ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

সুর-বাদ্যে বাংলাদেশ-ভারতের সংস্কৃতি বিনিময়

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০১৬
সুর-বাদ্যে বাংলাদেশ-ভারতের সংস্কৃতি বিনিময় ছবি: আসিফ আজিজ- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মিলনায়তনের আধোআলোয় প্রথম এলো হারমনিয়াম-তবলার করুণ সুর। বাঁহাতে চাবিতে হাত বুলিয়ে মহিতোষ মেহতা গাইলেন গুজরাটি রাগপ্রধান গান ‘সরস্বতী সাদরে’।

আহমেদাবাদ, গুজরাট: মিলনায়তনের আধোআলোয় প্রথম এলো হারমনিয়াম-তবলার করুণ সুর। বাঁহাতে চাবিতে হাত বুলিয়ে মহিতোষ মেহতা গাইলেন গুজরাটি রাগপ্রধান গান ‘সরস্বতী সাদরে’।

কিছুক্ষণের জন্য দুই দেশের কয়েক শ’ শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তায় ঠাসা মিলনায়তনে নিস্তব্ধতা নামলো। এরপর সাগাম সংগীত গাইলেন ভারতী কুমার শর্মা।

এরা সবাই ভারতের পশ্চিমের শহর, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দেশ আহমেদাবাদের গুজরাট টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। শুধু গান নয়, বুধবার (৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় এল জে কলেজ ক্যাম্পাস মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হলো দুদেশের ঐতিহ্য-সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা বিনিময়। অনুষ্ঠানটি আহমেদাবাদে হওয়ায় শিক্ষার্থীরা প্রাধান্য দেয় মূলত গুজরাটি সংস্কৃতিতে।


 
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আগে ক্যাম্পাসের খেলার মাঠে একটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচ হয় গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। ভারত সরকারের আমন্ত্রণে সফররত বাংলাদেশের  ডেলিগেশন টিম প্রথমার্ধে এক গোলে এগিয়ে থাকলেও পরে ৩-১ গোলে হেরে যায়। তবে নির্জলা বিনোদনে মাঠে জমে যায় প্রচুর সংখ্যক দর্শক।

খেলা শেষে সন্ধ্যার পর মঞ্চে প্রদীপ প্রজ্বলনের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা। এসময় উপস্থিত ছিলেন, গুজরাট টেকনোলজিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রাজুল গাজ্জাল, যুব মন্ত্রণালয়ের রিজিওনাল ডিরেক্টর কমল কুমার, বিশ্ববিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শ্বেতা বাম্বুওয়ালা, এই অনুষ্ঠানের কো-অর্ডিনেটর সিএস সাঙ্গুভি  ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের কো-অর্ডিনেটর (মিডিয়া) কল্যাণ কান্তি দাশ প্রমুখ।


সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গানের পর মিকি মাউস, ছোটা ভিমসহ কয়েকটি কার্টুন চরিত্রের মিমিক্রি করে মঞ্চ মাতান শিক্ষার্থী আরশাভি ভুজ। লতা মঙ্গেশকর, ঊষা উত্থুপ ও কণিকা রাওয়ের গান-কথার অংশটিও ছিল দারুণ।
 
এরপর ঘোষণা আসে মঞ্চে লাইভ চিত্রাঙ্কন হবে। জয়দ্বীপ বাড়ৈ সাদা কাগজ সরিয়ে কালো ক্যানভাসে শুরু করেন রঙের খেলা। একনের সেই বিখ্যাত গান ‘গিভ মি ফ্রিডমের’ সঙ্গে  তাল মিলিয়ে মানুষের মাথা সৃদশ চিত্রটি মিনিট দুয়েক পর উল্টে দিলেন। সোজা হওয়ার পর সবাই তো থ। কি আশ্চর্যের বিষয়, এতো আইনস্টাইন! সব মিলিয়ে মাত্র তিন মিনিটে অসাধারণ একটি পেইন্টিংস এঁকে তাক লাগিয়ে দিলেন সবাইকে।

রবিন জোসেফ মঞ্চে এসে গুজরাট, মুম্বাই, সাউথ ইন্ডিয়া, রজনীকান্তের বিট বক্সিং শো করেন। পরে স্বীকৃতি আবার ফিরিয়ে নিয়ে যান ক্ল্যাসিকালে।
 
গান শেষে হতেই গুজরাটের ট্রাডিশনাল পোশাকে একদল বাদ্র বাজিয়ে তুললেন ঢোল, করতাল, বাঁশির ঝংকার, ট্র্যাডিশনালের পাশাপাশি বিভিন্ন জনপ্রিয় গানের সুর তুলে মাতিয়ে রাখলেন কতক্ষণ। পরে গুজরাটের ঐতিহ্যবাহী গারবা নৃত্য দেখে সত্যি মন ভরে যায় সবার। যেমন সংগীত, তেমন নান্দনিক নৃত্য।
 
ভারতীয়দের পর্ব শেষ হলে মঞ্চে দলীয় সংগীত নিয়ে ওঠেন বাংলাদেশের ইয়ুথ ডেলিগেশনের একদল সদস্য। অতুল প্রসাদের ‘আমি বাংলার গান গাই’ দিয়ে শুরু করে সাধের লাউ বানাইলি মোরে বৈরাগী দিয়ে শেষ হয়। মাঝে  চলে কয়েকটি গানের সিনক্রোনাইজিং। গানের শেষের দিকে পুরো মিলনায়তন নাচ গানে ফেটে পড়ে। সঙ্গ দেয় মঞ্চ শিল্পীদের।

এরপর আরিক আনাম খান, মাহিদুল ইসলাম ও কাজী নজরুল ইসলাম পরিবেশন করেন তিনটি আবৃত্তি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাজু রায় তার সহপাঠীকে নিয়ে সেলফিস সেলফি শিরোনামে যে মূকাভিনয় পরিবেশন করেন তা মুগ্ধ করে দর্শকদের। হালের সেলফি ম্যানিয়া কোথায় গিয়ে ঠেকেছে তার জাজ্বল্যমান উদাহরণ ছিল এ পারফরম্যান্স।
 
সবশেষে নৃত্য পরিবেশন করেন, নাজিবা বাশার, ইমা, প্রিষুতি, সোমা ও শারমিন। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেন গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। অনুষ্ঠান শেষে খোলা মাঠে ডেলিগেশন টিম ও গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গোল হয়ে একত্রে নেচে-গেয়ে দুদেশের সাংস্কৃতিক হৃদ্যতা বাড়ায় আরও।


বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রাজুল গাজ্জাল তার বক্তব্যে দুদেশের হৃদ্যিক সম্পর্ক অনেক দিন টিকে থাকার আশা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, প্রযুক্তির যুগে বন্ধুত্ব অনেকভাবে হয়, তবে এভাবে সামনাসামটি সম্পর্ক হলে তা টিকে থাকে বহুদিন।

অনুষ্ঠান শেষে গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নৃত্যশিল্পী ভূমি বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের খুব ভালো লেগেছে। এটা অনেক উপভোগ্য একটি দিন ছিলো।
 
আরেক নৃত্যশিল্পী ড্রাসাল তাদের ট্র্যাডিশনাল নৃত্য গারবার সমৃদ্ধির কথা তুলে ধরে বাংলাদেশের সংগীত ভালো লেগেছে বলে জানান বাংলানিউজকে।



এভাবে শেষ হলো ইযুথ ডেলিগেশন টিমের পঞ্চমদিন। দিল্লির বিভিন্ন স্থান ঘুরে মঙ্গলবার রাতে আহমেদাবাদ পৌঁছালেও গুজরাটে বুধবার ছিলো অভিজ্ঞতা বিনিময় ও নতুন কিছু জানা, দেখার প্রথমদিন। ১০ তারিখ সকালে দলটি কলকাতার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেবে।

** তাজমহলে হয়ে যান ‘ডিপি’, করুন ‘সিপি’!
**
সমাধিসৌধে খচিত গান্ধীর ‘শেষ উক্তি’
** দিল্লি জামে মসজিদ থেকে লালকেল্লা
** সান্ধ্য আলোয় যুদ্ধস্মৃতির ইন্ডিয়া গেট
** জাদুটানা দিল্লি জাদুঘর
** বাংলা উচ্চারণেই মুগ্ধতা ছড়ালেন রাষ্ট্রপতি প্রণব
** বাংলাদেশের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রণব মুখার্জির
** হিমালয় দেখতে দেখতে সোয়া ২ ঘণ্টায় দিল্লি!
** ভারতে বাংলাদেশের ইয়ুথ ডেলিগেশন টিম
** ভারত যাচ্ছে বাংলাদেশের ইয়ুথ ডেলিগেশন টিম  


বাংলাদেশ সময়: ০৩৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০১৬
এএ/এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।