ঢাকা, শনিবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘ব্যাংকের ১০ ভাগ কর্মকর্তা দুর্নীতিবাজ’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০১৬
‘ব্যাংকের ১০ ভাগ কর্মকর্তা দুর্নীতিবাজ’

ব্যাংকের ৯০ ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী সৎ ও ১০ ভাগ দুনীর্তিবাজ। এই ১০ ভাগ দুনীর্তিবাজ ৯০ ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জিম্মি করে চলে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ।

ঢাকা: ব্যাংকের ৯০ ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী সৎ ও ১০ ভাগ দুনীর্তিবাজ। এই ১০ ভাগ দুনীর্তিবাজ ৯০ ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জিম্মি করে চলে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ।

মঙ্গলবার (০৬ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে দি পিপলস ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেস কর্পোরেশন (পিডিএসসি) লিমিটেড আয়োজিত ‘খেলাপি ঋণ আদায়ে সফলতা ও ব্যর্থতা’-শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ব্যাংকের মালিকদের অর্থ মাত্র ১০ ভাগ আর ৯০ ভাগ জনগণের। জনগণের টাকায় যেহেতু ব্যাংক চলে সেহেতু ব্যাংক সম্পর্কে তাদের কথা বলা, স্বার্থ রক্ষার প্রয়োজন আছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ব্যাংক আইন অনুযায়ী ক্ষমতায়ন করা হয়েছে জনগণের ব্যাংককে তদারকি করার জন্য। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব জনগণের এ স্বার্থ রক্ষা করা। এ বিধান থাকা সত্ত্বেও জনগণের স্বার্থ রক্ষার বিষয়ে যে শক্তভাবে ভূমিকা নিতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কারণ কিছু স্বার্থবাদী মহল যারা ব্যাংকের বিরুদ্ধাচরণ করে। আরেক দিকে ব্যাংকের ভেতরে দুনীর্তিবাজ একটি অংশ দিনে দিনে তৈরি হয়ে গেছে, এরা ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী মহল। ব্যাংকে যারা চাকরি করেন তাদের ৯০ ভাগ ভালো লোক ১০ ভাগ খারাপ লোক। ব্যাংকের মালিকরা যেমন ১০ ভাগের মালিক হয়ে ব্যাংকের পুরো অধিকার ভোগ করে তেমনি এই ১০ ভাগ দুর্নীতিবাজের মদদে শক্তি অর্জন করে রাষ্ট্রের ভেতরের রাজনৈতিক, সামাজিক, আর্থিকসহ অন্যান্য শক্তিশালী মহল। ৯০ ভাগ সৎ কর্মচারীকে জিম্মি করে তারা দুর্নীতি করে।

এ অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, ১৯৮৬ সালে বিশ্বব্যাংক রিপোর্ট দিয়েছিলো যদি এখনই পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তাহলে ব্যাংকগুলো ঝরে পড়তে পারে। তখন বিশ্বব্যাংক তাদের সহায়তায় এফএসআরপি নামে ৫ বছরব্যাপী একটি প্রোগ্রাম চালু করলো। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে বিশ্বাস না করে সোনালী, রূপালী, অগ্রণী, জনতা ব্যাংকে চারজন বিদেশিকে কনসালটেন্ট নিয়োগ করলো। বাংলাদেশ ব্যাংকে তাদের একজন প্রধান বসলেন। ৩০ থেকে ৪০ জনের একটি বিদেশি প্রতিনিধির বিশাল টিম ৫ বছর ধরে সংস্কার করে ব্যাংকগুলোকে একটা পর্যায়ে নিয়ে আসলেন। ৯০ থেকে ৯৬ পর্যন্ত কাজ করার পর ব্যাংকগুলোর অবস্থা একটু ভালো হল। কিন্তু ২০০০ সাল থেকে ব্যাংকগুলোর অবস্থা আবার খারাপ হতে শুরু করল আর ভালো হয়নি। সে সময় দুর্নীতি দায়ী ছিল এবারও দুর্নীতি দায়ী। প্রতিবার বিশ্বব্যাংক আর বিদেশিরা আমাদের স্বাধীন দেশে ব্যাংক ঠিক করে দিয়ে যাবে এটা আমাদের মর্যাদার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ না।

তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক এখনো এখানে আসতে চাইছে না, আসা উচিত বলে মনে করি। কিন্তু কেন বারবার আসতে হবে? আমরা কি এতই খারাপ ব্যাংকার? আমাদের দেশে অনেক ভালো ব্যাংকার আছেন, অনেক বাঙালি ব্যাংকার বিদেশি ব্যাংক চালাচ্ছেন। দেশের মধ্যে দুনীর্তিবাজ একটি অংশ ভালো ব্যাংকারদের কাজ করতে দিচ্ছেন না।

ডেট রিকোভারি বা ঋণ পুনরুদ্ধার আইন সম্পর্কে তিনি বলেন, গর্ভনর ফখরুদ্দিন এ আইন করতে চেষ্টা করেছেন। এর বিরুদ্ধে দুর্নীতিবাজরা অত্যন্ত জোরেসোরে কাজ করেছেন। সরকারের মধ্যে একটি শক্তিশালী দুর্নীতিবাজ চক্র আছে। অনেক দেশে আছে। কিন্তু সব দেশে সরকারের কন্ট্রোলে থাকে, বাংলাদেশে মনে হচ্ছে এ চক্রের কন্ট্রোলে সরকার পড়ে গেছে।

সেমিনারে পিডিএসসি’র প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান এমএ রহমান স্বাগত বক্তব্য রাখেন। সেমিনারে পিডিএসসি ব্যবস্থাপনা পরিচালক নজরুল ইসলাম সভাপতিত্ব করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৬
আরইউ/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।