ঢাকা: জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের পদত্যাগ ও এনবিআর সংস্কার আন্দোলন কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণকারীদের বদলির প্রতিবাদে সোমবার (২৩ জুন) থেকে কলম বিরতি কর্মসূচি শুরু করেছে সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে গঠিত এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ঘোষণা অনুযায়ী, ঢাকাস্থ সব দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এনবিআরে অবস্থান কর্মসূচি ও কলম বিরতি এবং অন্যান্য দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্ব-স্ব দপ্তরে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি ও কলম বিরতি পালন করবে।
গত ১২ মে এনবিআরকে দুই ভাগ করার অধ্যাদেশ জারি করে। এর বিরোধিতা করে অবস্থান কর্মসূচি ও কলম বিরতি পালন শুরু করে এনবিআরের অধীন কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা। গত ২৫ মে রাতে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে অর্থ মন্ত্রণালয় এনবিআর বিলুপ্ত নয়,বরং এ প্রতিষ্ঠানকে ‘স্বাধীন ও বিশেষায়িত’ বিভাগের মর্যাদায় উন্নীত করার ঘোষণা দিলে ২৬ মে কলম বিরতি কর্মসূচি প্রত্যাহার করে এনবিআর কর্মকর্তারা। তবে এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ ও চেয়ারম্যানকে অসহযোগিতা করার ঘোষণা দেয় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।
গত ২০ জুন এনবিআরের কাঠামোগত সংস্কার কার্যক্রমে সমন্বয় করার জন্য ছয় সদস্যের একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করে সরকার। এনবিআর সদস্য (কর, লিগ্যাল ও এনফোর্সমেন্ট) ব্যারিস্টার মুতাসিম বিল্লাহ ফারুকীকে এ কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে এবং এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবি করে শনিবার (২১ জুন) বিকেলে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে ঐক্য পরিষদ।
এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ বলেন, এরই মধ্যে সংস্কার কর্মসূচিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক বদলি ও নিপীড়নের খড়গ নেমে এসেছে। আবার, সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকা সত্ত্বেও রাজস্ব ভবন ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে উসকানিমূলক পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের দাবি, অবিলম্বে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে হবে। তার মাধ্যমে রাজস্ব সংস্কার কার্যক্রম শুধুই সময়ক্ষেপণ বলে ঐক্য পরিষদের দাবি।
এনবিআর সংস্কারে গঠিত নতুন কমিটি প্রসঙ্গে তারা বলেন, রাজস্ব অধ্যাদেশ সংশোধনের লক্ষ্যে এনবিআরের কর, কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের ছয়জন সদস্য সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু উদ্বেগের বিষয়, এই কমিটিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের কোনো প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, এমনকি তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা পর্যন্ত করা হয়নি।
চেয়ারম্যান বিভিন্ন সভা-সমাবেশে উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছে উল্লেখ করে নেতারা বলেন, এনবিআর চেয়ারম্যান এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের বৈধতা ও অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন এবং উসকানি দিচ্ছেন। যে রাজস্ব অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে এতদিন কর্মসূচি চলেছে, তা জারি হওয়ার পর যারা একে স্বাগত জানিয়ে পত্রিকা ও ফেসবুকে বক্তব্য দিয়েছিলেন, এনবিআরের তেমন সদস্যদেরই গঠিত কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ, এ থেকে স্পষ্ট যে, রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কারে সরকারের সদিচ্ছাকে এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে এবং সংস্কার বাস্তবায়নে বাধা দিয়ে সামগ্রিক পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে। এ জন্য সবার আগে এনবিআর চেয়ারম্যানকে পদত্যাগ করতে হবে।
জেডএ/জেএইচ