ঢাকা, বুধবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

নির্বাচন ও ইসি

সংসদ নির্বাচনের রেশ না কাটতেই উপজেলার তোড়জোড় 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০১৯
সংসদ নির্বাচনের রেশ না কাটতেই উপজেলার তোড়জোড়  প্রতীকী ছবি

রাজশাহী: সদ্যই শেষ হলো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এরইমধ্যে মার্চে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে কমিশন। তাই সংসদ নির্বাচনের রেশ না কাটতেই রাজশাহীতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে।

দলীয় মনোনয়ন বাগিয়ে নিতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে গেছে। সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এবার স্থানীয় এমপিদের সবচেয়ে বিরোধী ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যানরা।

তাই রাজনৈতিক বৈরিতা কাটাতে ভোল পাল্টাতে শুরু করেছেন তারা। দলীয় মনোনয়ন পেতে ইতোমধ্যে সংসদ সদস্যদের কাছে ঘেঁষতে শুরু করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

অথচ বিগত কয়েক মেয়াদের সংসদ নির্বাচনের তুলনায় এবার স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের মধ্যে বিরোধ ছিল চরমে। টার্গেট ছিল দলীয় মনোনয়ন। সারাদেশের মতো রাজশাহীর প্রায় প্রতিটি আসনেই দলীয় মনোনয়ন আদায় নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানরা মুখোমুখী অবস্থানে ছিলেন। এ নিয়ে রাজশাহীর অনেক উপজেলায় ঝামেলাও কম হয়নি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পৌর মেয়র ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা স্বপদে থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে পারবেন না বলে আদেশ দেন উচ্চ আদালত। ফলে এ যাত্রায় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে চাপা ক্ষোভ আর বিস্ফোরণ ঘটাতে পারেননি তারা। তবে উপজেলা নির্বাচনে এসে এমপিদের সঙ্গে প্রকাশ্যে বিরোধে জড়িয়ে অনেকের কপাল পুড়তে পারে। এর চরম খেসারতও দিতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরা।  

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান ইছাহাক আলী বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে গতবার নির্বাচন করেছিলেন। তবে এরইমধ্যে পল্টি দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা হয়েছেন। এবার নির্বাচনেও মনোনয়ন চাইবেন তিনি। কিন্তু এখান থেকে উপজেলা নির্বাচনের জন্য আগে থেকে নৌকার হাল ধরে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম আসাদুজ্জামান আসাদ। তবে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম এরইমধ্যে এলাকায় দোয়া চেয়ে পোস্টার সাঁটিয়ে নিজের অবস্থান জানান দিয়েছেন। জেলার শীর্ষ নেতা ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করছেন।  

তানোরের উপজেলা চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা এমরান আলী মোল্লা মারা গেছেন। বর্তমানে ভাইস চেয়ারম্যান বন্দনা রানী সরকার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গতবার এমরান আলী মোল্লার কাছে পরাজিত হন গোলাম রাব্বানি। পরে মুন্ডুমালা পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। এমপির সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব অবসান না হওয়ায় এবার তার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা কম। এক্ষেত্রে কপাল খুলতে পারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুনের। তবে তানোর উপজেলা চেয়ারম্যানের জন্য এবার লুৎফর হায়দার রশীদ ময়না দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। তিনি তানোর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি এবং কলমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। বর্তমানে তাদের অনেকেই ঢাকায় অবস্থান করছেন।

পবা উপজেলা চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা মকবুল হোসেনের মৃত্যু হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন ভাইস চেয়ারম্যান আশরাফুল হক তোতা। ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে তিনিও এবার প্রার্থী। তবে এখানে মনোনয়ন চাইবেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মানজাল ও দফতর সম্পাদক ফারুক হোসেন ডাবলু, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন আলী ও সাধারণ সম্পাদক মাজদার রহমান সরকার।  

মোহনপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি দিলিপ কুমার সরকার তপন, জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি আলমগীর মোরশেদ রঞ্জু চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য লবিং করছেন। এর মধ্যে আলমগীর মোরশেদ রঞ্জু গত দুই বছর থেকে মাঠে রয়েছেন। এলাকায় পোস্টার সাঁটিয়ে দোয়াও চেয়েছেন। এছাড়াও উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আরও কয়েক নতুন মুখ রয়েছে।

রাজশাহীর বাগমারায় এবার মনোনয়নে দৌঁড়ে এগিয়ে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অনিল কুমার সরকার ও বর্তমান সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের এপিএস আসাদুজ্জামান আসাদ। রয়েছে আরও কয়েকটি নতুন মুখ। সংসদ সদস্যের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ানোর কারণে এবার কপাল পুড়তে পারে বর্তমান চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম সান্টুর।  

রাজশাহীর পুঠিয়ার আহসানুল হক মাসুদ এবার সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্তু মনোনয়ন না পেলেও পছন্দের তালিকায় শীর্ষেই রয়েছেন। তবে এবার তিনি উপজেলায় মনোনয়ন চাইবেন কী না সে ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। কিন্তু দলীয় মনোনয়ন চাইবেন- সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গোলাম ফারুক ও শাহরিয়ার রহিম কনক।

রাজশাহীর দুর্গাপুরে এবারও মনোনয়ন চাইবেন বর্তমান চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম। তবে সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ ও পৌর মেয়র তোফাজ্জাল হোসেনসহ আরও কয়েকজন নতুন মুখ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন।

রাজশাহীর চারঘাটে উপজেলা চেয়ারম্যানের জন্য মনোনয়ন চাইবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলাম ও চারঘাট পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল হক। এছাড়া রাজশাহীর বাঘায় এবার জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লায়েব উদ্দিন লাভলু, জেলা কমিটির সদস্য বাঘা পৌরসভার সাবেক মেয়র আক্কাস আলী, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও প্যানেল মেয়র শাহিনুর রহমান পিন্টু এবার দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।

জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনের পর উপজেলা নির্বাচন হয়েছিল। তাই নির্বাচনের জন্য এবারও তাদের প্রস্তুতি রয়েছে। উপজেলায় যারা প্রার্থী হতে চান তারা এরইমধ্যে যোগাযোগ শুরু করেছেন। তাদের মধ্যে তৃণমূলে মতামতের ভিত্তিতে তিনজন করে প্রার্থীর নাম সুপারিশ করে দলীয় হাইকমান্ডের কাছে পাঠানো হবে বলেও জানান এই আওয়ামী লীগ নেতা।

এর আগে সর্বশেষ উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০১৯
এসএস/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।