ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

শিক্ষা

জাবিতে শিক্ষার্থীকে চড় মেরে কান ফাটালেন ছাত্রলীগ নেতা

জাবি করেসপডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫১ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০২৩
জাবিতে শিক্ষার্থীকে চড় মেরে কান ফাটালেন ছাত্রলীগ নেতা

জাবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) মীর মশাররফ হোসেন হলে গেস্টরুম চলাকালীন চড় মেরে এক শিক্ষার্থীর কান ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের এক নেতার বিরুদ্ধে।

অভিযুক্ত শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হাসান মাহমুদ ফরিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ৪৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী।

অন্যদিকে ভুক্তভোগী সজীব আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, মঙ্গলবার (২১ মার্চ) রাত সাড়ে ৮টা থেকে গেস্টরুম শুরু হয়। দুপুরে হলের সিনিয়রের অতিথির সঙ্গে জুনিয়রদের খারাপ ব্যবহার করাকে কেন্দ্র করে এই গেস্টরুম চলতে থাকে। আনুমানিক রাত ১১টায় ভুক্তভোগী সজীবের কানে এলোপাথাড়ি চড় মারতে শুরু করে ফরিদ। এতে সজীবের কান ফেটে রক্ত বের হতে থাকে।

এরপর, ‘ভাই, আমাকে ছেড়ে দিন। আমি আর রাজনীতি করবো না। বাসায় চলে যাবো বলে ভুক্তভোগী অনুরোধ করলে গেস্টরুমে উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ আল ফারুক ইমরান (ইতিহাস-৪৪) বলেন, ‌‘ও নাটক করতেছে। ওরে তোল। আজকে এই গেস্টরুম থেকে ওর লাশ বের হবে। ’ পরে কয়েকজন সজীবকে ধরে মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য বের হলে ইমরান তাদের বাধা দিয়ে বলেন, ‘আগে দেখ ও নাটক করতেছে কিনা। ১৫-২০ মিনিট অবজার্ভ কর। তারপরে মেডিকেলে নিয়ে যা। আর এখন মেডিকেলে নিয়ে গেলে নিউজ হবে। তখন আমরা বিষয়টা হ্যান্ডেল করতে পারবো না। ’ এরপরে ইমরান সজীবকে হলগেটে আরও ১০-১৫ মিনিট আটকে রেখে মেডিকেলে যেতে বাধা দেন। পরে সজীবের অবস্থা আরও খারাপ হলে তাকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মেডিকেলে এবং পরে সাভারের এনাম মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, তখন গেস্টরুমে নির্যাতনের সময় জাবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ (মার্কেটিং-৪৪), শাহপরান (আন্তর্জাতিক সম্পর্ক-৪৪), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন (রসায়ন-৪৪), আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান (আন্তর্জাতিক সম্পর্ক-৪৫), উপ-ছাত্রবৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক আলরাজি সরকার (সরকার ও রাজনীতি-৪৫) উপস্থিত ছিলেন। তারা সবাই মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।

অভিযুক্ত ফরিদ (পরিবেশ বিজ্ঞান ৪৪) বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, কাল হয়েছে গেস্টরুম।  এ ধরনের কিছু গেস্টরুমে ঘটেনি। কেউ আহত হয়নি। এ তথ্য আমি জানি না।

আরেক অভিযুক্ত (ইমরান ৪৪) বলেন, ‘ভুক্তভোগীর সারাদিন ক্লাস- অ্যাসাইনমেন্ট থাকার ফলে গেস্টরুমে এসে শারীরিক দুর্বলতাজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ’

গেস্টরুমের বিষয়টি তিনি বলেন, রোজার আগে এটি আমাদের রুটিন গেস্টরুম। নির্দিষ্ট করা ছিল না, আজকে আমাদের হয়েছে কাল হয়তোবা অন্যদের হবে। রোজায় সাংগঠনিক দিক-নির্দেশনা দেওয়ার জন্য এ গেস্টরুম।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আখতারুজ্জামান বলেন, আমি ঘটনাটি শুনেছি। রমজান মাসের আগে সাংগঠনিক দিক-নির্দেশনা দেওয়ার জন্য সবাইকে নিয়ে বসতে বলা হয়েছিল। শুনেছি ছেলেটির কানে আগে থেকেই সমস্যা ছিল। আর গেস্টরুমে একসঙ্গে এক-দেড়শো জন বসার ফলে একটু ক্রাউড হয়। তখন হঠাৎ ওর কান থেকে রক্ত বেরোতে শুরু করে। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক এম ওবায়দুর রহমান জানান, ‘আমি ইতোমধ্যেই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি এখনো আমাদের কাছে লিখিতভাবে কিছু দেয়নি। সন্ধ্যায় আমরা হল প্রশাসন মিটিং ডেকেছি। এরপর আমরা উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবো। ’

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০২৩
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।