ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০৭ রবিউস সানি ১৪৪৬

বিনোদন

সালতামামি ২০১৯

না ফেরার দেশে যে তারকারা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৯
না ফেরার দেশে যে তারকারা

জন্ম নিলেই মৃত্যু অপরিহার্য। তবুও কিছু মানুষের চলে যাওয়া বড় ধরনের শূন্যতা সৃষ্টি করে যায়। ২০১৯ সালেও এমন শূন্যতা তৈরি হয়েছে শোবিজ অঙ্গনে।

বিদায়ী বছর অনেক গুণী তারকা না ফেরার দেশে চলে গেছেন। সংগীতের জন্য বছরটি ছিল শোকের।

তাছাড়া চলচ্চিত্র ও নাটকের অনেক তারকা ঝরে পড়েছেন এ বছর। কিন্তু তারা বেঁচে থাকবেন তাদের কর্মের মাধ্যমে-

বছর শুরুতে কিসলু ও বুলবুলের বিদায়
৫ জানুয়ারি প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ইফতেখারুল আলম কিসলু মৃত্যুবরণ করেন। তিনি বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। ১৯৬৪ সালে ইফতেখারুল আলম তার স্টার ফিল্ম করপোরেশনের ব্যানারে প্রথম রঙিন সিনেমা ‘সঙ্গম’ নির্মাণ করেন। ১৯৬৬ সালে রাজ্জাক-সুচন্দার কালজয়ী সিনেমা ‘বেহুলা’ও প্রযোজনা করেন তিনি। এছাড়াও প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা ‘ওরা ১১ জন’র অন্যতম প্রযোজক ছিলেন কিসলু।

২২ জানুয়ারি বীর মুক্তিযোদ্ধা, প্রখ্যাত গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ৬২ বছর বয়সে না ফেরার দেশে চলে যান। এ কিংবদন্তি সংগীতজ্ঞ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি হৃদযন্ত্রের জটিলতায় ভুগছিলেন। ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’, ‘সেই রেল লাইনের ধারে’, ‘ও মাঝি নাও ছাইড়া দে ও মাঝি পাল উড়াইয়া দে’, ‘সুন্দর সুবর্ণ তারুণ্য লাবণ্য’র মতো দেশাত্মবোধক গানগুলোতে তার দেওয়া সুর বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে স্পন্দন তুলবে চিরদিনই। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ৩৫০টির মতো চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করেছেন তিনি।  

শাহনাজ রহমতউল্লাহর জীবনাবসান
২৩ মার্চ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বরেণ্য সঙ্গীতশিল্পী শাহনাজ রহমতউল্লাহ ৬৫ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দেশাত্মবোধক গানের শিল্পী হিসেবে তিনি নন্দিত। ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়ে’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বলরে‌ এবার বল’, ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’, ‘আমায় যদি প্রশ্ন করে’ ও ‘যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়’ মতো অসংখ্য জনপ্রিয় গান তিনি কণ্ঠে তুলেছিলেন। তার ৪টি গান বিবিসির একটি জরিপে সর্বকালের সেরা ২০টি বাংলা গানের তালিকায় স্থান পায়।

একই মাসে চিরবিদায় নেন সামাদ, কায়সার, সালেহ, মিজান ও আনিস 
৬ এপ্রিল ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা টেলি সামাদ না ফেরার দেশে চলে যান। চার দশকের অভিনয় ক্যারিয়ারে ছয় শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন জনপ্রিয় এ অভিনেতা। অভিনয়ের পাশাপাশি গানেও তিনি দক্ষতার প্রমাণ রেখেছেন। গান গেয়েছেন ৫০টির বেশি সিনেমায়।  

এছাড়া একই মাসে গীতিকার আহমেদ কায়সার, অভিনেতা সালেহ আহমেদ, নির্মাতা হাসিবুল ইসলাম মিজান ও কৌতুক অভিনেতা আনিস মৃত্যুবরণ করেন।

মে মাসে সুবীর নন্দী, খালিদ হোসেন ও মায়া ঘোষের মৃত্যু
২২ মে মাসে সবাইকে ছেড়ে চিরবিদায় নিয়েছেন বরেণ্য নজরুলসংগীত শিল্পী খালিদ হোসেন। ৭৮ বছরে হৃদরোগসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। তার গাওয়া নজরুলসংগীতের ছয়টি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ২০০০ সালে একুশে পদক পেয়েছেন। আরও পেয়েছেন নজরুল একাডেমি পদক, শিল্পকলা একাডেমি পদক, কলকাতা থেকে চুরুলিয়া পদকসহ অসংখ্য সম্মাননা।

৭ মে না ফেরার দেশে চলে যান একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দী (৬৫)। সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার জীবনাবসান হয়। আধুনিক সংগীতের পাশাপাশি শাস্ত্রীয় সংগীত, ভজন, কীর্তন এবং পল্লীগীতি দিয়ে সকলের প্রিয় হয়েছেন তিনি। নিজের ভালো লাগার নজরুলসংগীতেও আবেশ ছড়ান সুবীর নন্দী। সংগীতের সব অঙ্গনে মায়া ছড়ানো এই শিল্পী প্রায় পাঁচ দশকের ক্যারিয়ারে গান গেয়েছেন আড়াই হাজারেরও বেশি। চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করে সুবীর নন্দী চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন।  

১৯ মে দীর্ঘদিন ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন মঞ্চ, টিভি ও চলচ্চিত্র অভিনেত্রী এবং মুক্তিযোদ্ধা মায়া ঘোষ(৭০)। ১৯৮১ সালে ‘পাতাল বিজয়’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বড় পর্দায় মায়া ঘোষের যাত্রা শুরু হয়। প্রায় দুই শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। অসংখ্য মঞ্চ নাটক ও টিভি নাটকের অভিনেত্রী তিনি।

জুনে না ফেরার দেশে মমতাজউদ্দীন আহমেদ ও নাজমুল হুদা মিন্টু
একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রখ্যাত নাট্যকার, নির্দেশক ও অভিনেতা অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদ মৃত্যু বরণ করেন ২ জুন। কর্মজীবনে তিনি চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ এবং পরে ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। তার লেখা নাটক ‘কী চাহ শঙ্খচিল’ ও ‘রাজার অনুস্বারের পালা’ পশ্চিমবঙ্গের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য তালিকাভুক্ত হয়। নাট্যকলায় অনন্য অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৭ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন। লাভ করেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার, শিশু একাডেমি পুরস্কার, আলাউল সাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা।

একই দিনে মারা গেছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা নাজমুল হুদা মিন্টু। ‘চৌধুরী বাড়ী’, ‘ডাক পিয়ন’, ‘অনেক প্রেম অনেক জ্বালা’, ‘দিনের পর দিন’, ‘সংঘর্ষ’, ‘মধুমালতি’, ‘ঘরে বাইরে’সহ বেশকিছু সিনেমা নির্মাণ করে প্রশংসিত হয়েছিলেন তিনি।

খলিলুর রহমান বাবরের মৃত্যু
২৬ আগস্ট পৃথিবী থেকে বিদায় নেন এক সময়ের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেতা, পরিচালক ও প্রযোজক খলিলুর রহমান বাবর (৬৭)। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি না ফেরার দেশে চলে যান। আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘বাংলার মুখ’ সিনেমার মাধ্যমে নায়ক হিসেবে চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন বাবর। তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।  

অকালে চলে গেলেন হুমায়ূন সাধু
২৫ অক্টোবর অকালে না ফেরার দেশে চলে গেলেন তরুণ নির্মাতা ও অভিনেতা হুমায়ূন সাধু। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। সিনেমা নির্মাণের স্বপ্ন দেখছিলেন তিনি। কিন্তু তার আগেই বিদায় নিতে হলো তাকে। সাধু অভিনীত ‘ঊন মানুষ’ এবং পরিচালিত ‘চিকন পিনের চার্জার’ নাটক ব্যাপক আলোচিত হয়। চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশ পেয়েছে তার প্রথম বই ‘ননাই’। একটি সিনেমা নির্মাণের কাজও হাতে নিয়েছিলেন তিনি। অভিনয়, নির্মাণ ও লেখালেখি-তিনটিই সমানতালে চালিয়ে যাচ্ছিলেন ‘ঊন মানুষ’ খ্যাত এ তারকা।

কালা আজিজের মৃত্যু
২৩ নভেম্বর ৩৫ বছর বয়সে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন চলচ্চিত্র অভিনেতা কালা আজিজ। প্রায় তিন দশক ধরে চলচ্চিত্রে পার্শ্ব-অভিনেতা হিসেবে কালা আজিজ অভিনয় করেছেন। ডিপজল ও মান্নার সহশিল্পী হিসেবে অসংখ্য চলচ্চিত্রে তাকে পাওয়া গেছে। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে চারশতাধিক চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন।

বছর শেষে মাহফুজুর রহমান, পৃথ্বীরাজ ও বাসু দেবের বিদায়
৬ নভেম্বর মারা যান দশবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রগ্রাহক মাহফুজুর রহমান খান। পেশাদার চিত্রগ্রাহক হিসেবে তিনি ১৯৭২ সালে প্রথম চলচ্চিত্রে কাজ করেন। তিনি আলমগীর কবির, আলমগীর কুমকুম, হুমায়ুন আহমেদ, শিবলি সাদিকদের মতো চলচ্চিত্র পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছেন।

১৫ ডিসেম্বর তরুণ সংগীতশিল্পী পৃথ্বীরাজ পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। নিজের স্টুডিওতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আরজে ও সংগীতশিল্পী রেহানের কণ্ঠে ‘আমার এই বাজে স্বভাব কোনদিন যাবে না’ গানের সংগীত পরিচালক ছিলেন পৃথ্বীরাজ। গত বছর গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। পৃথ্বীরাজ বেসরকারি এফএম রেডিও এবিসি’তে কর্মরত ছিলেন।

বছরের শেষে শোকে ভাসিয়েছেন সংগীত পরিচালক বাসুদেব ঘোষ। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ২৯ ডিসেম্বর রাতে মাত্র ৫১ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বাসুদেব ঘোষের সুর-সংগীত শ্রোতাদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ‘তোমার ওই মনটাকে একটা ধুলোমাখা পথ করে দাও’, ‘তুমি হারিয়ে যাওয়ার সময় আমায় সঙ্গে নিও’, ‘আমি খুঁজে বেড়াই আমার মা’, ‘এই করে কেটে গেল ১২টি বছর’, ‘দেহ মাদল’ উল্লেখযোগ্য।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৯
জেআইএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।