ঢাকা, সোমবার, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ মে ২০২৪, ০৪ জিলকদ ১৪৪৫

শিক্ষা

বিদেশে ছাপানো ৪৭ লাখ বই এখনো পায়নি শিশুরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০১৭
বিদেশে ছাপানো ৪৭ লাখ বই এখনো পায়নি শিশুরা বই উৎসবের ফাইল ছবি

ঢাকা: নতুন বছরের পহেলা তারিখ ঘটা করে হয়েছে বই উৎসব। কিছু কিছু জায়গায় নতুন চকচকে বই পৌঁছে গেছে বলে প্রাণোচ্ছলতাও দেখা যায় উৎসবে। তবে উৎসবের এক সপ্তাহ পেরুলেও এখনও বিদেশে ছাপানো ৪৭ লাখ বই অনেক শিশুর হাতে পৌঁছায়নি।  

আবার দেশি প্রকাশকদের অনেকে সময়মতো বই সরবরাহ করতে না পারায় ৭২টি প্রতিষ্ঠানের বিল আটকে দেওয়া হয়েছে। নিম্নমানের কাগজ সরবরাহের কারণে বিল আটকে দেওয়া হয়েছে চারটি কাগজকলের।

এদিকে পাঠ্যবইয়ে ভুল ও অসংগতির কারণে সমালোচনার মুখে পড়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এসব তদন্তে এরইমধ্যে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার।

এনসিটিবি সূত্র জানা যায়, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও চট্টগ্রামের কয়েকটি এলাকায় প্রাথমিক স্তরের শিশুরা সব বই পায়নি। পরিস্থিতি সামাল দিয়ে ৩৮ জেলার মজুদ বই পাঠিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে দু’একটি করে বই দিয়ে ১ জানুয়ারি ‘দায়সারা’ পাঠ্যপুস্তক উৎসব করা হয়। এজন্য ট্রাক ভাড়া বাবদ ৭ লাখ টাকা খরচ করতে হয়েছে এনসিটিবিকে।

কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতের শীর্ষাসাই বিজনেস নামের একটি প্রতিষ্ঠান মুম্বাই ও পুনেতে ৪৭ লাখ বই ছাপার কাজ করে, যা প্রাথমিকের মোট বইয়ের প্রায় ৪ শতাংশ। দরপত্র অনুযায়ী ডিসেম্বরের মধ্যে এসব বই পৌঁছানোর কথা ছিলো।

এ বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠ্যবইগুলো খালাস হয়েছে। শিগগিরই স্কুলে পৌঁছাবে। যদিও এনসিটিবির বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, ছাপানো বইগুলো কোথায় আছে, তা এখনও অস্পষ্ট।  

এ বছর সারাদেশের প্রাক-প্রাথমিক, মাধ্যমিক, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ৪ কোটি ২৬ লাখ ৩৫ হাজার ৯২৯ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩৬ কোটি ২১ লাখ ৮২ হাজার ২৪৫টি বই বিনামূল্যে বিতরণের কথা জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রাথমিক স্তরের ১১ কোটি ৫৫ লাখ ২৬ হাজার ৯৫২টি বই ছাপানো হয়েছে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে। দেশের পাশাপাশি এবার ভারত ও চীনে প্রাথমিক স্তরের বই ছাপানো হয়েছে।  

জানা যায়, বই উৎসবের এক সপ্তাহ পেরুলেও নোয়াখালী শহর ও নয়টি উপজেলায় শিক্ষার্থীরা একটি বা দু’টি করে বই পেয়েছে। জেলা শহরের লক্ষ্মীনারায়ণপুর পৌর আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হরিনারায়ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাইজদী বালিকা বিদ্যানিকেতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, অরুণ চন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাইজদী পিটিআই-সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে এ তথ্য জানা যায়।

এদিকে বই ছাপার জন্য কেনা এবার ম্যাপ, আল নুর, হাক্কানি ও গাজীপুর পেপার মিল নামে চারটি প্রতিষ্ঠানের কাগজ ছিল নিম্নমানের। কাগজের উজ্জ্বলতা, ছোট আকার ও পুরুত্ব কম ছিলো। এ কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩৬ কোটি টাকার বিল আটকে দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে দরপত্র অনুযায়ী সময়মতো বই না দেওয়ার কারণে ৭২টি মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের ৩৬ কোটি ১৪ লাখ টাকার বিল আটকে দেওয়ার তথ্য জানা গেছে।  

এনসিটিবি সূত্র জানায়, দেশি প্রতিষ্ঠান সরকার প্রিন্টার্স নির্ধারিত সময়ে বই দিতে পারেনি। গত সপ্তাহের শেষ দিন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি চুক্তি অনুযায়ী নয় লাখ বই দিতে ব্যর্থ হয়েছে। পৌনে দুই কোটির বেশি বই ছাপার কাজ নিয়ে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত ২৫ শতাংশ বইও দিতে পারেনি (৪০ লাখ বই দিয়েছে) প্রতিষ্ঠানটি।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০১৭
জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।