ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষা

অন্ধকারে সিলেটের লাখো গ্র্যাজুয়েট 

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৫ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০২১
অন্ধকারে সিলেটের লাখো গ্র্যাজুয়েট 

সিলেট: দ্বিতীয় ধাপে করোনার সংক্রমণ বেড়েছে বাংলাদেশে। এজন্য যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশ রেড জোনে রেখেছে বাংলাদেশের নাম।

এ কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন উন্নত দেশগুলোতে উচ্চ শিক্ষায় গমনেচ্ছুক শিক্ষার্থীরা। সেসব শিক্ষার্থীদের অনেকে বিশ্বিবিদ্যালয়ে সেশন জটের মতো অনিশ্চিত যাত্রাপথ। যে কারণে লাখো গ্র্যাজুয়েট অন্ধকার পথযাত্রী।

শিক্ষার্থীদের অনেকে আইইএলটিএস কোর্স সম্পন্ন করেও থাকতে হচ্ছে অপেক্ষায়। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে অনেক দূতাবাস কার্যক্রমও বন্ধ রেখেছে। এ অবস্থায় এসব গ্র্যাজুয়েটরা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে তিমিরে হাবুডুবু খাচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমনিতেই সিলেটে বিদেশমুখীর প্রবণতা বেশি। সেইসঙ্গে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের মানসিকতায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিদেশযাত্রার প্রবণতা বেড়েছে। গ্র্যাজুয়েশন করা শিক্ষার্থীরা আইইএলটিএস কোর্স সম্পন্ন করার পর গমনেচ্ছু সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসে আবেদনের জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে সরকার গত এপ্রিল থেকে ‘লকডাউন’ দিয়েছে। ওই সময় থেকে ব্রিটিশ কাউন্সিল ও আইডিপি আইইএলটিএস পরীক্ষা নেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছে। এতে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী পরীক্ষা বিড়ম্বনায় পড়েছেন। এ কারণে অনেকে তাদের কাঙ্ক্ষিত সেশন ও দেশে যেতে পারছেন না বলেও জানিয়েছেন।

ডেনমার্কে আবেদনকারী শিক্ষার্থী রাজেল আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী অষ্ট্রেলিয়া, এস্ট্রোনিয়া, পোল্যান্ড, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইস্তোনিয়াসহ বিভিন্ন দেশে আবেদন করে রেখেছেন। সম্প্রতি রেড জোন থাকলেও যুক্তরাজ্য নিজ খরচে কোয়ারেন্টিনে থেকে শিক্ষার্থীদের সেদেশে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছে। তা সম্ভব হয়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রচেষ্টায়। কিন্তু অনেক দেশে উচ্চ শিক্ষার্থে গমনেচ্ছুক শিক্ষার্থীরা আবেদন করে অপেক্ষমান রয়েছেন। তাদের এমন যাত্রা প্রায় অনিশ্চিত। বিশেষ করে এস্ট্রোনিয়ায় আবেদন করতে গেলে ভারতের দূতাবাসে যেতে হয়। যা সহজযোগ্য নয়। এছাড়া করোনা পরিস্থিতির কারণে বন্ধ থাকা ডেনমার্কের দূতাবাসের কার্যক্রম সীমিত পরিসরে খুলে দেওয়ার দাবিতে সংবাদ সম্মেলনও করেছি।

উচ্চ শিক্ষায় ইংরেজি কোর্স প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান আইসাইটের শিক্ষার্থী শামীম আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, আইইএলটিএস পরীক্ষার পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণের পর যখনই পরীক্ষা দেব তখনই দেশব্যাপী ‘লকডাউন’ ঘোষণা করা হয়। এতে ব্রিটিশ কাউন্সিলের বাংলাদেশ শাখা ও আইডিপি সব ধরনের পরীক্ষা গ্রহণ স্থগিত করে দেয়। সেই বিড়ম্বনায় এখনও আটকে আছি। আমার মতো অন্তত অর্ধ লাখ শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষার্থে বিদেশগমণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।  

জুনেদ আহমদ নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আইইএলটিএস পরীক্ষার জন্য কঠিন প্রস্তুতি নিতে হয়। কমপক্ষে ১৬/১৭ ঘণ্টা পড়ালেখা করতে হয়। এমতাবস্থায় প্রস্তুতি নেওয়ার পরও পরীক্ষা না হওয়াতে আমরা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। কবে নাগাদ এ পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটবে তাও জানা নেই।  

যুক্তরাজ্যে বসবাসরত কনসালটেন্ট জাকির হোসেন বলেন, করোনা ভাইরাসে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশকে রেড জোনে রেখেছে ব্রিটিশ সরকার। যে কারণে বিগত দিনে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। তবে এখন নিজ খরচে কোয়ারেন্টিনে থেকে শিক্ষার্থীদের সেদেশে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ডেনমার্ক দূতাবাস ও ভিসা আবেদন কেন্দ্র খুলে দেওয়ার দাবিতে মঙ্গলবার (৮ জুন) সিলেটে সংবাদ সম্মেলন করেন উচ্চ শিক্ষার্থে বিদেশ গমনেচ্ছুক শিক্ষার্থীরা। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আবু আসলাম আল মাহদী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- রাজেল আহমদ, ইফ্ফাত আরা ইসলাম, মহিউদ্দিন মাহবুব, সুলতান আহমেদ, কে এ ফয়সল, আব্দুল্লাহ এ জুবায়ের, মো. শাহরিয়ার হোসেন মেহেদী, নুরুল আমিন, শাহ মিজানুর রহমান, জুবায়ের হোসেন জুসেফ প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলন করে করোনা ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশে বন্ধ থাকা ডেনমার্ক দূতাবাস ও ভিসা আবেদন কেন্দ্রের কার্যক্রম সীমিত পরিসরে চালু করার দাবি জানিয়েছেন।

তারা বলছেন, ‘লকডাউন’র কারণে ডেনমার্ক দূতাবাস ও ভিসা আবেদন কেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তারা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন। এজন্য শিক্ষা ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে তারা আবেদনও জানিয়েছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের রেড ক্যাটাগরির বাইরে রাখার বিষয়েও ব্যবস্থা নিতে দাবি তুলেছেন তারা।

লিখিত বক্তব্যে ভোক্তভোগীরা জানান, ডেনমার্কের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেপ্টেম্বর সেশনে ক্লাস নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যে দেশটির বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার ফি দিয়ে ভর্তি নিশ্চিত করেছেন তারা। যে কারণে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে অংশ নিতে এখন থেকেই ভিসার আবেদন করতে হবে। কিন্তু দূতাবাস ও ভিসা আবেদন কেন্দ্র বন্ধ থাকার কারণে যথা সময়ে ভিসা আবেদনে ব্যর্থ হলে তাদের এক বছর সময়ের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিও হবে। এ কারণে শত শত শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার পথে রয়েছে। পাশাপাশি আর্থিক ও মানসিকভাবেও তারা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন।

শিক্ষার্থীরা জানান, ডেনমার্ক বাংলাদেশকে অনিরাপদ চিহ্নিত করে রেড ক্যাটাগরির আওতাভুক্ত করে রেখেছে। এ তালিকা সংশোধিত হয়ে শিগগিরই রেড ক্যাটাগরির বাইরে আসতে সক্ষম হবে বলে বিশ্বাস। তাই আমরা সময় মতো ভিসা কার্যক্রম সম্পন্ন করে ভিসা নিশ্চিত করে রাখতে চাই, যাতে রেড ক্যাটাগরি আওতামুক্ত হলেই সেখানে পৌঁছানো যায়। পাশাপাশি এখনই ভিসা কার্যক্রম শুরু করা না গেলে আসছে গ্রীষ্ম মৌসুমে ডেনমার্কের ছুটি শুরু হলে সব অফিস বন্ধ থাকবে, এতে শিক্ষার্থীদের আরও সংকটের মধ্যে পড়ার শঙ্কাও করছেন তারা। এজন্য তারা ভিসা প্রক্রিয়াকে জরুরি পরিসেবার আওতায় এনে দূতাবাস ও ভিসা সেন্টার খুলে দিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি আবেদন করেছেন। তাই স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে ডেনমার্ক দূতাবাস ও ভিসা আবেদন কেন্দ্র চালু করা এবং অন্যান্য দূতাবাসগুলোতেও কার্যক্রম স্বাভাবিক করার আহ্বান শিক্ষার্থীদের।  

বাংলাদেশ সময়: ০২০৩ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০২১
এনইউ/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।