ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

গরুর চামড়ার সঙ্গে ছাগল-ভেড়ার চামড়া ফ্রি

শাহিদুল ইসলাম সবুজ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫১ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০২২
গরুর চামড়ার সঙ্গে ছাগল-ভেড়ার চামড়া ফ্রি

জয়পুরহাট: কোরবানির পশুর চামড়ার বাজারে ধস নেমেছে উত্তরের ভারত সীমান্তবর্তী জয়পুরহাট জেলায়। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, জেলার বাজারগুলোতে চামড়া বিক্রি করতে হচ্ছে বিগত বছরগুলোর চেয়ে চার ভাগের এক ভাগ দামে।

 

অনেক জায়গায় এত কম দামে চামড়া বিক্রি হওয়ায় অবহেলায় মাটিতে লুটাচ্ছে খাসি ও ভেড়ার চামড়া। চামড়ার বাজার ধসের শিকার মধ্যস্বত্বভোগী ও ব্যবসায়ীরা অনেকটাই দিশেহারা। জেলার অনেক জায়গায় গরুর চামড়ার সঙ্গে খাসি ও ভেড়ার চামড়া বিনামূল্যে তুলে দিতে দেখা গেছে।

চার বছর আগেও জেলার বিভিন্ন বাজারে যেখানে প্রতিটি ছাগল, ভেড়ার চামড়া বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, এবার সেখানে আকারভেদে প্রতি ছাগলের চামড়া বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ টাকায়। আর ওই বছরগুলোতে প্রতিটি গরুর চামড়া যেখানে বিক্রি হয়েছিল ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকারও বেশি, এ বছর সেখানে বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়। চামড়ার বাজার ধসের কারণে লোকসানের শিকার হচ্ছেন জেলার মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা। কোরবানির চামড়ার এই দরপতনে দিশেহারা মধ্যস্বত্বভোগী চামড়া ব্যবসায়ীরা। এতে পুঁজি হারিয়ে অনেকেই পথে বসবেন বলেও আশঙ্কা করছেন তারা।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার কোমর গ্রামের আলমগীর হোসেন, পাঁচবিবি উপজেলার ধরঞ্জী গ্রামের আক্কাস আলী, কালাই পৌর শহরের আব্দুন নূর নাহিদ, ক্ষেতলাল উপজেলার কানপাড়া গ্রামের হাসানুর ইসলাম ও আক্কেলপুর উপজেলার হাস্তা বসন্তপুর গ্রামের ওয়াদুদ মৃধাসহ জেলার বিভিন্ন এলাকার কোরবানিদাতারা জানান, হতদরিদ্র মানুষ এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কোরবানির চামড়া বিক্রির টাকা থেকে একটা অংশ পেয়ে থাকে প্রতি বছর, এবার তাদের ভাগ্যেও জুটবে না কাঙ্ক্ষিত সেই অর্থ। কোনো কোনো জায়গায় গরুর চামড়ার সঙ্গে ছাগল ও ভেড়ার চামড়াগুলো বিনামূল্যে দিতে হয়েছে ফরিয়াদের। অথচ চামড়ার বাজারে গত ৩/৪ বছর ধরে এমন পরিস্থিতি বিরাজ করলেও সংশ্লিষ্টদের কোনো নজরদারি নেই।  

এ ব্যাপারে জয়পুরহাট জেলা সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম বলেন, চামড়ার যেকোন একটি পণ্যের দাম পাঁচশ টাকার নিচে পাওয়া যায় না। সেখানে চামড়ার দাম এত কম কেন। এই শিল্পের দিকে সরকারের দৃষ্টি দেওয়া উচিত।

চামড়ার বাজার ধসের কারণে লোকসানের শিকার জয়পুরহাট জেলা সদর উপজেলার বানিয়া পাড়া গ্রামের বুল্লি মিয়া, বটতলীর ভুদু, মুন্সিপাড়ার আব্দুস সামাদসহ অনেক।

মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা বলেন, কোরবানির চামড়ার দরপতনে দিশেহারা আমরা। আমরা প্রতি বছর কোরবানির সময় দু-একদিনের এ ব্যবসায় টাকা খাটিয়ে ভালো লাভ করলেও গত ৪/৫ বছর ধরে লোকসান গুনতে হচ্ছে। এ সময় জয়পুরহাট শহরের নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক ফড়িয়া বলেন, সীমান্তে কড়াকড়ি না থাকলে আমরা ভারতে চামড়া পাঠিয়ে কিছু লাভের মুখ দেখতাম। তবে এবার সেটিও হচ্ছে না।

জয়পুরহাট জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, পুঁজি সংকট, লবণ ও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি এবং ট্যানারি মালিকদের কাছে ১০-১৫ কোটি টাকা বকেয়া পাওনা ইত্যাদি কারণে চামড়ার দাম পড়েছে। কারণ স্থানীয় ব্যবসায়ীদের হাতে টাকা না থাকায় তারা কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে চামড়া কিনতে পারছেন না। ফলে বাজারে চাহিদা কম থাকায় চামড়ার মূল্য স্বাভাবিক কারণে কমে গেছে।

জয়পুরহাট-২০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল রফিকুল ইসলাম জানান, এই ব্যাটালিয়নের অধীনে সীমান্ত এলাকা রয়েছে প্রায় সাড়ে ৪১ কিলোমিটার। এর মধ্যে ২২ কিলোমিটার এলাকা তার কাঁটায় ঘেরা, বাকি ১৮ কিলোমিটার সীমান্তে তার কাঁটা নেই। চোরাকারবারিরা মূলত এই জায়গাটিকেই তাদের পাচারের পথ হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। তাই এই জায়গাগুলো সব সময় নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে এবং অতিরিক্ত বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এবার যেমন সীমান্ত দিয়ে একটি গরুও আসতে দেওয়া হয়নি, ঠিক তেমনি কোরবানির পশুর চামড়াও ভারতে যেন পাচার না হয়- সেই চেষ্টা অব্যাহত আছে। আর এ জন্য ব্যাটালিয়নের অধীন ১২০টি পোস্ট ও ক্যাম্পে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৯ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।