাণীবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী শিখা বিন্তে হাসান বলেন, প্রতিবছর আমরা এই প্রজাপতি মেলায় এসে একটি স্টল দেই। যেখানে প্রজাপতি বিষয়ক নানা উপকরণ রয়েছে। আমরা চেষ্টা করি প্রজাপতিকে রক্ষায় মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর। কারণ এখন অনেক প্রজাতির প্রজাপতি বিলুপ্তির পথে, আমরা চাইলে তাদের বাঁচাতে পারি।

ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে পরিবারের সঙ্গে আসা শিশু সুহাদা আমরিন বলেন, আজ প্রথম আব্বু ও আম্মুর সঙ্গে বাটারফ্লাই (প্রজাপতি) দেখতে জাহাঙ্গীরনগর এসেছি। যদিও আমার পছন্দের বাটারফ্লাই মুনিস এখানে নেই, তবুও যেগুলো আছে সেগুলো দেখে খুব ভালো লাগছে। সুহাদার মতো আরও অনেক শিশু-কিশোর এই প্রজাপতি দেখতে এসেছে।

জাবি প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও প্রজাপতি মেলার আয়োজক মনোয়ার হোসেন বাংলানিউকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা প্রজাপতিকে বাঁচাতে কাজ করছি। কিন্তু আমরা চেষ্টা করার পরেও অনেক প্রজাতির প্রজাপতি হারিয়ে যাচ্ছে।   বাংলাদেশে আগে কমপক্ষে ৪৫০ প্রজাতির প্রজাপতি ছিল। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা দুই যুগ আগে পেয়েছিলাম ১১০টি প্রজাতি। সেটি কমে এখন ৫২টিতে নেমে এসেছে। তার মানে হচ্ছে অর্ধেক কমেছে। এর কারণ হচ্ছে প্রজাপতির যে বাসস্থান ও ডিম পারবে, তার জীবন কার্যক্রম চালাবে সেগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। মূলত অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য এগুলো হচ্ছে। তাই প্রজাপতিকে টিকিয়ে রাখতে প্রকৃতিকে প্রকৃতির মতো করে চলতে দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের এই প্রজাপতি মেলা আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে প্রজাপতি সম্পর্কে জানানো। প্রকৃতিতে প্রজাপতি কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সেই তথ্য জানানো। এখানে অনেক জায়গা থেকে সাধারণ মানুষসহ শিশু-কিশোররা এসে প্রজাপতি দেখে। তারা প্রজাপতি সম্পর্কে জানতে পারে। প্রজাপতিকে বাঁচাতে হলে প্রথমে আমাদের সচেতন হতে হবে।

সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক ইসতিয়াক উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দেশে বনের আশপাশে যে মানুষজন রয়েছে তারা অনেকে বনের ওপর নির্ভরশীল। বন না থাকলে শুধু প্রজাপতি নয়, সব প্রাণী বিপন্ন হয়ে যাবে। কোনো বনে প্রাণীরা এককভাবে বাঁচতে পারে না। তাই সব বন্যপ্রাণী নিয়েই কিন্তু ইকো সিস্টেম। একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোঃ জামাল উদ্দিন রুনু বাংলানিউজকে বলেন, আমরা জানতাম সারা বাংলাদেশে ৪ ভাগের এক ভাগ প্রজাপতি ছিল আমাদের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার মধ্যে এখন অল্প সংখক প্রজাপতি রয়েছে আমাদের এখানে। আমাদের পরিবেশের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ইকো সিস্টেম। প্রথমত প্রজাপতিরা পরাগায়ন করে এটা যেমন সত্য, দ্বিতীয়ত প্রজাপতির ডিম কিন্তু অন্য প্রাণীরা খায়। তার মানে খাদ্য শৃঙ্খলে প্রজাপতির ভূমিকা অনস্বীকার্য। প্রজাপতি যদি ভালো পরাগায়ন না করে তাহলে সেই ফলটি ভালো হবে না। ফল খেয়ে অন্য প্রাণী বাঁচবে না। আর উদ্ভিদে বিচিও কিন্তু আসবে না। আর এইভাবে একটা ইকো সিস্টেম ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০২২
এসএফ/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।