ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ মে ২০২৪, ০৫ জিলকদ ১৪৪৫

শিক্ষা

রাবিতে ছাত্র সংগঠনে জড়াতে নিষেধাজ্ঞা!

রাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২১
রাবিতে ছাত্র সংগঠনে জড়াতে নিষেধাজ্ঞা!

রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রতিটি হলে প্রক্টর দফতর থেকে একটি নোটিশ টাঙানো হয়েছে। নোটিশে প্রক্টর দফতর ছাত্রীদের সান্ধ্য আইন মেনে চলা, প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কোনো সংগঠনে যুক্ত না হওয়াসহ ১৭টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

 

এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থী ও ছাত্রনেতারা। তারা বলছেন, এর মাধ্যমে প্রশাসন ক্ষমতা দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের তাদের সুবিধামতো ব্যবহার করতে পারবে।  

তবে প্রশাসন বলছে, শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় তারা এসব আইনকে ‘স্মরণ’ করিয়ে দিচ্ছেন।  

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর লিয়াকত আলী স্বাক্ষরিত এ নোটিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ১১টি এবং ছাত্রীদের ছয়টি হলেই টাঙানো হয়। নোটিশে থাকা ১৭টি নির্দেশনায় বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ-১৯৭৩ এর বিভিন্ন ধারা ও উপধারাকে তথ্য সূত্রে ব্যবহার করা হয়েছে।  

প্রক্টর দফতরের জারি করা নোটিশে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নির্দেশনা হলো- শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ, হল সংসদ এবং বিভাগীয় সমিতি ছাড়া কোনো ক্লাব বা সমিতি বা ছাত্রসংগঠন গঠন করতে পারবে না। প্রক্টরের পূর্বানুমতি ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো মিটিং, পার্টি বা আপ্যায়ন অথবা বাদ্যযন্ত্র বাজানো যাবে না, বিশ্ববিদ্যালয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং সাইকেল ও যানবাহন সঠিকভাবে পার্কিং না করলে প্রক্টর যথাপোযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে্র প্রত্যেক শিক্ষক এবং অফিসারের প্রক্টরিয়াল ক্ষমতা থাকবে, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য যা যথাপোযুক্ত, সে ব্যবস্থা নিতে পারবেন।  

হলের আবাসিক ছাত্রদের নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত রাত ৯টা ও বছরের অন্য সময়ে রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত তার রুমে অবস্থান করতে হবে।  

শিক্ষার্থীদের বাইরে থাকার প্রয়োজন হলে আবাসিক শিক্ষকের অনুমতি নিতে হবে। হলের শিক্ষার্থীরা হল প্রাধ্যক্ষের কাছ থেকে ছুটি না নিয়ে হলে অনুপস্থিত থাকতে পারবে না। ছুটি নিতে হলে তাদের অন্তত একদিন আগে প্রাধ্যক্ষের কাছ থেকে ছুটি নিতে হবে।  

শিক্ষার্থীদের রুমে খাবার নেওয়া যাবে না। শুধুমাত্র অসুস্থ হলে রুমে খাবার নিতে পারবেন, তবে সে ক্ষেত্রে আবাসিক শিক্ষকের অনুমতি নিতে হবে। রাতের খাবারের পর ছাত্রদের রোল কল করতে হবে; প্রাধ্যক্ষ যে কোনো সময়ে এটি করতে পারবেন, রোল কলের সময় ছাত্রছাত্রীদের নিজ নিজ কক্ষে অবশ্যই থাকতে হবে। কোনো শিক্ষার্থী রোল কলের সময় অনুপস্থিত থাকলে আবাসিক শিক্ষক তার কাছে ব্যাখ্যা চাইবেন। শিক্ষার্থীর ব্যাখ্যায় আবাসিক শিক্ষক সন্তুষ্ট না হলে তিনি দণ্ড দিয়ে প্রাধ্যক্ষকে রিপোর্ট করবেন। অনুমতি ছাড়া কোনো মিটিং হলের ভেতরে করা যাবে না।

প্রক্টরের নোটিশের নির্দেশনাতে হলের আবাসিক ছাত্রীদের বিষয়ে বলা হয়, আবাসিক ছাত্রীরা সান্ধ্য আইন মেনে চলবে। শীতকালে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত এবং গ্রীষ্মকালে মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত নিজ নিজ হলে অবস্থান করবে।

প্রক্টর দপ্তরের এ নির্দেশনার পর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরা। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, বর্তমান সময়ে এসব আইন মানা যায় না। সান্ধ্য আইন এখনকার সময়ে চলে না। বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তচিন্তার জায়গা। এখানে সবাই তার জ্ঞানকে পরিস্ফুটিত করতে পছন্দ মতো সংগঠন তৈরি করবে ও কাজ করবে। সংগঠন না করলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃত্ব তৈরি হবে না। ফলে দেশে নেতৃত্ব সংকট দেখা দেবে।

শাখা ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মহব্বত হোসেন মিলন বলেন, এ নোটিশ দিয়ে প্রশাসন শিক্ষার্থীদের কোণঠাসা করে শিক্ষার্থীদের নিজের প্রয়োজনে ব্যবহারের রাস্তা উন্মোচন করতে চাচ্ছে। তাই প্রশাসনের এ নোটিশ প্রত্যাহার করে অবিলম্বে ক্ষমা চাওয়া উচিত।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর লিয়াকত আলী বলেন, এটা আগে থেকেই রেডি করা ছিল, আমার নিজস্ব লেখা না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটেই এটা আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশে বিধিবিধান আছে শিক্ষার্থীদের জন্য, এসব তাদের জানা থাকা দরকার। আমরা পালন করি-না করি, সেসব ভিন্ন বিষয়। অনেক শিক্ষার্থী বলে, আমার কোনো নিয়মকানুন নাই, বিধিবিধান নাই। কিন্তু যেগুলোর কালচার নেই, সেগুলো প্রয়োগ করা হবে না।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২১
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।