ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১২ জুন ২০২৫, ১৫ জিলহজ ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

যশোরে জমেনি ঈদ পরবর্তী প্রথম চামড়ার হাট, দামে হতাশ ব্যবসায়ীরা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:০০, জুন ১০, ২০২৫
যশোরে জমেনি ঈদ পরবর্তী প্রথম চামড়ার হাট, দামে হতাশ ব্যবসায়ীরা

যশোর: যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি থেকে তিনশ ৮৯ পিস ছাগলের চামড়া নিয়ে রাজারহাটে এসেছিলেন প্রান্তিক ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক। দুপুর ১২টার মধ্যে বিক্রি করেছেন ২শ পিস।

 

বাকি ১শ ৮৯ পিস নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন আড়তদারদের কাছে। কেউ নিতে চাননি। বাধ্য হয়ে প্রতি পিস ১০ টাকা করে প্রায় জোর করে একজনের কাছে বিক্রি করে বাড়ি ফিরেছেন তিনি।

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কোরবানির সময় গ্রাম থেকে প্রতি পিস ছাগলের চামড়া কিনেছিলেন ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। সংরক্ষণ ও বাড়ি থেকে যশোরের রাজারহাট পর্যন্ত নিয়ে আসতে চামড়ার পিস পড়েছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। ফলে এবার ব্যবসায় বড় লোকসানে হতাশ আব্দুর রাজ্জাক।

মঙ্গলবার (১০ জুন) দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সব থেকে বড় চামড়ার হাট যশোরের রাজারহাটে আসা ব্যবসায়ীদের মধ্যে এমনই হতাশা দেখা গেছে। সরকার নির্ধারিত দাম তো দূরের কথা, কোরবানিতে ব্যবসায়ীরা যে লগ্নি করেছিলেন তাও উঠানো দায় হয়ে পড়েছে এবার।  

ইজারাদার, আড়তদার এবং প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কোরবানি পরবর্তী যশোরের প্রথম হাটে চামড়া উঠেছিল মাত্র তিন থেকে চার হাজার পিস। যার অধিকাংশই গরুর চামড়া।

যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়া থেকে ১শ পিস ছাগলের চামড়া নিয়ে এসে বিক্রি করতে না পেরে ফিরে গেছেন প্রান্তিক ব্যবসায়ী ভক্তি বিশ্বাস।  

তিন বলেন, সরকার খাসির চামড়ার প্রতি বর্গফুট নির্ধারণ করেছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। আড়তদাররা পুরো চামড়ার দামই বলছে ২০ টাকা। বিক্রি করার কোনো উপায় নেই।

রাজারহাটের আড়তদার মো. গিয়াস উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, মঙ্গলবারের হাটে তিনি ১শ গরুর চামড়া কিনেছেন। গড় ৫শ টাকা পরেছে প্রতি পিস।  

এ ছাড়া ঈদের দিন তিনশ টাকা থেকে সাতশ টাকা পিসে তিনশ গরুর চামড়া কিনেছিলেন বলে জানান গিয়াস উদ্দিন।

হাটের ইজারাদার খুরশিদ আলম বাবু বাংলানিউজকে জানান, খুলনা বিভাগে ১০ জেলাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২০টি জেলা থেকে মানুষ রাজারহাটে চামড়া নিয়ে আসে। চামড়া কিনতে আসেন ঢাকা, কুষ্টিয়া, নাটোর, পাবনার বড় বড় ব্যবসায়ী ও ট্যানারি মালিক। তবে, মঙ্গলবারের হাটে তারা আসেননি। আগামী শনিবার বড় হাট বসার আশা করছেন তিনি।

চমড়ার দাম দিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন খুরশিদ আলম বাবু। তিনি বলেন, সরকার নির্ধারিত দামে কোনো চামড়া বিক্রি হচ্ছে না। হওয়ার সম্ভাবনাও কম।  

তার মতে, সরকার চামড়ার দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের সাথে কোনো আলোচনা বা সমন্বয় করেনি। দামের ক্ষেত্রে চামড়ার ক্যাটাগরিও করা হয়নি। এটার কারণে প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা বেশি ধরা খেয়েছেন।

ব্যবসায়ী হাসিব চৌধুরী বলেন, মাদ্রাসাগুলোতে লবণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক হলেও তার ব্যবহার নিয়ে কোনো তদারকি ছিল না। সে কারণে অনেক চামড়া এবারও নষ্ট হয়েছে।

তিনি জানান, মঙ্গলবারের হাটে তিনি পাঁচশ থেকে নয়শ টাকায় একশ ৯০ পিস গরুর চামড়া কিনেছেন।

যশোরের চামড়ার হাটে আজ মৌসুমি ব্যবসায়ীদের দেখা যায়নি।  

আড়তদাররা বলেছেন, ট্যানারি মালিকদের কাছে পাওনা আদায় না হওয়া, বছরের পর বছর ব্যবসায় লোকসান গুণতে গুণতে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়ার ব্যবসায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।

এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।