ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ মে ২০২৪, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষা

বন্ধ হয়নি জবির অর্থ দপ্তরের লুটপাট

মহিউদ্দিন রিফাত, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৯ ঘণ্টা, জুন ১, ২০২২
বন্ধ হয়নি জবির অর্থ দপ্তরের লুটপাট

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি): সরকারের পরিপত্র না মেনে সম্মানী নিচ্ছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) অর্থ ও হিসাব বিভাগের কর্মকর্তারা। এভাবে তাদের বিরুদ্ধে মোট ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা সম্মানী নেওয়ার অভিযাগ পাওয়া গেছে।

২০১৮ সালের ২৮ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিপত্র অনুযায়ী অর্থ বিভাগের ব্যয় নিয়ন্ত্রণ অনুবিভাগের জারি করা আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ সংক্রান্ত নির্দেশনায় বলা হয়েছে বাজেটে অর্থ সংকুলান সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তরের একজন কর্মচারীকে বছরে একবার সর্ব্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত সম্মানী দেওয়া যাবে।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, কোনো কর্মচারীকে ১০ হাজার টাকার বেশি বা একই অর্থবছরে একাধিকবার (যে কোন অঙ্ক) সম্মানী দেওয়ার ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের সম্মতি বা অনুমোদন নিতে হবে। তবে রুটিন কাজের জন্য কোনো সম্মানী দেওয়া যাবে না। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের সেই পরিপত্র না মেনে জবির রুটিন দ্বায়িত্ব পালনকারী অর্থ দপ্তরের পরিচালক ও উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা বিগত সময়ে অতিরিক্ত কাজ দেখিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রায় কোটি টাকা সম্মানী নিয়েছেন। এ নিয়ে সংবাদও প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসব অনিয়মের ব্যাপারে উদাসীন।

এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা বা তদন্ত কমিটি গঠন করতে দেখা যায়নি। সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থ বছরে রুটিন দ্বায়িত্ব পালনকারী পরিচালক ও উচ্চপদস্থ ব্যাক্তিরা সম্মানী না নিলেও পরিপত্র না মেনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা ঠিকই সম্মানীর নামে লাখ লাখ টাকা নিয়েছেন।

অর্থ দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে সেখানে কিছু কর্মকর্তাকে নিয়ে সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন পরিচালক। এসব কর্মকর্তা প্রতি বছরই নানা অজুহাতে অবৈধভাবে সম্মানী নিচ্ছেন। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থ বছরের জুনে বাজেট করার কাজ দেখিয়েও এ কর্মকর্তারা বেসিক পরিমাণ অর্থ নিয়েছেন। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দপ্তরের লাখ লাখ টাকার অডিট আপত্তি রয়েছে, যা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, অগ্রণী ব্যাংকের রাজস্ব তহবিল- জবির চলতি হিসাব নং ০২০০০০১২০৫৩৬০ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের সম্মানী বাবদ অর্থ দপ্তরের উপ-পরিচালক খন্দকার হাবিবুর রহমান ৫৯ হাজার টাকা, মোহাম্মদ ইব্রাহিম মিয়া ৫০ হাজার টাকা, সহকারী পরিচালক এহেছান আহমেদ ৪০ হাজার টাকা, সঞ্জয় কুমার পাল ৩৩ হাজার টাকা, তরিকুল ইসলাম ৩৩ হাজার টাকা, আমিনুল ইসলাম ৩১ হাজার টাকা ও মো. ইসরাফীল ২৫ হাজার টাকা, সেকশন অফিসার আরেফিন কাউছার ২১ হাজার টাকা, অফিস সেক্রেটারি কাম কম্পিউটার অপারেটর  মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ১১ হাজার টাকা, ক্যাশিয়ার আব্দুল গাফফার ৯,৯০০ টাকা, অফিস সহকারী মো রফিকুল ইসলাম ৮,৩০০ টাকা, এম.এল.এস.এস স্বপন চন্দ্র সিং ১৫,৮০০ টাকা, বিলামিন হোসেন আনোয়ার ৭ হাজার টাকা, সোহাগ হোসেন ৭ হাজার টাকা, জহিরুল ইসলাম ৭ হাজার টাকা এবং রাসেল আহমেদ ৭ হাজার টাকা সম্মানী নিয়েছেন।

পরিপত্র না মেনে সম্মানী নেওয়ার বিষয়ে উপ-পরিচালক হাবিবুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চান। তিনি বলেন, ১০ হাজার টাকার বেশি নেওয়া যাবে না, বিষয়টি এমন না। তবে এটা কোন আইনে আছে আমার এই মুহূর্তে জানা নেই। আর আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ভিসি, ট্রেজারার স্যার বললে আপনাকে এই ব্যাপারে বক্তব্য দেব।

পরিপত্র না মেনে সম্মানী কীভাবে নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে সদুত্তর দিতে পারেননি অর্থ ও হিসাব দপ্তরের পরিচালক কাজী নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, আমি এখন অফিসে ঢুকব, এটা তো কাগজপত্র দেখে বলতে হবে। এখানে সরকারের অনেকগুলা প্রজ্ঞাপন আছে, প্রায় ৬-৭ টা। এগুলো যারা দেখভাল করেন তারা বলতে পারবেন। এরপর তিনি ‘আমি এখন রিকশায় আছি’ এই বলে ফোন কেটে দেন।

জবির সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. শওকত জাহাঙ্গীর বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত কাজ দেখিয়ে শুধু বাজেট প্রণয়নের সময় একটি বেসিক নেওয়ার সুযোগ আছে। বিভিন্ন খাতের কাজ উল্লেখ করে একাধিকবার বেসিকের সমপরিমাণ এবং বেশি টাকা সম্মানী নেওয়া অনুচিত।

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক অটোনেমি থাকলেও ফাইন্যান্সিয়াল অটোনমি নেই। এ বিষয়টিতে আমরা সবসময় ভুল করি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা হওয়ায় আমরা অনেক সময় নিজেদের মতো করে ব্যখ্যা দেই।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৭ ঘণ্টা, ০১ জুন, ২০২২
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।