ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ঋণের সুদহার বাড়ানোর বিকল্প নেই’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২৩
‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ঋণের সুদহার বাড়ানোর বিকল্প নেই’

ঢাকা: মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ঋণের সুদহার বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম।  

তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতির চাপ মোকাবিলা করছে।

দেরিতে হলেও আংশিকভাবে আমরা সেই পথে গেছি।

রোববার (১৬ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি ঘোষণার পর এক প্রতিক্রিয়ায় গণমাধ্যমকে তিনি এ কথা বলেন।

এই অর্থনিতিবিদ জানান, ঋণের সুদহার বেঁধে দেওয়ার কারণে ব্যাংকগুলো কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঋণ বিতরণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিল। একইভাবে আমানতের সুদহার কমে যাওয়ায় ব্যাংকের আমানতেও টান পড়েছে। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে বিবেচনা করলে ব্যাংকে আমানত রেখে গ্রাহকেরা যে সুদ পাচ্ছেন, তা মূল্যস্ফীতি খেয়ে ফেলছে। এমন এক পরিস্থিতিতে অনেক ব্যাংক আমানত–সংকটে পড়েছে।

তিনি বলেন, ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক আমানতের সুদহার তুলে নিয়েছে। একই সঙ্গে ভোক্তাঋণের সুদহারও বাড়িয়েছে। দেশের ব্যাংকগুলো প্রতিবছর যে পরিমাণ ঋণ দিয়ে থাকে, সেখানে ভোক্তাঋণের পরিমাণ খুব কম। ভোক্তাঋণের পরিমাণ ব্যাংক খাতের মোট ঋণের ১০ শতাংশের কম। তাই শুধু ভোক্তাঋণে সুদ বাড়িয়ে ঋণ বিতরণে কতটা গতি আনা যাবে, তা নিয়ে আমি যথেষ্ট সন্দিহান।

মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম জানান, এ কথা সত্য, জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের মানুষের একটি অংশকে ঋণ করে জীবনযাত্রার বাড়তি খরচ মেটাতে হচ্ছে। এখন ভোক্তাঋণের সুদ বাড়ানোর ফলে তারা হয়তো চাপে পড়বেন। তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ঋণের সুদহার বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতির চাপ মোকাবিলা করছে। দেরিতে হলেও আংশিকভাবে আমরা সেই পথে গেছি।  

রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। নতুন মুদ্রানীতিতে বলা হয়েছে, বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় আমানতের সর্বনিম্ন সুদহার পুরোপুরি তুলে নেওয়া হলো। এছাড়া ভোক্তাঋণের সুদহার বাড়ানোরও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ভোক্তাঋণের ক্ষেত্রে সুদহার ৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো যাবে।  

বর্তমানে ব্যাংকের সব ধরনের ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে বেধে রাখা হয়েছে। এখন সেখানে ভোক্তাঋণের সুদহার বাড়িয়ে ১২ শতাংশ পর্যন্ত করতে পারবে ব্যাংকগুলো। এর ফলে ব্যাংকগুলো এখন ভোক্তাঋণের সুদহার বাড়াতে পারবে। তবে শিল্পঋণসহ অন্যান্য ঋণের ক্ষেত্রে সুদহার বাড়ানোর সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি।  

অন্যান্য ঋণের বেধে দেওয়া সুদহার তুলে নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনাধীন থাকবে। আর আমানতের সুদহার উন্মুক্ত করে দেওয়া ও ঋণ সুদহারে কিছুটা শিথিল করায় তা আমানতের সুদহার বাড়াতে সহায়তা করবে।

এর আগে ২০২১ সালের আগস্টে আমানতের সর্বনিম্ন সুদহার বেধে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, তিন মাস ও তার বেশি মেয়াদি আমানতের সুদ কোনোভাবেই তিন মাসের গড় মূল্যস্ফীতির কম হতে পারবে না। ২০২০ সালের এপ্রিলে ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে দেওয়ার পর আমানতের সুদহার আড়াই শতাংশেও নামিয়ে এনেছিল।

বর্তমানে দেশে মূল্যস্ফীতি যেখানে উঠেছে, তাতে ব্যাংকগুলোকে আমানতের সুদহারও বাড়াতে হয়। কিন্তু ঋণের সুদ নির্দিষ্ট থাকায় ঋণ ও আমানতের সুদের মধ্যে সমন্বয় করতে গিয়ে ব্যাংকগুলোকে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। এজন্য ব্যাংকগুলো ঋণ ও আমানতের সুদহার তুলে নেওয়ার দাবি করে আসছিল।

নতুন মুদ্রানীতিতে, ঋণে সুদহারের ৯ শতাংশ সীমা অপরিবর্তিত রেখে নীতি সুদহার বাড়ালো বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে ব্যাংকগুলোকে পুনঃক্রয় চুক্তি বা রেপোর বিপরীতে ৬ শতাংশ সুদে ধার নিতে হবে, যা এতোদিন ছিল ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ।  

একইভাবে বিপরীত পুনঃক্রয় চুক্তি বা রিভার্স রেপোর সুদহার ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে ব্যাংকগুলোর ধারের সুদহার বাড়বে। সামগ্রিক বিবেচনায় এবারের মুদ্রানীতিকে সতর্কমূলক বলছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি আগের মতোই ১৪ দশমিক ১০ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। আর মুদ্রা সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা ১২ দশমিক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১১ দশমিক ৫০ শতাংশে নামানো হয়েছে। তবে বাজেটের বিশাল ঘাটতির অর্থায়নে সরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ কমায়নি বরং বাড়িয়েছে। দ্বিতীয়ার্ধে এ লক্ষ্য ঠিক করেছে ৩৭ দশমিক ৭০ শতাংশ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময় : ১২১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২৩
জিসিজি/এসএএইচ 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।