ঢাকা, শুক্রবার, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

ইবির প্রকৌশলীকে বহিষ্কারের দাবি শিক্ষার্থীদের 

ইবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০২২
ইবির প্রকৌশলীকে বহিষ্কারের দাবি শিক্ষার্থীদের 

ইবি (কুষ্টিয়া): ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) প্রকৌশলী আলিমুজ্জামান টুটুলকে অজ্ঞাতপরিচয় এক ছাত্রীর সঙ্গে একান্ত ব্যক্তিগত কথোপকথনের ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনায় তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

শনিবার (১৯ নভেম্বর) সকাল ১১টার দিকে আলিমুজ্জামান টুটুলকে বহিষ্কার ও বিচারের দাবিতে প্রধান প্রকৌশলী মুন্সী সহিদ উদ্দীন মোহাম্মদ তারেকের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালান শিক্ষার্থীরা।

 

প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা গেছে, ইবির প্রকৌশলী আলিমুজ্জামান টুটুলের বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা প্রধান প্রকৌশলীর অফিসে যান। আলোচনার একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে প্রধান প্রকৌশলীর অফিস ভাঙচুর করে এবং প্রকৌশল অফিসের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন।  

এতে প্রধান প্রকৌশলীসহ কয়েকজন ভেতরে আটকে পড়ে। আন্দোলনে ইসতিয়াক, শাকিল, বিন্ত, শাহীন পাশা, উম্মে হাবীবা হ্যাপীসহ প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থীকে দেখা যায়।  

পরে আন্দোলনকারীরা টুটুলের স্থায়ী বহিষ্কার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের কাছে স্মারকলিপি দেন।  

স্মারকলিপিতে তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ও বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আলিমুজ্জামান টুটুলের নামে ৬ মিনিট ২১ সেকেডের আপত্তিকর অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরে যা বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী, যারা দেশ-দেশের বাইরে অবস্থান করছেন তাদের বিব্রত করছে। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বিনষ্ট করেছে।  

এর আগেও ২০১৩ সালে কুষ্টিয়ায় এক শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীদের গোপন ভিডিও ধারণের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মামলা হলে গ্রেফতার এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার হন। এতে অভিযুক্ত টুটুলের স্থায়ী বহিষ্কার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তারা।  

পরে তারা প্রকৌশল অফিসের তালা খুলে দেন এবং আন্দোলন প্রত্যাহার করেন।  

এ বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলী মুন্সী সহিদ উদ্দীন মো. তারেক বলেন, তারা আমার অফিসের দরজায় লাথি দিয়েছেন এবং শোকেসের কাঁচ ভাঙচুর করেছেন। আমি চাই প্রশাসন আমাদের নিরাপত্তার বিষয়টা দেখবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।  

এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বিষয়টি শুনে প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আলোচনা করে প্রশাসনের কাছে লিখিত দিলে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, তিনি যে কাজটি করেছে তা গ্রহণযোগ্য না। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। কমিটি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।  

জানা গেছে, মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) দিনগত রাতে ‘ইবির নিউজ’ নামে আইডি থেকে আলিমুজ্জামান টুটুলের সঙ্গে অজ্ঞাত এক ছাত্রীর একান্ত ব্যক্তিগত কথোপকথনের ফোনালাপের অডিও ক্লিপটি পোস্ট করা হয়। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

ফাঁস হওয়া ৬ মিনিট ২১ সেকেন্ডের অডিওতে আলিমুজ্জামান টুটুলকে অজ্ঞাত ছাত্রীর সঙ্গে ব্যক্তিগত বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে শোনা যায়। কথা বলার একপর্যায়ে ছাত্রীর কাছ থেকে ছবি চান টুটুল। এমন ছবি চান, যে ছবি দেখে তিনি (টুটুল) খুশি হবেন- এমন ছবি দিতে হবে।  

পাশাপাশি ওই ছাত্রীকে পড়ালেখা শেষে তাকে চাকরির আশ্বাস দিয়ে যখন যা বলা হবে তা-ই করতে বলেন। অজ্ঞাত ছাত্রীর বিষয়ে জানা যায়নি। তবে অডিওর বিষয়ে জানতে চেয়ে একাধিকবার প্রকৌশলী আলিমুজ্জামান টুটুলের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলে মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।  

ফাঁস হওয়া অডিও যুক্ত করে দেওয়া ওই পোস্টে বলা হয়, আলিমুজ্জামান টুটুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের প্রলোভন দেখিয়ে অসৎ উদ্দেশ্য সাধন করেন। অডিও ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এ নিয়ে সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।  

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, আলিমুজ্জামান টুটুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও নিজ এলাকাবাসীর মধ্যে বিনামূল্যে কোরআন, জায়নামাজ, তসবিহ, বৃক্ষসহ চাকরির প্রস্তুতিমূলক বিভিন্ন বই বিতরণ করে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। করোনাকালে বিনামূল্যে সবজির বাজার দিয়ে সুনাম কুড়ান তিনি। এছাড়া নিজের ফেসবুক পেজে নিয়মিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে ও পুরস্কার দিয়ে আসছিলেন তিনি।  

এর আগে ২০১৩ সালে কুষ্টিয়ায় স্কুলশিক্ষক হেলাল উদ্দিন (পান্না মাস্টার) কর্তৃক ছাত্রীদের সঙ্গে আপত্তিকর ভিডিও ধারণ, নেটে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে আলিমুজ্জামান টুটুলের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় মামলা হলে গ্রেফতার হন তিনি। পরে আদালত থেকে খালাস পান।

অডিও ফাঁসের বিষয়ে জানতে চাইলে আলিমুজ্জামান টুটুল বাংলানিউজকে বলেন,  'করোনার পূর্ববর্তী সময় থেকে চাকরির পাশাপাশি আমি নিজেকে সবসময় মানবিক কাজে নিয়োজিত রেখেছি। সে সূত্র ধরে অসচ্ছল, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, আর্থিক সহায়তা এমনকি তাদের চাকরি পর্যন্তও দিয়েছি। আর এ কাজ করাতে আমার কারও সঙ্গে একটু সম্পর্ক ভালো হতেই পারে। কিন্তু সেটা সামাজিকতার গণ্ডির ভেতরেই ছিল। যে অডিওটা ফাঁস করেছে এখানে তো আমি খারাপ কিছু বলিনি। অডিওটার আগে-পরে আরও কথা ছিল, সেগুলো কেটে সরিয়ে এটুকু অশ্লীল বলে স্ট্যাটাস দিয়েছে।  

তিনি আরও বলেন, 'মেয়েটি আমার কাছে চাকরি চেয়েছিলেন। চাকরির জন্য ছবি চাইলে সে বোরকা পড়া ছবি দেন। চাকরির আবেদনের চাহিদানুযায়ী আমি বোরকা ছাড়া ছবি চাই। অথচ বিষয়টাকে ভিন্নভাবে ঘুরিয়ে অশ্লীল বানিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিত। আমাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্যই অডিও ফাঁস করেছে। আমি ইতোমধ্যে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০২২
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।