ঢাকা: জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তুত করা হয়েছে। বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম আগের বছরের তুলনায় নতুন বাজেটের আকার ছোট হচ্ছে। মূলত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকুচিত মুদ্রানীতির সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারি ব্যয় কমানো এবং বাজেট ‘বাস্তবায়নযোগ্য’ করতেই আকার কমানো হচ্ছে। বাজেটে সর্বক্ষেত্রে বৈষম্য কমিয়ে এনে একটি নতুন যুগের সূচনা করতে চায় বর্তমান সরকার। বিশেষ করে ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতিতে গতি ফেরানোর লক্ষ্যে সব ধরনের পদক্ষেপ থাকবে নতুন বাজেটে।
এদিকে বাজেটের আকার কমানো হলেও আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বাড়ানো, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসা, নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান তৈরি, গ্রামীণ অবকাঠামো পুনর্গঠন, সামাজিক নিরাপত্তায় জোরদার, ধীরে ধীরে ঋণ নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসা, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির উদ্যোগ থাকবে গ্রামীণ পর্যায়ে। এ জন্য উজ্জীবিত করা হবে রাস্তাঘাট নির্মাণ, সংস্কারসহ গ্রামীণ অবকাঠামো খাতের কর্মযজ্ঞকে। তবে অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্প গ্রহণ না করার মতো কর্মসূচিতে জোর দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে নতুন অর্থবছরের বাজেটে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেটে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের প্রায় দেড়যুগ শাসনের অবসানের পর এবার সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী একটি ‘কল্যাণমুখী’ বাজেট প্রণয়নে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
আগামীকাল সোমবার ২ জুন বিকাল ৩ টায় রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের মাধ্যমে জাতির সামনে আসছে (২০২৫-২৬) অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
অর্থমন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, অর্থনীতিতে গতি ফেরানোর লক্ষ্য নিয়েই এবারের বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। বিশেষ করে আমদানি-রপ্তানিতে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে সেগুলো মোকাবিলায় একটি গাইড লাইন থাকবে নতুন বাজেটে। দ্রব্যমূল্য বা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে স্থায়ী কমিশন গঠন করার ঘোষণা আসতে পারে। এছাড়া খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত, সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জন, দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে উল্লেখযোগ্য সংস্কার, পদক্ষেপ ও কর্মকাণ্ডের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে এবং রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কারোপ, এলডিসি গ্রাজুয়েশন, জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনে প্রকল্প গ্রহণ, বৈশ্বিক যুদ্ধ পরিস্থিতিতেও নিজদেশের বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান ঠিক রাখাসহ সার্বিকভাবে আর্থ-সামাজিকভাবে বৈষম্য কমানোর যে তাড়না থেকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সূত্রপাত হয়েছিল, তা পূরণে সব ধরনের উদ্যোগ থাকবে বাজেটে।
জানা গেছে, নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা হবে। গত কয়েক বছর ধরেই দেশে মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরে অবস্থান করছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরও মূল্যস্ফীতির তেজিভাব লক্ষ্য করা গেছে। তবে শেষ পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি কমাতে আমদানি বাড়ানো ও নিত্যপণ্য আমদানিতে শুল্ক মওকুফের মতো বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়ায় এবার রমজানে দ্রব্যমূল্য কমে আসে। ওই সময় ভোক্তারা বাজারে স্বস্তি পেয়েছেন। কিন্তু এখন আবার একটু একটু করে বাড়তে শুরু করেছে নিত্যপণ্যের দাম। বিশেষ করে চাল ও ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে গেছে। সামনে বর্ষা মৌসুম শুরু হলে শাক-সবজির দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কোরবানি ঈদ সামনে রেখে মসলা জাতীয় পণ্য নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের তৎপরতা বাড়তে পারে। এ অবস্থায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে। অন্যদিকে দেশে এখনো উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে, যা ৯-১০ শতাংশের ঘরে থাকছে। তবে নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেবেন অর্থ উপদেষ্টা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অভ্যন্তরীণ বাজার কঠোর তদারকি করে দেশে উৎপাদিত পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ঠেকানো সম্ভব। প্রয়োজনে চালের দাম সহনীয় রাখতে বাজার কৌশল নির্ধারণ করা। পাশাপাশি উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত গরিব মানুষকে বাজেটের মাধ্যমে নগদ ও খাদ্যসহায়তা দিয়ে সুরক্ষা দিতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। এনবিআরও তেল, আলু, পেঁয়াজ, ডিমসহ বেশ কিছু নিত্যপণ্যে শুল্ক-কর কমিয়ে দেয়। বাজারে নিত্যপণ্যের আমদানিপ্রবাহ ঠিক রাখার চেষ্টা করা হয়। তবে পথেঘাটে চাঁদাবাজি তেমন একটা বন্ধ হয়নি বলে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন।
কয়েক বছর ধরে বিবিএসের মূল্যস্ফীতির তথ্য নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে আসছেন অর্থনীতিবিদেরা। তারা বলছেন, সরকারি পরিসংখ্যানে মূল্যস্ফীতির যে হিসাব দেওয়া হচ্ছে, বাস্তবে তা আরও বেশি। সরকার মূল্যস্ফীতি কমিয়ে দেখাচ্ছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিনির্ধারকেরা দাবি করছেন, বিবিএস এখন সঠিক পরিসংখ্যান প্রকাশ করছে।
আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসাকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে প্রথম অগ্রাধিকার দিয়ে বাজেট করা হচ্ছে। এ জন্য কিছু সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা ও ভাতার পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। এ ছাড়া নজর থাকবে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, জ্বালানি সাশ্রয় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে।
বাজেটের আকার: আগামী অর্থবছরের (২০২৫-২৬) জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট দেয়ার পরিকল্প করেছে অন্তবর্তীকালী সরকার। বাজেটের এই আকার চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। চলতি অর্থ বছরের বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ কমার কারণে আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার ছোট হচ্ছে।
বাজেটে জিডিপি: আগামী অর্থবছরের জন্য সরকার জিডিপির প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৫ শতাংশ ধরতে পারে। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অবশ্য বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এবং এডিবির পূর্বাভাস হলো- এবার প্রবৃদ্ধি এর চেয়ে অনেক কম হবে।
বাজেটে মূল্যস্ফীতি : আগামী অর্থবছর শেষে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় সরকার। চলতি অর্থবছরেও একই লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। তবে গত এপ্রিল মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস (জুলাই-ডিসেম্বর) সার্বিক মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে ছিল। পরের চার মাস অর্থাৎ এপ্রিল পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ঘরে ছিল। তবে আশঙ্কার বিষয় হলো খাদ্য মূল্যস্ফীতি। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) পর্যন্ত খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি ছিল। এর মধ্যে গত জুলাই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ দশমিক ১০ শতাংশে ওঠে, যা গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি পুরো ১০ মাস ধরে ৯ শতাংশের ঘরে আছে। তবে ২০২৪ সালের ১২ মাসের মধ্যে মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সার্বিক মূল্যস্ফীতি টানা দশ মাস ধরে ১০ শতাংশের ওপরে ছিল। এত দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করায় সাধারণ মানুষ বা সীমিত আয়ের মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে।
বাজেটে ঘাটতি: নতুন অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি ধারা হতে পারে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। চলতি বাজেটে যা ছিল ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য যে ঘাটতি ধরা হচ্ছে, সেই ঘাটতির অর্ধেকেরও বেশি বিদেশি উৎস থেকে এবং বাকিটা ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ করার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে।
রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা: আগামী অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৫ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা এনবিআরকে আদায় করতে হবে। এনবিআরবহির্ভূত কর এবং কর ব্যতীত রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৬১ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে যা ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে কমিয়ে করা হয় ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) মাত্র ২ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেছে এনবিআর, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা কম। আগামী বাজেটে রাজস্ব আহরণ কার্যক্রম অটোমেশনসহ শুল্কছাড় ও কর অব্যাহতি কমিয়ে আনাসহ নতুন বেশ কিছু খাতে ভ্যাট ও কর বাড়িয়ে রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
বাজেটের অনুন্নয়ন ব্যয়: নতুন বাজেটের আকার কমলেও পরিচালন বা অনুন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। নতুন অর্থবছরের বাজেটে এ খাতের ব্যয় ধরা হতে পারে ৫ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৫ লাখ ৬ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। অনুন্নয়ন ব্যয় বাড়লেও কমবে উন্নয়ন ব্যয়।
উন্নয়ন ব্যয় বা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি): আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। চলতি অর্থবছরে মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। সে হিসেবে আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৫ হাজার কোটি টাকা কম। এডিপির অর্থের মধ্যে স্থানীয় উৎস থেকে যোগান দেওয়া হবে ১ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা। আর প্রকল্প সহায়তা হিসেবে পাওয়া যাবে ৮৬ হাজার কোটি টাকা। আগামী এডিপিতে ১ হাজার ১৪২টি প্রকল্প রয়েছে।
করমুক্ত আয়সীমা বাড়বে: প্রায় দুইবছর পর এবার করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে ৪ লাখ টাকা করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা। মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিয়ে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর দাবি তুলেছেন। এ ছাড়া আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে করপোরেট করের শর্ত শিথিল করা হচ্ছে। শর্ত শিথিল হলেও কর্পোরেট করের হার কমানো হচ্ছে না।
বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকছে না: আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা সাদা করার কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না। এবিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, কোনো খাতেই কোনোভাবে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হবে না। কালো টাকার উৎস বন্ধে আমি চেষ্টা করছি, যে দামে জমি কেনাবেচা হয় সে দামেই হবে জমির নিবন্ধন বা দলিল। এক্ষেত্রে করও কমানো হবে। এত তাড়াতাড়ি করা সম্ভব হবে কি না জানি না। গুলশানে প্রতি কাঠা জমি ১৫ কোটি টাকায় বিক্রি হলেও দলিল হয় ৫ কোটি টাকায়। এভাবে কেনাবেচায় দু’পক্ষই বিপদে পড়েছে। অনেকে ঘুষটুষ দিয়ে এখান থেকে পার পাচ্ছে। আমরা এ প্রবণতা বন্ধ করতে চাই।
সরকারি কর্মকর্তাদের দেওয়া হবে মহার্ঘ ভাতা: আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার বিষয়ে বিশেষভাবে বিবেচনা করছে সরকার। সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ পর্যন্ত মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে সরকারি পর্যায়ে কাজ হচ্ছে। ভাতা দিলে আগামী অর্থবছরে বাড়তি কত খরচ হবে তার হিসাব-নিকাশ হচ্ছে। এর আগে গত ডিসেম্বরে ‘মহার্ঘ ভাতা’ সংস্থানের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিবকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করে সরকার। পর্যালোচনা শেষে কমিটি গ্রেডভিত্তিক ১০ থেকে ২০ শতাংশ ভাতা দেওয়ার সুপারিশ করে। গত জানুয়ারি থেকেই এ ভাতা কার্যকরের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু সংকটকালীন অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সেই সময় এ উদ্যোগের সমালোচনা করেন অর্থনীতিবিদরা। এমন প্রেক্ষাপটে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া থেকে তখন পিছিয়ে যায় সরকার
সামাজিক নিরাপত্তার আওতা ও সর্বজনীন পেনশন কার্যক্রমকে জোরদার করা হবে: আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সর্বজনীন পেনশন কার্যক্রম জোরদার করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তবে এই ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তনও আসতে পারে। বিশেষ করে পেনশনযোগ্য বয়স হলে জমাকৃত অর্থ এককালীন তোলার সুযোগ, প্রবাস ও প্রগতি স্কিমে সর্বনিম্ন মাসিক চাঁদার পরিমাণ কমানো, প্রগতি স্কিমে মাসিক সর্বোচ্চ জমার পরিমাণ বাড়ানো, আউটসোর্সিং সেবা চুক্তিতে নিয়োজিত কর্মীদের পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করা, সর্বজনীন পেনশন স্কিমের ইসলামিক ভার্সন চালুর প্রাথমিক উদ্যোগ নেওয়া ইত্যাদি।
বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে হচ্ছে স্থায়ী কমিশন: বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ রোজার ঈদে বাজারে স্বস্তি ছিল সাধারণ মানুষের। এখন চালের দাম কমে আসায় বাজারে স্বস্তি ফিরে আসছে। সারাবছরই যাতে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে থাকে সেজন্য স্থায়ী কমিশন গঠনের ঘোষণা বাজেটে দেওয়া হতে পারে। নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি ফেরাতে সিন্ডেকটমুক্ত করার দাবি দীর্ঘদিনের। সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি চাল, ডাল, ডিম, ভোজ্যতেল, চিনি ইত্যাদি নিত্যপণ্যে সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য নতুন একটি স্থায়ী কমিশন গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রস্তাবের ভিত্তিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ কমিশনের উদ্যোগ নিয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রতি অর্থবছরে জুন মাসের কোনো বৃহস্পতিবার বাজেট ঘোষণার রেওয়াজ থাকলেও এবার এর ব্যতিক্রম হচ্ছে। নতুন বাজেট ঘোষণা করা হবে আগামী ২ জুন সোমবার। ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হওয়ার আগেই বাজেট ঘোষণা করা হবে। ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হবে জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরু থেকে। এ কারণে ২ জুন ঘোষণা করা হবে নতুন বাজেট। এছাড়া রাজনৈতিক সরকারের অর্থমন্ত্রীরা সংসদে বাজেট উপস্থাপন করেন। জাতীয় সংসদ না থাকায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আগামী বাজেট উপস্থাপন করবেন টেলিভিশনের পর্দায়। রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে এ বাজেট ঘোষণা করা হবে।
জিসিজি/এমএম