ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

শিক্ষা

জাবি অধ্যাপক ফারজানার দায়মুক্তিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

জাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৮ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০২৩
জাবি অধ্যাপক ফারজানার দায়মুক্তিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগগুলোর তদন্ত না করে বিশেষ অডিটে দায়মুক্তি দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম দুই মেয়াদে ৮ বছর উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেছেন।

দ্বিতীয় মেয়াদে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগের সঙ্গে যোগ হয় অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের সংশ্লিষ্টতা।  

ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থী দুর্নীতি ও অনিয়মের বিচার চেয়ে আন্দোলন চালিয়ে গেলেও বহাল তবিয়তে উপাচার্যের চেয়ারে ছিলেন তিনি।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তবে সম্প্রতি জানা গেছে কোনো তদন্ত নয় একটি বিশেষ অডিটের মাধ্যমে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে এই উপাচার্যকে। সঙ্গে তিনি পদ পেয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদে।

নিরীক্ষা প্রতিবেদনের একটি কপি বাংলানিউজের হাতে এসেছে। শিক্ষাভিত্তিক একটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর কর্তৃক প্রকাশিত বুকলেটের বরাতে বিশেষ অডিটটি করা হয়েছে বলে এতে বলা হয়েছে।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, অপরিকল্পিত মাস্টারপ্ল্যান অনুমোদন, অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের অনিয়ম, প্রকল্পের টেন্ডার ও হিসাবসংরক্ষণ কাজে অনিয়ম এবং পিএইচডি ডিগ্রী ও প্রশাসনিক পদে দায়িত্ব প্রদানে অনিয়মসহ মোট ১০টিরও বেশি অভিযোগের পর্যালোচনা করা হয়েছে।

অপরিকল্পিত মাস্টারপ্ল্যান অনুমোদন নিয়ে ৫টি অভিযোগের মধ্যে রয়েছে অংশীজনদের পরামর্শ ছাড়াই মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন, চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রণয়নে সিনেট ও সিন্ডিকেটের অনুমোদন না থাকা, টেন্ডার না করে কনসাল্টিং ফার্ম নিয়োগ, মাস্টারপ্ল্যানের থিমেটিক ম্যাপ না করা ও ভূতাত্ত্বিক জরিপ এবং পরিবেশ সমীক্ষা না করা।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ছিল অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণকাজ ও হিসাব সংরক্ষণ সংক্রান্ত অনিয়ম নিয়ে । এতে মোট ১৬ টি অভিযোগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ই-টেন্ডার না করা, ব্যক্তিগত সচিবকে তদারক কমিটিতে রাখা, শিডিউল ছিনতাই হওয়ার পরেও পুন:শিডিউলের সুযোগ না দেওয়া, কেবল একটি ব্যাংকের মাধ্যমে শিডিউল বিক্রি, ডিপিপিতে বাউন্ডারি ওয়াল ও গ্যাস সংযোগের কথা থাকলেও কার্যাদেশে তা না থাকা, দাপ্তরিক প্রাক্কলিত ব্যয় প্রণয়ন না করা, পিপিআর অনুযায়ী দরপত্র আহ্বানের বিজ্ঞপ্তি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পত্রিকায় প্রকাশ না করা, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র লঙ্ঘন করে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কর্মকর্তাকে প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়া ও বহুল আলোচিত দুই কোটি টাকার ঈদসালামি প্রদানের বিষয়।

পিএইচডি ডিগ্রি ও প্রশাসনিক পদে দায়িত্ব প্রদানে অনিয়মগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো - পিএইচডি কোর্সে ভর্তির শর্ত লঙ্ঘন করে অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের স্বামী আখতার হোসেনকে প্রত্নতত্ব বিভাগে ভর্তি করে অবৈধভাবে স্কলারশিপ প্রদান, ও উপাচার্যের নিজের সভাপতিত্বে স্বামীকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান, নিজের একান্ত সচিবকে তদারক কমিটিতে রাখা, বিধি লঙ্ঘন করে অন্য অনুষদের শিক্ষককে আইন অনুষদের ডিন নিয়োগ, একাডেমিক কাউন্সিলের অনুমোদন ছাড়াই ইন্সটিটিউট অব রিমোট সেন্সিংয়ের প্রোগ্রাম পরিচালনা।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে প্রায় প্রত্যেকটি অভিযোগের বিপরীতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের জবাবকেই চূড়ান্ত করা হয়েছে। উপাচার্যের একান্ত সচিবকে প্রকল্পের তদারক কমিটিতে রাখার বিপরীতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক দেয়া ভুল তথ্যই গ্রহণ করা হয়েছে। এখানে দাবি করা হয়েছিল পিপিআর অনুযায়ী তদারক কমিটি নামে কোন কমিটি নাই।  

তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় তদারক কমিটি সহ প্রতিটি নির্মানাধীন স্থাপনার বিপরীতে তদারক কমিটি প্রচলিত আছে। কিছু বিষয়ে আর্থিক ক্ষতি হয়নি মর্মে দোহাই দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আখতার হোসেনের পিএইচডিতে ভর্তির সময় ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষ থাকায় উক্ত সময় অডিটের বাইরে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে তদন্ত না হয়ে অডিট হওয়ায় ক্ষুব্ধ সেসময়ের আন্দোলনকারীরা। তারা বলছেন এর অনেকগুলো অনিয়ম ও অনেকগুলো দুর্নীতি আছে। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত না করে গোপনে এরকম একটি অডিট পর্যালোচনা করাকে দায়মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা বলে অভিযোগ তাদের। তাদের সবচেয়ে বড় আপত্তি ব্যাংক বিবরণী যাচাই করে ২ কোটি টাকা ঈদ সালামির অভিযোগ সঠিক নয় বলে মন্তব্য করাতে।

এদিকে গত ৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনে আসলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানান ইউজিসি গঠিত তদন্ত কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে তবে দুদক বিষয়টি দেখবে।

ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক আলিফ মাহমুদ বলেন, আমরা অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিপীরণ ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়েছিলাম। কিন্তু তদন্ত তো দূরের কথা আমাদের দাবিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বিশেষ অডিটের মাধ্যমে তাকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ফারজানা ইসলাম ক্ষমতার ছত্রছায়ায় বিশ্ববিদ্যালয়কে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির আখড়ায় পরিণত করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের ভিত্তিতে তাকে বিচারের মুখোমুখি দেখার যে আশা দেশবাসীর ছিলো তা দায়মুক্তির মাধ্যমে হতাশায় রুপান্তরিত হয়েছে। আমরা পুনরায় এর তদন্ত সাপেক্ষে ফারজানা ইসলামের শাস্তির দাবি করছি।

এ নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগরের আহ্বায়ক অধ্যাপক রায়হান রাইন বাংলানিউজকে বলেন, কোন অন্যায় বা অপরাধ সংঘঠিত হওয়ার পর তদন্ত না করে যখন এভাবে দায়মুক্তি দেয়া হয়, তার অর্থ হচ্ছে এসব অপরাধ করা কোনো সমস্যা না। স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার প্রশ্নে তদন্ত হওয়াটা জরুরি এবং ইউজিসি তদন্ত করা কেন বন্ধ করল সেটাও অস্পষ্ট। বিষয়টি নিয়ে আমরা বরাবরই তদন্ত দাবি করে এসেছি। এখনও সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে জানতে  সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৫ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০২৩
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।