ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

নির্বাচন ও ইসি

জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম চান না ৩৯ বিশিষ্ট নাগরিক

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২২
জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম চান না ৩৯ বিশিষ্ট নাগরিক

ঢাকা: আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের সিদ্ধান্ত বিরাজমান রাজনৈতিক বিতর্ককে আরো উস্কে দেবে। এছাড়া নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আস্থার সংককটে আরো প্রকট করে তুলবে।

তাই এই সিদ্ধান্ত থেকে ইসিকে সরে আসার পরামর্শ দিয়েছে দেশের ৩৯টি বিশিষ্ট নাগরিক।

মঙ্গলবার (০৬ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে তারা এমন আহ্বান জানায়।

এতে উল্লেখ করা হয়েছে- রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়াই সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ভোটগ্রহণে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইসির এ সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। এটি রাজনৈতিক বিতর্ককে আরও উস্কে দেবে এবং কমিশনের বর্তমান আস্থার সংকটকে আরও প্রকট করে তুলবে।

কমিশনের সিদ্ধান্তের অযৌক্তিকতার একটি কারণ হলো, প্রযুক্তিগতভাবে ইভিএম একটি দুর্বল যন্ত্র। এতে ‘ভোটার ভেরিফাইড পেপার অডিট ট্রেইল’ (ভিভিপিএটি) নেই, যার ফলে কমিশন ভোটের যে ফলাফল ঘোষণা করবে তাই চূড়ান্ত হিসেবে গ্রহণ করতে হবে এবং এটি পুনঃগণনা বা নিরীক্ষা করার সুযোগ থাকবে না। এ কারণেই কমিশন কর্তৃক গঠিত কারিগরি উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান প্রয়াত জামিলুর রেজা চৌধুরী ২০১৮ সালে ইভিএম কেনার সুপারিশে স্বাক্ষর করেননি। প্রসঙ্গত, ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তাদের ইভিএমে ভিভিপিএটি যুক্ত করা হয়।

প্রযুক্তির কারণে ইভিএম ব্যবহার করে ডিজিটাল জালিয়াতিও করা যায়। বায়োমেট্রিকভিত্তিক ইভিএম অনেক ভোটারকেই শনাক্ত করতে পারে না, ফলে কমিশন প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদেরকে তাদের আঙুলের ছাপ দিয়ে যন্ত্রটি খুলে দেওয়ার তথা ইভিএমকে ওভাররাইড করার ক্ষমতা দিয়ে থাকে। যে কোনো ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রের মত প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে ইভিএমের ফলাফল নিয়েও কারসাজি করা যায়। এছাড়া নির্বাচনের সময়ে মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত কারিগরি টিমও নির্বাচনী ফলাফল বদলে দিতে পারেন। গত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অন্তত দুইবার ফলাফল প্রকাশের অভিযোগ উঠেছে, যা কেবল ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমেই সম্ভব।

কমিশনের সিদ্ধান্তের অযৌক্তিকতার আরেকটি কারণ হলো, ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিতর্ক থাকা এবং এ ব্যাপারে ঐকমত্য তৈরি না হওয়া। সম্প্রতি কমিশনের ডাকা সংলাপে যে ২২টি দল ইভিএম নিয়ে মতামত ব্যক্ত করেছে তার মধ্যে ১৪টি দল এটি নিয়ে তাদের সংশয় ও সন্দেহের কথা স্পষ্টভাবেই বলেছে। এর মধ্যে নয়টি দল সরাসরি ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে মত দিয়েছে। আওয়ামী লীগসহ চারটি দল ইভিএমে ভোট চেয়েছে। অন্যদিকে বিএনপিসহ যে নয়টি দল ইসির সংলাপ বর্জন করেছিল, তারাও ইভিএমের বিপক্ষে।

তৃতীয়ত, ১৫০টি ইভিএমে নির্বাচন করতে হলে নতুন মেশিন কেনায় অন্তত অর্ধ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে এ ধরনের বিপুল ব্যয় কতটুকু যৌক্তিক তা ভেবে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি।

ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে সিইসি উল্লেখ করেছেন, তাদের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত আমলে নেওয়া হয়নি। এতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ যে গুরুত্বহীন ছিল তা সুস্পষ্ট হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে আগামীতে কমিশনের সাথে নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক দলের সংলাপও অর্থহীন হয়ে পড়েছে।

বিবৃতিদাতারা হলেন- ব্যারিস্টার আমির-উল ইসলাম, সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী; ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক; এম হাফিজউদ্দিন খান, অবসরপাপ্ত মহা হিসাব-নিরীক্ষক এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা; ড. আকবর আলি খান, অবসরপ্রাপ্ত মন্ত্রীপরিষদ সচিব ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, বিচারপতি মো. আবদুল মতিন, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি; ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠাতা; ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার; আলী ইমাম মজুমদার, সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব; ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর; অধ্যাপক পারভীন হাসান, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর; অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ; ড. শাহদীন মালিক, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী; ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, অর্থনীতিবিদ; ড. শহিদুল আলম, আলোকচিত্রশিল্পী; অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; ড. আহসান মনসুর, অর্থনীতিবিদ; আবদুল লতিফ মন্ডল, সাবেক সচিব; শামসুল হুদা, এসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম এন্ড ডেভেলপমেন্ট’র নির্বাহী পরিচালক; প্রকৌশলী বিডি রহমতুল্লাহ, পাওয়ার সেল’র সাবেক মহাপরিচালক; সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি; অধ্যাপক আসিফ নজরুল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ, লেখক; লুবনা মরিয়ম, আর্টিস্টিক ডিরেক্টর, সাধনা; অধ্যাপক স্বপন আদনান, সোয়াস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন; শারমিন মুরশিদ, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ব্রতী; অধ্যাপক ফিরদৌস আজিম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়; সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, সাবেক ব্যাংকার; আবু সাঈদ খান, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক; কামাল আহমেদ, সাংবাদিক; জাকির হোসেন, প্রধান নির্বাহী, নাগরিক উদ্যোগ, নূর খান লিটন, মানবাধিকারকর্মী; শিরিন হক, সদস্য, নারীপক্ষ; ড. বদিউল আলম মজুমদার, সম্পাদক, সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক; সাইফুর রহমান, সাবেক জ্যেষ্ঠ তথ্য প্রযুক্তিবিদ, অস্ট্রেলিয়ান পাবলিক সার্ভিস, ফারুক ফয়সাল, আঞ্চলিক পরিচালক, আর্টিকেল ১৯; সঞ্জীব দ্রং, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, সালমা আলী, সভাপতি, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি; ড. এম নিয়াজ আসাদুল্লাহ, অধ্যাপক, মোনাশ ইউনিভার্সিটি, মালয়েশিয়া ও ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, সিনিয়র সফটওয়্যার সল্যুশন আর্কিটেক্ট।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০২২
ইইউডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।