ঢাকা, শনিবার, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০১ জুন ২০২৪, ২৩ জিলকদ ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে মামলা করছেন কর্মীরা

উর্মি মাহবুব, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০১৬
গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে মামলা করছেন কর্মীরা

শ্রম আইন-২০০৬ এর ২৩২ ধারা অনুসারে প্রাপ্য প্রায় ১০৮ কোটি টাকা না পরিশোধ করায় গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে মামলা  করতে যাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা। চলতি ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই মামলা করার লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছেন বলেও জানান তারা।

ঢাকা: শ্রম আইন-২০০৬ এর ২৩২ ধারা অনুসারে প্রাপ্য প্রায় ১০৮ কোটি টাকা না পরিশোধ করায় গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে মামলা  করতে যাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা। চলতি ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই মামলা করার লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছেন বলেও জানান তারা।

কর্মীদের অভিযোগ, ২০০৬ সালে শ্রম আইন প্রণয়নের পর থেকে প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশের ৫ শতাংশ কর্মীদের পাওয়ার কথা থাকলেও তা দিচ্ছেন না গ্রামীণ টেলিকমের মালিকপক্ষ। গত ১০ বছরে কর্মীদের এ খাতে পাওনা হয়েছে ১০৭ কোটি ৯৩ লাখ ২৬ হাজার ২০ টাকা।

কর্মীদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ বাংলানিউজকে বলেন, ‘বেশ কিছুদিন আগেই কোম্পানির মুনাফার প্রাপ্য ৫ শতাংশ অর্থ আদায়ে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীরা। আদালতে মামলা করার সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যেই আমরা মামলাটি দায়ের করতে পারবো বলে আশা করছি’।

এদিকে প্রতিষ্ঠানটির পুরনো কর্মকর্তারা এখনও চাকরির ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রামীণ টেলিকমের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা যখন থেকে মালিকপক্ষকে কোম্পানির লভ্যাংশের ৫ শতাংশের অর্থ পরিশোধের বিষয়ে বলি, তখন থেকেই আমাদের নানাভাবে চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন মালিকপক্ষ। কর্মীরা মামলা করবেন শুনে তারা আরো বেড়ে গেছেন’।

গত ১৯ অক্টোবর কর্মীদের প্রাপ্য ১০৭ কোটি ৯৩ লাখ ২৬ হাজার ২০ টাকা পরিশোধে শ্রম মন্ত্রণালয়ের শ্রম কল্যাণ তহবিল থেকেও চিঠি দেওয়া হয় গ্রামীণ টেলিকমকে। চিঠিতে ২০০৬ সালের শ্রম আইন অনুসারে কর্মীদের কোম্পানির লভ্যাংশের ৫ শতাংশ না দেওয়াকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ উল্লেখ করে যতো দ্রুত সম্ভব তা পরিশোধের নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু ওই চিঠির বিষয়েও এখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি গ্রামীণ টেলিকম।

শ্রম আইন অনুসারে যেকোনো প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী সম্পত্তি ১ কোটি টাকা বা তার বেশি হলে নিট মুনাফার ৫ শতাংশ পাবেন কর্মীরা। গ্রামীণ টেলিকমের অভ্যন্তরীণ অডিট রিপোর্ট অনুসারে ২০০৬ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে গ্রামীণ টেলিকমের নিট মুনাফা হয়েছে ২ হাজার ১৫৮ কোটি ৬৫ লাখ ২০ হাজার ৪১৭ টাকা। এর মধ্যে ২০০৬ সালে ৪২ কোটি ১১ লাখ ২৪ হাজার টাকা,  ২০০৭ সালে ৩৭ কোটি ১৪ লাখ ৫৭ হাজার টাকা, ২০০৮ সালে ৩৯ কোটি ৪৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, ২০০৯ সালে ৫২ কোটি ৭৩ লাখ ৬৩ হাজার টাকা, ২০১০ সালে ২১৮ কোটি ২০ লাখ ৫৮ হাজার টাকা, ২০১১ সালে ৪৮১ কোটি ৮০ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ২০১২ সালে ৩৩১ কোটি ২৭ লাখ ১৬ হাজার টাকা, ২০১৩ সালে ৩০৪ কোটি ৮৯ লাখ ৫৪ হাজার টাকা, ২০১৪ সালে ৩১৬ কোটি ২৭ লাখ ৩২ হাজার টাকা ও ২০১৫ সালে ৩৩৪ কোটি ৭২ লাখ ৪০ হাজার টাকা নিট মুনাফা হয়েছে।

আইন অনুসারে ওই মুনাফার ৫ শতাংশ অর্থাৎ ১০৭ কোটি ৯৩ লাখ ২৬ হাজার ২০ টাকা পাওয়ার কথা প্রতিষ্ঠানের ১১০ জন কর্মীর। কিন্তু গ্রামীণ টেলিকম একটি টাকাও কর্মীদের না দিয়ে পুরো অর্থই রেখে দিয়েছে নিজের কাছে।

এ বিষয়ে গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ অন্য কোনো কর্মকর্তাও এ বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ।

** আইন লঙ্ঘনে গ্রামীণ টেলিকমকে শ্রম কল্যাণ তহবিলের চিঠি

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৬
ইউএম/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।