ঢাকা, শনিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

শিক্ষা

নাটোরে হিমেলের দাফন সম্পন্ন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০২২
নাটোরে হিমেলের দাফন সম্পন্ন

নাটোর: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যাওয়া মাহবুব হাসান হিমেলের দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।

বুধবার (০২ ফেব্রুয়ারি) দুপুর আড়াইটার সময় নাটোর শহরের গাড়িখানা গোরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়।

এর আগে, দু’দফা জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে প্রথম দফায় জানাজা শেষে হিমেলের মরদেহ নাটোরে নিয়ে আসা হয়।  

দুপুর সোয়া ১২টার দিকে হিমেলের মরদেহের গাড়ি বহর নাটোর শহরের কাপুরিয়াপট্টি এলাকায় তার নানা বাড়িতে পৌঁছালে সেখানে এক হৃদয় বিদারক পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সদাহাস্য মিশুক হিমেলের অকাল মৃত্যু তার স্বজনরা ও এলাকাবাসী মেনে নিতে পারছেন না। তাদের আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। পরে বাদ জোহর হিমেলের বাড়ি সংলগ্ন নববিধান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে তার মরদেহ রাখা হয়।  

এদিকে, শোকাহত পরিবারকে সমবেদনা জানাতে আসেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) গোলাম সাব্বির সাত্তার, প্রেভিসি প্রফেসর মো. জাকারিয়া, প্রোভিসি প্রফেসর সুলতানুল ইসলাম ও প্রক্টর ভারপ্রাপ্ত লিয়াকত আলীসহ সকল শিক্ষক এবং সহস্রাধিক শিক্ষার্থী। তারা তাকে শেষ দেখা দেখতে বাড়িতে ভিড় জমান। এছাড়া খবর পেয়ে হিমেলকে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলি, পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নাদিম সারওয়ার, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মালেক শেখ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিউল আযম প্রমুখ। তারা কফিনে ফুলের তোড়া দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

এসময় তারা সবাই যে ট্রাকটি হিমেলকে চাপা দিয়ে হত্যা করেছে সেই ট্রাকের চালক ও হেলপারের বিচার দাবি করেন এবং এমন ঘটনায় আর যেন কারো মায়ের কোল খালি না হয় সেই দাবি করেন তারা। ১১টি বাস ও বেশ কয়েকটি মাইক্রেবাস নিয়ে তারা হিমেলের নানা বাড়ি নাটোরে এসেছিলেন হিমেলের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে। সেখানে হিমেলের মাসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সমবেদনা জানান তারা। এসময় ভিসি প্রফেসর ডক্টর গোলাম সাব্বির সাত্তার হিমেলের মায়ের হাতে ৫ লাখ টাকার একটি চেক তুলে দেন।  

এসময় রাবির ভিসি বলেন, হিমেলের সার্বিকসহ অর্থনৈতিক দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করেছে। হিমেলের মা যতোদিন জীবিত থাকবেন তার আর্থিকসহ সার্বিক দায়িত্ব পালন করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আপাতত তাৎক্ষণিকভাবে হিমেলের মায়ের হাতে ৫ লাখ টাকার একটি চেক দেওয়া হয়েছে। হিমেলের মা যেন তার জীবদ্দশায় কোনো কষ্ট না পান সেজন্য আগামীতে বড় একটি তহবিল তাকে সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।  

এছাড়া শিক্ষামন্ত্রী, রাজশাহীর মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন, নাটোর এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুল, জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ, পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা, পৌর মেয়র উমা চৌধুরী জলি তার জন্য কিছু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তারা অচিরেই তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালন করবেন।  

ভিসি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আলোর ব্যবস্থা করা সহ সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনার জন্য ট্রাক চালক ও হেলপারের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সব সময় পাশে রয়েছে এবং থাকবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন ভিসি। এছাড়া ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের অবশ্যই বিচার হবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, নাটোর শহরের কাপুড়িয়াপট্টি মহল্লার নানা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলামের বাড়িতে মাহবুব হাসান হিমেলের জন্ম। শিশুকালে তার বাবার বাড়ি বগুড়ার শেরপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ করে তার নানার বাড়ি নাটোরে চলে আসেন হিমেল। সেখান থেকেই নাটোর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় ও পরে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারি কলেজে লেখাপড়া শেষ করেন। এরপর উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে মেধাবী হিমেল ভর্তি হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে। চারুকলায় চতুর্থ বর্ষে পড়া অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরেই মঙ্গলবার ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। সেই সঙ্গে সঙ্গে নিভে যায় তার ও তার স্বজনদের স্বপ্ন।  

হিমেলের বৃদ্ধ নানা মনিরুল ইসলামসহ তার স্বজনরা শোকার্ত কণ্ঠে বাংলানিউজকে জানান, হিমেলকে তারা শিশুকাল থেকে নিজে হাতে মানুষ করেছেন। হিমেলের মতো এমন সন্তান পাওয়া দুষ্কর। মেধাবী হিমেল নাটোরের স্কুল-কলেজে পড়াশোনা শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়াশোনার শেষ পর্যায়ে নিজেই শেষ হয়ে গেল। মোবাইল ফোনে তারা জানতে পারেন তাদের আদরের হিমেল ট্রাকচাপায় মারা গেছে। তারা যে ট্রাকটি হিমেলকে চাপা দিয়ে হত্যা করেছে সেই ট্রাকের চালক ও হেলপারের বিচার দাবি করেন।

এসময় বাকরুদ্ধ মা কথা বলতে চাননি। তবে তার ছেলের হত্যাকারী ট্রাক চালকের বিচার দাবি করেছেন। স্থানীয়রা জানান, হিমেল ছোট বেলা থেকেই পরোপকারী ছিলেন। পরের বিপদে তিনি নিঃস্বার্থভাবে ঝাপিয়ে পড়তেন সেবার জন্য। তার মৃত্যুতে অনেকেই কষ্ট পেয়েছেন। এছাড়া সকলেই তার মৃত্যুতে শোকাহত।  

বাংলাদেম সময়: ১৮১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০২২
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।