ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষা

অননুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ, খতিয়ে দেখছে মন্ত্রণালয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২০
অননুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ, খতিয়ে দেখছে মন্ত্রণালয়

ঢাকা: উত্তরাঞ্চলের জেলা নীলফামারীর সৈয়দপুরে বঙ্গবন্ধুর নামে একটি অননুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ নিয়ে চটকদার বিজ্ঞাপন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন বিষয় খতিয়ে দেখবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয় বলছে, বঙ্গবন্ধুর নামে কোনো প্রতিষ্ঠান স্থাপনের উদ্দেশ্য নিয়ে কোনো মহল সুবিধা নেওয়ার পাঁয়তারা করছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সৈয়দপুরে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়ক সংলগ্ন বাইপাস রোডে ‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে পত্রিকায় চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে চাকরি প্রার্থীদের আকৃষ্ট করছে কথিত এই বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা। কথিত ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ফেসবুক পেজ খুলেও সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বিভিন্ন গণমান্য ব্যক্তিকে নিয়ে ছবি পোস্ট করা হচ্ছে।

কথিত ওই বিশ্ববিদ্যালয়টির বিষয়ে বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) স্পষ্ট জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় নামে কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্ব নেই। এই নামে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় সরকারের অনুমোদনপ্রাপ্তও নয়।

এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় কথিত এই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সতর্ক করেছে। মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ওই নামে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন নেই। বঙ্গবন্ধুর নামে বিশ্ববিদ্যালয় করে হয়তো একটি মহল সুবিধা নেয়ার পাঁয়তারা করছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, কথিত বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন কর্তৃক স্বীকৃত নয়। এই বিজ্ঞাপনের ভিত্তিতে কোনো রকমের কর্মকাণ্ড না করার জন্য সবাইকে সতর্ক করা হলো। বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয় খতিয়ে দেখছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মুজিব শতবর্ষে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনে গত ১৭ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বোধন করেন সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য রাবেয়া আলীম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি। কথিত বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চ্যান্সেলর (ভারপ্রাপ্ত) ও বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. এ বি এম শরিফুজ্জামান শাহ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আখতার হোসেন বাদল, সাধারণ সম্পাদক মো. মহসিনুল হক মহসিন উপস্থিত ছিলেন।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোতে দেখা গেছে প্রতিষ্ঠাকাল ২০১৪। চলতি বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। সেই অনুষ্ঠানেও ছিলেন সংসদ সদস্য রাবেয়া আলীমসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও আওয়ামী লীগ নেতারা।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নজরে এসেছে ইউজিসি ও মন্ত্রণালয়ের। সম্প্রতি একটি পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, ২০১৯ সালের ২০ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্মারকে সরকারি ও ইউজিসি বিধি মোতাবেক বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগ দেওয়া হবে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর-১; রেজিস্ট্রার-১, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ বিভিন্নপদে জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে।

এছাড়াও বাংলা, ইংরেজি, আইন, অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, সমাজকর্ম, গণিত, পরিসংখ্যান, পদার্থ, রসায়ন, ব্যবস্থাপনা, মার্কেটিং, হিসাববিজ্ঞান, বিবিএ, সিএসই, ইইই, এমই, টিই বিষয়ে একজন করে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক নিযোগ দেওয়া হবে।

আর প্রতিটি পদের জন্য ৫০০ টাকার অফেরতযোগ্য ব্যাংক ড্রাফট দিয়ে আবেদন করতে বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০’ অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতি প্রত্যেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছর মেয়াদে ভিসি, প্রো-ভিসি এবং কোষাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেন। কাজেই এসব পদে কোন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কাউকে নিয়োগ প্রদান করলে তা হবে সম্পূর্ণ আইন পরিপন্থী। এছাড়া উপাচার্যবিহীন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রোগ্রামের প্রদত্ত সার্টিফিকেটও অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে।

ইউজিসি’র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় নামে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব সম্পর্কে কমিশন অবগত নয়। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় নামক কোনো প্রকল্প প্রস্তাবও ইউজিসিতে পাঠানো হয়নি।

এসব বিষয়ে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি রাবেয়া আলীমের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

আর কথিত বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চ্যান্সেলর (ভারপ্রাপ্ত) ও বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. এ বি এম শরিফুজ্জামান শাহও ফোন রিসিভ করেননি।

বিশ্ববিদ্যালয়টির জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও চাকরিপ্রত্যাশীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সর্তক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে ইউজিসির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা ও অনুমোদিত প্রোগামের তালিকা দেখতে আহ্বান জানিয়েছে ইউজিসি।

আরও পড়ুন: ‘অদৃশ্য’ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা: ইউজিসি

বাংলাদেশ সময়: ২০১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২০
এমআইএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।