আসছে ২০২৫–২৬ অর্থবছরে বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি বাজেটের চেয়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কম। আর এবারের বাজেটে বেশ কিছু পণ্যে উৎসে কর, আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট কমানোর প্রস্তাব থাকতে পারে।
দাম কমার তালিকায় উল্লেখযোগ্য পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে - এলএনজি, জ্বালানি তেল, প্রায় ৩০ এর অধিক কৃষি ও নিত্যপণ্য (ধান, ধানের কুড়া, চাল, গম, আলু, গবাদি পশু, মাছ, মাংস, পিঁয়াজ, রসুন, মটর, ছোলা, মসুর, আদা, হলুদ, শুকনা মরিচ, ডাল, ভুট্টা ইত্যাদি), চিনি, ক্যান্সারের ওষুধ, বিদেশি জুস ও সফটওয়্যার।
আজ সোমবার দেশের ৫৫তম জাতীয় বাজেট ঘোষণা করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ টেলিভিশনে বিকেল ৩টায় সরাসরি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করা হবে। স্বাধীনতার পর অতীতের সব সরকারের ধারাবাহিকতা ভেঙে এবারই প্রথমবারের মতো বাজেটের আকার কমছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানা গেছে, বাজেট ঘাটতি ধারণযোগ্য পর্যায়ে রেখে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় গতবারের চেয়ে ছোট বাজেট দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার বা মোট ব্যয়ের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি বাজেটের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। এবারই প্রথমবারের মতো বাজেটের আকার কমছে।
নতুন বাজেটের আকার কমলেও পরিচালন বা অনুন্নয়ন খাতে বরাদ্দের প্রাক্কলন করা হচ্ছে ৫ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৫ লাখ ৬ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। তবে উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দ কমিয়ে ২ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার পরিকল্পনা করা হয়েছে। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ২ লাখ ৮১ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) চলতি অর্থবছরের ব্যয়ের পরিকল্পনা ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। আগামী বাজেটে যা ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা হতে পারে।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম নতুন বাজেটের আকার ছোট হচ্ছে। মূলত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকুচিত মুদ্রানীতির সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারি ব্যয় কমানো এবং বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য করতেই আকার কমানো হচ্ছে।
যেসব পণ্যে দাম কমতে পারে বাজেটে:
বাজেটে এলএনজি আমদানিতে বিদ্যমান ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন করে (ভ্যাট) ছাড় দেওয়া হবে। ফলে এলএনজির দাম কিছুটা কমতে পারে। ক্রড ফুয়েল অয়েল বা অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ওপর শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হতে পারে এবং অন্যান্য জ্বালানি আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশ কমানো হতে পারে। এতে জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা কমতে পারে।
আসছে ঈদুল আজহায় কোরবানি পশুর চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে বড় উপকরণ হচ্ছে বিভিন্ন রাসায়নিক উপকরণ। সারাবছরই সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্পে এমন উপকরণ সাশ্রয়ী মূল্যে রাখা জরুরি। সেই বিবেচনায় চামড়া শিল্পের জন্য কিছু রাসায়নিক উপাদানে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে ১ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে।
নিত্যপণ্য আমদানিতে উৎসে কর কমছে। ফলে কৃষি ও নিত্যপণ্যের মধ্যে ধান, ধানের কুড়া, চাল, গম, আলু, গবাদি পশু, মাছ, মাংস, পিঁয়াজ, রসুন, মটর, ছোলা, মসুর, আদা, হলুদ, শুকনা মরিচ, ডাল, ভুট্টা, আটা, ময়দা, লবণ, ভোজ্যতেল, চিনি, বীজ, পাটকাঠি, সরিষা, তিল, কাঁচা চা-পাতা, গোলমরিচ, এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, তেজপাতা এবং পাট কেনার জন্য খোলা বা কৃত স্থানীয় ঋণপত্র খোলা বা অন্য কোনো অর্থায়ন চুক্তির ক্ষেত্রে ব্যাংক বা ফাইন্যান্স কোম্পানি কর্তৃক পরিশোধিত বা ঋণকৃত পরিমাণের উপর ব্যাংক বা ফাইন্যান্স কোম্পানি কর্তৃক শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ হারে কর কর্তনের প্রস্তাব থাকবে, যা আগে ছিল ১ শতাংশ। এসব পণ্যের দাম কমবে।
একইসঙ্গে ভূমি নিবন্ধনে কর কমানো প্রস্তাব থাকতে পারে। ফলে ভূমি নিবন্ধন খরচ কমবে। শুল্ক কমতে পারে চিনি আমদানিতেও।
ওষুধ খাতকে শক্তিশালী করতে এবং স্বাস্থ্যসেবার খরচ কমাতে বাজেটে ওষুধের কাঁচামাল ও চিকিৎসা সরঞ্জামের ওপর শুল্ক কমানোর প্রস্তাব থাকতে পারে। বিশেষ করে ক্যানসার, কিডনি ও রক্তনালীর রোগের ওষুধ প্রস্তুতকারকদের জন্য অতিরিক্ত ৭৯ পণ্য শুল্কমুক্ত করা হতে পারে। এই উদ্যোগটি দেশে চিকিৎসা খরচ কমাবে এবং স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
খেলনা ও ক্রিকেট ব্যাট উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামালের ক্ষেত্রেও শুল্ক কমানোর সম্ভাবনা আছে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমদানি করা ফিনিশড টয়গুলোর শুল্ক প্রতি কেজি চার ডলার ও ক্রিকেট ব্যাট তৈরিতে ব্যবহৃত উইলো কাঠের শুল্ক ৩৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৬ শতাংশ করা হতে পারে।
এছাড়া, দেশে তৈরি সফটওয়্যার রপ্তানি বাড়াতে সরকার ডেভেলপমেন্ট টুলস, অপারেটিং সিস্টেম, ডাটাবেজ ও সিকিউরিটি সফটওয়্যারের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে পাঁচ শতাংশ করতে পারে। নন-অ্যালকোহলিক জুস আমদানির ওপর সম্পূরক শুল্ক ১৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০০ শতাংশ করার প্রস্তাবও থাকতে পারে প্রস্তাবিত বাজেটে। ফলে বিদেশি জুস মিলতে পারে তুলনামূলক কম দামে।
জিসিজি/এসএএইচ