ঢাকা, মঙ্গলবার, ৪ আষাঢ় ১৪৩১, ১৮ জুন ২০২৪, ১০ জিলহজ ১৪৪৫

শিক্ষা

নতুন বইয়ে মজেছে শিশুরা

ইমতিয়াজ আহমেদ জিতু, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৬
নতুন বইয়ে মজেছে শিশুরা ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কুমিল্লা: বছরের অন্যান্য সময়ের মতো খুদে শিক্ষার্থীদের স্কুলের সময় এগিয়ে আনা হয়নি, দেওয়া হয়নি বিশেষ নির্দেশনাও।

তবুও শীতের সকালে বিছানার আরাম ছেড়ে, কুয়াশার চাদরকে থোড়াই কেয়ার করে দলে-দলে সময়ের আগেই স্কুলে ঠিক হাজির হয়ে যাচ্ছে কুমিল্লার বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা।



এমনকি ক্লাস ও শিক্ষকদের তোড়জোড় তেমনভাবে শুরু না হলেও সংখ্যায় বেড়ে গেছে শিশুদের উপস্থিতি।

মূলত নতুন বইয়ে মজেছে শিশুরা। নতুন বই নিয়ে সাজগোজ করে সকাল-সকাল তাই এখন তাদের স্কুলে আসা।

এদিকে, এখনো অনেক শিশু সব বই হাতে পায়নি। মান নিয়ে রয়েছে অভিযোগ। তবুও ক্লাস হোক, না হোক স্কুল কামাই করতে রাজি নয় কেউই। পাছে বাকি বই অন্যরা পেলেও নিজের না পাবার ভয় কাজ করছে সবার মধ্যে।

তাই সকালে এসেই স্কুলের শ্রেণিকক্ষ, আঙিনা, মাঠে হৈ-হুল্লোড়ে মেতে উঠছে কোমলমতি শিশুরা। কখনো দল বেধে উল্টে-পাল্টে নতুন বইগুলো। কার বইয়ের চেয়ে কার বই সুন্দর এই তুলনা নিয়েও বন্ধুদের মধ্যে চলছে খুঁনসুটি।

আবার শিক্ষক আসামাত্রই মুহূর্তে শ্রেণিকক্ষে তাদের তড়িৎ উপস্থিতি। মাঝে-মধ্যেই শিশুদের কলরব ভেসে আসছে শ্রেণিকক্ষ থেকে। অনেক শিশুই বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে অনেকটাই ধ্যানমগ্ন হয়ে আছে। শিক্ষার্থীদের এমন সরব উপস্থিতি শিক্ষকদের মধ্যে এনে দিয়েছে ভিন্ন আমেজ।

রোববার (১০ জানুয়ারি) কুমিল্লার কয়েকটি স্কুল ঘুরে এমন চিত্রের দেখা মেলে।

কুমিল্লা নগরীর ১৫নং ওয়ার্ডের বজ্রপুর মৌলভীপাড়ার  বজ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্কুলের আশেপাশের অধিকাংশ বাসিন্দাই নি¤œবিত্ত। আশপাশের এসব বাসিন্দাদের সন্তান-সন্ততিরাই পড়ে এ স্কুলে। সাত-সকালে ওই স্কুলে গিয়ে দরিদ্র পরিবারের খুদে শিক্ষার্থীদের চোখে-মুখে দেখা গেলো নতুন বইয়ের প্রতি যুগপৎ মুগ্ধতা ও মনোনিবেশ।

এ স্কুলের সবগুলো শ্রেণিকক্ষেই এখন শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতি। শীতের সকাল হলেও অনেকের গায়েই শীতের পোশাক নেই। কিন্তু সেদিকেও তাদের ভ্রুক্ষেপও নেই। ক্লাসে বসে প্রত্যেকেই মগ্ন তার নতুন বইয়ের পাতায়।

এ স্কুলেরই ছাত্রী সুমি আক্তার। দ্বিতীয় শ্রেণির এ খুদে শিক্ষার্থী তার ইংরেজি বইয়ের একটি কবিতা নিয়ে ব্যস্ত।   নতুন রঙিন বইয়ের অপরিচিত কবিতার প্রতিই তার এতোই মনোযোগ, কখন ক্লাস শেষ করে শিক্ষক চলে হেছেন সে খেয়ালও নেই তার।

তার মতোই সুমি, নাফিসা, রোজি ও ফাতেমা, সবারই এখন চূড়ান্ত মনোযোগ নতুন বইয়ের রঙিন পাতার কালো হরফের দিকে।

স্কুল ঘুরে দেখা গেলো, শুধু ক্লাস নয়, খেলার মাঠেও শিশুদের অনেকের হাতে বই। বই নিয়ে একে অপরের সঙ্গে ‍আলাপ জমিয়েছে তারা। কার বইতে কি গল্প, ছড়া কিংবা কার্টুন আছে; এ ক’দিনেই এসবে কার কতখানি দখল তা নিয়ে চলছে তারা নানান আলোচনা।

নতুন বই যে এসব শিশুদের বদলে দিয়েছে তা ধরা পড়েছে শিক্ষকদের চোখেও।

বজ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আনোয়ারা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ক্লাসে ছোট বাচ্চাদের সামলানো বেশ কষ্টসাধ্য। কিন্তু দেখেন, নতুন বই হাতে পাওয়ার পর তাদের লাফালাফি,  হৈ-হুল্লোড় আগের মতো নেই বললেই চলে। শিশুরা বড় শিক্ষার্থীদের চেয়ে অনেক শান্ত হয়ে গেছে। তাদের মনোযোগ জুড়ে রয়েছে নতুন বই।

প্রায় একইরকম চিত্র কাঁটাবিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও। টিফিনের সময়ে গিয়ে মাঠে দেখা গেলো না দুরন্ত খুদে শিক্ষার্থীদের। খোঁজ করে জানা গেলো, কেউই  পেট ব্যথার অজুহাতে ছুটি নিয়ে, চকোলেট বা আইসক্রিম কিনতে যায়নি। নতুন বইয়ের যাদুতে মগ্ন হয়ে শ্রেণিকক্ষেই আছে তারা। ফলে শিক্ষকরাও বেশ আনন্দিত। এখন অন্তত শিশুদের নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা নেই তাদের।

কথা হয় এ স্কুলের প্রথম শ্রেণিতে সদ্য ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী সোহানের মা রাশেদা আক্তারের সঙ্গে। তিনি জানান, কি স্কুল, কি বাড়ি সব জায়গাতেই এখন সোহানের হাতে থাকছে তার নতুন তিনটি বই। বইগুলো বাঁধাই করে দেওয়া হয়েছে। বইয়ের কারণে নতুন জামা কিংবা আইসক্রিম-চকোলেটের আবদার আগের মতো নেই তার। এরইমধ্যে সোহান নতুন বই থেকে ছড়া পড়ে শুনিয়েছে তার দাদা-দাদীকে।

এদিকে, নতুন বইয়ের আনন্দে শিশুরা মাতোয়ারা হলেও ছাপা ও কাগজের মান নিয়ে অসন্তুষ্টি রয়েছে অভিভাবক ও শিক্ষকদের মধ্যে।

অনেকেরই অভিযোগ, বেশিরভাগ বইয়ের ছাপার মান খুবই নি¤œমানের। অনেক পৃষ্ঠায় লেখাও অস্পষ্ট। বইয়ের মলাটের কাজগ পাতলা ও নি¤œমানের। এমনকি কিছু কিছু বইয়ের ভেতরে অনেক পৃষ্ঠাও নেই। এ বই শিশুরা সারাবছর ঠিক রাখতে পারবে কিনা সে দুশ্চিন্তাও করছেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই স্কুলের এক শিক্ষক বলেন, শিশুরা এমনিতেই চঞ্চল স্বভাবের হয়। তারা বই নিয়ে নাড়াচাড়াও বেশি করে। তাই বইয়ের মলাট ভালো মানের হওয়া উচিত ছিল। আমার মনে হয় না এসব বইয়ের মলাট ২/৩ মাস টিকবে। ভেতরের পৃষ্ঠার কাগজের মানও খারাপ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত এসব বিষয় নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া।

শৈলরাণী দেবী নামে ওই স্কুলের শিক্ষার্থী মাহফুজের মা সালিমা আক্তার বলেন, নতুন বছরে নতুন বই শিশুদের হাতে দেখতে পেয়ে আমরাও খুশি। কিন্তু বইগুলো মজবুত ও ভালো কাগজে ছাপানো উচিত ছিল।

অপরদিকে, এখনো বিভিন্ন স্কুলে অনেক শিশুই একত্রে সব নতুন বই হাতে পায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।

শহরের বিভিন্ন স্কুলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা তিনটি করে বই হাতে পেয়েছে। তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বাংলা ও বিজ্ঞান ছাড়া বাকি চারটি বই পেয়েছে। চতুর্থ শ্রেণি ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা  বিজ্ঞান, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা ছাড়া বাকি তিনটি বই হাতে পেয়েছে। তবে বাকি বইগুলো কিছুদিনের মধ্যেই দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্কুলের শিক্ষকরা।

এ বিষয়ে কাঁটাবিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফাতেমা বিশ্বাস বাংলানিউজকে জানান, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে তিনি কথা বলেছেন। কয়েকদিনের মধ্যেই বাকি বইগুলো তারা হাতে পাবেন।

নতুন বই নিয়ে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেণ, এক সপ্তাহের মধ্যে বাকি বইগুলো শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।

ছাপা ও কাগজের মানের বিষয়ে তিনি বলেন, ছাপার কাজগুলো টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদাররা করে থাকেন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আমরা লিখিতভাবে জানাব।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৬
এসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।