ঢাকা, শনিবার, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৭ জুলাই ২০২৪, ২০ মহররম ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

মোদী ম্যাজিকের সামনে ফিকে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্ব!

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪২ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৭
মোদী ম্যাজিকের সামনে ফিকে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্ব! মোদী ম্যাজিকের সামনে ফিকে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্ব!

কলকাতা: উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে প্রচারে যাননি সোনিয়া গান্ধী। এমন কি উত্তরপ্রদেশসহ ভারতের পাঁচ রাজ্যের ফল ঘোষণার আগের দিন দিল্লি থেকে তিনি চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

সঙ্গী কন্যা প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। এর মাধ্যমে পরিষ্করভাবেই ইঙ্গিত পাওয়া যায় দলের নেতা হিসেবে দায় এবং দায়িত্ব দুটিই রাহুল গান্ধীর ঘাড়ে এসে পড়ছে।

কিন্তু উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের ভরাডুবির পর রাহুল গান্ধীর নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠবে এটা খুব স্বাভাবিক। যদিও এ বিষয়ে কংগ্রেস হাই কমান্ডের তরফে কোন প্রশ্ন তোলা হবে না বলেই আশা করা যায়। কারণ কংগ্রেস হাইকমান্ড গান্ধী পরিবারের ওপর চিরকালই যথেষ্ট আস্থাশীল।

তবে বারেবারে নির্বাচনে পরাজয় এবং বিজেপি-এর ক্রমশ উত্থান রাহুল গান্ধীর নেতৃত্ব নিয়ে খুব বেশি প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে কংগ্রেসের কর্মীসহ বিভিন্ন মহলে।
 
এদিকে মোদী ম্যাজিক ধীরেধীরে ভারতের অন্য রাজ্যগুলিতেও প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। এখানে প্রশ্ন উঠছে তাহলে কি আগামী দিনে ভারতের রাজনীতির বহু কথিত প্রবাদ ‘বহু দলীয় রাজনীতিতে এক দলীয় শাসন’-এ পরিণত হতে চলেছে।

যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে সেই অবস্থা আজকের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিজেপি-এর পক্ষে সহজ হবে না। কিন্তু পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনে আঞ্চলিক দলগুলির পরাজয় সেই প্রশ্নকে উসকে দিচ্ছে।
 
ভারতের স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত ভারতের রাজনীতির ইতিহাস লক্ষ্য করলে দেখা যায় সেখানে ‘বহু দলীয় রাজনীতিতে এক দলীয় শাসন’ বজায় ছিল। অর্থাৎ কেন্দ্র কংগ্রেসের সরকার সঙ্গে বেশিরভাগ রাজ্যেও কংগ্রেসের সরকার। যদিও বিজেপি এখনও সেই জায়গা অর্জন করতে পারেনি, কিন্তু ২০১৯ সালে যদি বিজেপি আবার ক্ষমতায় আসে তবে এ সম্ভাবনা যে জোরদার হবে সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
 
ভারতের পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন থেকে ২০১৯ সালের প্রবণতা অনুধাবন করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য ছিল উত্তরপ্রদেশ। সেখানে বিজেপি তাদের প্রভাব নিরঙ্কুশ ভাবে প্রতিষ্ঠা করেছে। উত্তরপ্রদেশে জয়লাভ এতো বেশি রকমের গুরুত্ব দেবার কারণ আরও একটি আছে। লোকসভায় বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও ভারতের রাজ্যসভায় বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়। উত্তরপ্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডের জয় বিজেপিকে রাজ্যসভায় বাড়তি অক্সিজেন দেবে। ফলে সরকার তার সিদ্ধান্ত আরও সহজভাবে প্রয়োগ করতে পারবে।
 
আরও একটি লক্ষণীয় বিষয় উঠে এসেছে , যেখানে আবারও প্রশ্নের মুখে পড়ছেন রাহুল গান্ধী। ভারতের স্বাধীনতার পর থেকে উত্তরপ্রদেশের আমেঠি এবং রায়বেরলি লোকসভা আসন দুটি ঐতিহাসিক ভাবে বেশিভাগ সময়েই নেহেরু-গান্ধী পরিবারের দখলে ছিল। কিন্তু এই নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর দেখা যাচ্ছে ওই দু’টি লোকসভা আসনের অন্তর্গত যে বিধানসভা আসনগুলোতে নির্বাচন হয়েছে সেগুলির বেশিরভাগ হাতছাড়া হয়েছে কংগ্রেসের। এই দুটি আসনে লোকসভা নির্বাচনে সোনিয়া গান্ধী এবং রাহুল গান্ধী লড়াই করেন।
 
কংগ্রেস নেতা তথা ভারতের সাবেক অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরম বলেছেন, গোটা ভারতে নরেন্দ্র মোদীর আবেদন ইতিবাচক ভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। ২০১৭ সালেই ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হবে। অবশ্যই উত্তর প্রদেশে বিজেপি-এর বিপুল জয় সেই নির্বাচনকেও প্রভাবিত করবে।
 
একদিকে সোনিয়া গান্ধীর শারীরিক অসুস্থতা, অন্যদিকে রাহুল গান্ধীর পরপর ব্যর্থতা এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর সক্রিয় রাজনীতিতে না আসা কংগ্রেসের নেতৃত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন তুলছে। এ ক্ষেত্রে গান্ধী পরিবারের বাইরে কোন নেতা সামনের সারিতে আসতে পারেন কিনা সেই আলোচনাও বিভিন্ন মহলে শুরু হয়েছে।
 
নতুন করে ভারতের আঞ্চলিক দলগুলির সম্পর্কেও বিশ্লেষণের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনে যেভাবে আঞ্চলিক দলগুলির পরাজয় ঘটেছে তাতে ভারতের রাজনীতিতে বিগত বছরগুলিতে আঞ্চলিক দলগুলির প্রভাব বাড়ায় এবং তৃতীয় শক্তি হিসেবে উঠে আসার কথা আলোচিত হচ্ছিল সেই সম্ভাবনাতেও প্রশ্ন উঠছে।
 
তবে সব থেকে বড় প্রশ্ন উঠল রাহুল গান্ধীর নেতৃত্ব নিয়ে।   রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের আগেই বলেছিলেন রাহুল গান্ধীর কাছে এ নির্বাচন অতি গুরুত্বপূর্ণ। রাহুল গান্ধী নিজেও পুরো সময়টা দিয়ে ছিলেন এ নির্বাচনে। কিন্তু ফলাফল এসেছে কংগ্রেসের কাছে দুঃস্বপ্নের মতো। এখন দুটি বিষয় দেখার, আগামী দিনে কংগ্রেসের নেতৃত্বে আদৌ কোনো পরিবর্তন হয় কি না? এবং আঞ্চলিক দলগুলির তৃতীয় শক্তি হিসেবে সামনে আসার সম্ভাবনা বজায় থাকে কি না?

বাংলাদেশ সময়: ২১৪১ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৭
ভিএস/আরআইএস/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।