ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

শিক্ষা

সরকারি স্কুলের জমি উদ্ধারে হিমশিম

ইসমাইল হোসেন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৫
সরকারি স্কুলের জমি উদ্ধারে হিমশিম সংগৃহীত

ঢাকা: রাজধানীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর বেদখলকৃত জমি উদ্ধার কাজে হিমশিম খাচ্ছে সংসদীয় উপ-কমিটি। বিদ্যালয়গুলোর জমি সংরক্ষণের উদ্যোগ না থাকায় উদ্ধারে এই জটিলতা বলে জানিয়েছেন উপ-কমিটির আহ্বায়ক সংসদ সদস্য আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন।



জমি দখল হয়েছে এমন ৫৭টি বিদ্যালয়ের তালিকা নিয়ে মাঠে নামা সংসদীয় উপ-কমিটি সরকারি বিদ্যালয়ের জমি সংরক্ষণে ‘ভূ-সম্পত্তি উইং’ গঠন করা প্রয়োজন বলে মনে করে।

এ বিষয়ে গত ডিসেম্বরে উপ-কমিটির আহ্বায়ক আ খ ম জাহাঙ্গীর বাংলানিউজকে জানিয়েছিলেন, ইতোমধ্যে তারা ১৭টি বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছেন। কক্ষ দখলের মতো ছোটখাটো সমস্যাগুলো স্থানীয়ভাবে সমাধান করলেও জমি উদ্ধার নিয়ে নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।

দখল-বেদখলের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার (ডিপিও) তৈরি করা প্রতিবেদন গত ১৮ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়।

ঢাকা মহানগরীর ২৯৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৫৭টি বিদ্যালয়ের জমি বেদখলে রয়েছে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

ওয়াসা, পুলিশ ও আনসার ক্যাম্প, ছাড়াও বস্তি, ক্লাবঘর, কমিউনিটি সেন্টার, কাঁচাবাজার বসিয়ে এসব বিদ্যালয়ের জমি দখলে নেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দখল করে বসেছে বিদ্যালয়ের ক্লাসরুম, মাঠ ও ভবন। রয়েছে মসজিদ, ঈদগাঁহ ইত্যাদি।

গত ৯ নভেম্বর ঢাকা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বৈঠকে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়।

জমি ও শ্রেণিকক্ষ বেদখল হওয়া ১৭টি বিদ্যালয় পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে জমি উদ্ধার সংক্রান্ত সংসদীয় উপ-কমিটির প্রধান আ খ ম জাহাঙ্গীর বলেন, বিদ্যালয়গুলোতে অনেক সমস্যা রয়েছে। দু’একটি বিদ্যালয়ের দখলে থাকা শ্রেণিকক্ষ খুলে দেওয়া হলেও জমিসংক্রান্ত জটিলতা কাটতে সময় লাগবে।

আ খ ম জাহাঙ্গীর বলেন, ব্যক্তি মালিকানার জায়গায় প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়গুলো সরকারি হলেও জমিগুলো সরকারের অধীনে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এছাড়া কোথাও কোথাও পূর্ব পুরুষরা স্কুলের জন্য মৌখিকভাবে জায়গা দিলেও তাদের ছেলে-মেয়েরা এখন জমি ছাড়ছেন না। কোথাও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি হাইস্কুল বা কলেজ দখলে নিয়েছে।

মিরপুর পল্লবীর বনফুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা জিয়াউর রহমান কলেজের নামে কাগজ লিখে দেওয়া হয়েছে বলে জানান কমিটির প্রধান।

গাবতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির জমি দানকারীর ছেলেরা ছাড়ছে না। এমন বিষয় রয়েছে বাংলাবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও।

বিদ্যালয়ের জমি সরকারি করা বা রেকর্ড না করা, খাজনা না দেওয়া ছাড়াও মনিটর করার ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের কোনো পদক্ষেপ ছিল না বলে জানান আ খ ম জাহাঙ্গীর।

সরকারি বিদ্যালয়গুলোর জমি সংরক্ষণে স্থায়ী উদ্যোগ দরকার জানিয়ে তিনি বলেন, এজন্য ‘ভূ-সম্পত্তি উইং’ গঠন করার সুপারিশ করা হয়েছে।

আটটি বিদ্যালয় পরিদর্শনের সুপারিশ পেয়েছেন জানিয়ে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শিরীন আক্তার শুক্রবার বাংলানিউজকে বলেন, সংসদীয় উপ-কমিটির সুপারিশ জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হবে।

৫৭টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ‘বেশি সমস্যায়’ থাকা ২৮টি বিদ্যালয় উপ-কমিটি পরিদর্শন করবে বলে জানান শিরীন আক্তার।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, সংসদীয় উপ-কমিটির সুপারিশের আলোকে জেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

জাতীয় সংসদের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ১২ ডিসেম্বরের বৈঠকে ঢাকা মহানগরীর বেদখলকৃত জমি উদ্ধারে পদক্ষেপ গ্রহণে সুপারিশ প্রদান করতে আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট সংসদীয় উপ-কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটির সদস্য রয়েছেন- সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু, আলী আজম, মোহাম্মদ ইলিয়াছ এবং উম্মে রাজিয়া কাজল।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।