ঢাকা, বুধবার, ৩১ চৈত্র ১৪৩১, ১৫ মে ২০২৪, ০৬ জিলকদ ১৪৪৫

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

৫৩৪ কিমি পাড়ি দিয়ে র‌্যালি এখন রাঁচিতে

মাজেদুল নয়ন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৫
৫৩৪ কিমি পাড়ি দিয়ে র‌্যালি এখন রাঁচিতে ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রাঁচি, ঝাড়খণ্ড থেকে: প্রথম দিনে ৫৩৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল (বিবিআইএন) মৈত্রী মোটর র‌্যালি। ১৬ ঘণ্টা যাত্রা করে রোববার (১৫ নভেম্বর) স্থানীয় সময় দিনগত রাত ১২টা নাগাদ ঝাড়খণ্ডের রাজধানী রাঁচিতে এসে পৌঁছায় এ র‌্যালি।


 
সোমবার (১৬ নভেম্বর) সকালে রাঁচি থেকে ফ্ল্যাগ অফ হয়ে পাটনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে ২০ গাড়ি বহরের এ দলটি। এ সময় ঝাড়খণ্ডের গভর্নর ফ্ল্যাগ-অফ করার কথা রয়েছে। দ্বিতীয় দিনের এ যাত্রায় ন্যাশনাল হাইওয়ে ২৩, ৩৩ ও ৩১ ধরে আট ঘণ্টার ভ্রমণ শেষে বিহারের রাজধানী পাটনায় পৌঁছানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
 
এদিকে, রোববারের ১৬ ঘণ্টা ভ্রমণে দলটিকে বিভিন্ন জেলা ও সড়কে উষ্ণ অর্ভ্যথনায় স্বাগত জানিয়েছেন স্থানীয় জনসাধারণ। ফুলের মালা, তোড়া, দীপক, মিষ্টি, মণ্ডা, জুস দিয়ে অভিবাদন ও আপ্যায়ন করা হয় অতিথিদের। এছাড়াও সব জায়গাতেই স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী খাবারও পরিবেশন করা হয়। স্থানীয় জনগনের আন্তরিকতায় মুগ্ধ র‌্যালিতে অংশ নেওয়া চার দেশের মানুষ।  

রাতে রাঁচির সেরাইকেল্লায় স্কুল মাঠে দলটিকে উষ্ণ অর্ভথনা জানান এলাকাবাসী। এ সময় ঐতিহ্যবাহী চাউ নৃত্য পরিবেশন করা হয়। সেরাইকেল্লার রাজা কুমার বিজয় প্রতাপ সিং দেও দলটিকে তাদের পারিবারিক ঐতিহ্য ঘুরে দেখান।
 
এর আগে বিকেলে ময়ূরভাঞ্জ প্যালেসের সামনেই আয়োজন হয় আরেকটি সংবর্ধনার। সেখানে স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় মুগ্ধ হন সকলে।
 
রাম গোবিন্দপুরে খোলা মাঠে দেওয়া হয় সংবর্ধনা। গ্রামের মানুষ তাদের নেতাকে কাছে পেয়ে উদ্বেলিত। একই সঙ্গে চার দেশের অতিথিদের জন্য ভালোবাসার সবটুকুই প্রকাশ করেন তারা।
 
মহারাজা প্রাভীন চন্দ্র ভেঞ্জ দেও ক্ষমতাসীন বিজু জান্তা দলের (বিজেডি) এমএলএ (মেম্বর অব লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলি) এবং উড়িষ্যার সাবেক ক্রীড়া মন্ত্রী।

এছাড়া আয়োজক প্রতিষ্ঠান কলিঙ্গ মোটর্সের প্রেসিডেন্টও প্রাভীন। রয়েছেন বিবিএন ফ্রেন্ডশিপ মোটর র‌্যালির সঙ্গেই। ফলে র‌্যালির পথে পথে বাড়তি সংবর্ধনা পাচ্ছেন অংশগ্রহণকারীরা।
 
সবগুলো সংবর্ধনাতেই বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বদানকারী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব নিরোধ চন্দ্র মণ্ডল এলাকাবাসীকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল- এ যাত্রার মধ্যদিয়েই উপ-আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে পৃথিবীতে পরিচিত হবে। চার দেশের মধ্যে সহযোগিতামূলক সর্ম্পক তৈরিতে বাংলাদেশ সবসময়ই প্রস্তুত।
 
তিনি ভারতবাসীকে বাংলাদেশ ভ্রমণের নিমন্ত্রণ করেন।
 
ভারতের ন্যাশনাল হাইওয়ে-৫ এখন এশিয়ান হাইওয়ে-৪৫। কটক, বাড়িপদা, রারিয়াংপুর, জমশেদপুর হয়ে র‌্যালিটি রাঞ্চিতে পৌঁছায়।
 
ভুবণেশ্বর থেকে যাত্রা করে বারিপদা পর্যন্ত ন্যাশনাল হাইওয়ে-৫ বেশ প্রসস্ত। কোথাও ছয় লেন, কোথাও চার লেনের। তবে রামগোবিন্দপুরে প্র্রবেশের পর থেকে রাঁচি পর্যন্ত দুই লেনের রাস্তাই বেশি। তবে রাস্তার পাশ প্রশস্ত করার যথেষ্ট জায়গা রয়েছে।
 
উড়িষ্যা বা ঝাড়খণ্ডের প্রকৃতি বাংলাদেশের মতোই। দু’ধারে বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত, নারকেল বাগান, আমবাগান- সবই রয়েছে। তবে রাঁচিতে শীত পড়ে গেছে। রাতে ১৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে এসেছে তাপমাত্রা।
 
চার দেশের সরকারের সহযোগিতায় র‌্যালির মূল আয়োজক ভারতের কলিঙ্গ মোটর্স। চলবে টানা ১৭ দিন। ভারত ছাড়া বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালের ১৪ জন প্রতিনিধি রয়েছেন এতে। পাড়ি দেবেন চার হাজার ২২৩ কিলোমিটার পথ। ভারতের বিখ্যাত সব অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় কার রেসাররাও রয়েছেন এ র‌্যালিতে।
 
শনিবার (১৪ নভেম্বর) উড়িষ্যার রাজধানী ভুবণেশ্বরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর রোববার সকালে সেখান থেকে র‌্যালির পতাকা ওড়ানো হয়। ১৭ তারিখ ফ্ল্যাগ অফ হবে পাটনা থেকে। ন্যাশনাল হাইওয়ে-৭৭ ধরে মুজাফরপুর হয়ে দুপুরে মাধুবানিতে পৌঁছে যাবে এ র‌্যালি। দুপুরের পর ফরবেগসান, দেলখোলা হয়ে রাতের মধ্যেই শিলিগুড়ি। ন্যাশনাল হাইওয়ে-৫৭ এবং ৩১ এর উপর দিয়ে এই যাত্রা। একদিনে অতিক্রম করবে ৫৪৬ কিলোমিটার পথ।
 
১৮ নভেম্বর ফ্ল্যাগ অফ শিলিগুড়িতে। ন্যাশনাল হাইওয়ে-৩১/এ ধরে দলটি পৌঁছাবে গ্যাংটকে। পাহাড়ি রাস্তায় এদিন ১১৪ কিলোমিটারের বেশি পথ অতিক্রম সম্ভব নয়।

১৯ তারিখে গ্যাংটকে সেমিনার। সিকিমের চিফ মিনিস্টার এ সেমিনার উদ্বোধনের কথা রয়েছে। ২০ তারিখে গ্যাংটক থেকে ফ্ল্যাগ অফ। সেখান থেকে পেদং, রিশপ, লাভা, চালশা হয়ে দলটি পৌঁছাবে ফুয়েনতসলিং। ব্যবহার করা হবে ন্যাশনাল হাইওয়ে-৩১/এ, ৩১/সি। ভুটানের এই সীমান্তেই রাত কাটবে। পাড়ি দেওয়া হবে ২৩৬ কিলোমিটার পথ।
 
অষ্টম দিনে ২১ নভেম্বর পাড়ি দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ১৬৮ কিলোমিটার। থিম্পু পৌঁছাতে পৌঁছাতে এদিন রাত হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। এরপর ২২ নভেম্বর থিম্পুতে সেমিনার হবে বিবিআইএন’র ওপর।
 
২৩ নভেম্বর, দশম দিনে থিম্পু থেকে ফ্ল্যাগ অফ হয়ে ভুমতাংয়ে পৌঁছবে র‌্যালি। ২৭৫ কিলোমিটারের এই পথ পাড়ি দিতে দলটি অতিক্রম করবে দোচুলা, সেফু চাজাম, ত্রংসার মতো জায়গা।
 
ভুটানের পথে গাড়ির গতি বেশি থাকবে না। তাই ২৪ নভেম্বর মংগারে পৌঁছেই রাত কাটবে। ১৮৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করবে এদিন। ২৫ নভেম্বর র‌্যালির ১২তম দিনে মংসার থেকে যাত্রা করে ত্রাসিংজাং, সামদ্রুপ জংকার, রাঞ্জিয়ার পথ ধরে ভুটান সীমান্ত পার হয়ে গৌহাটি। এরপর সেখানেই রাত্রিযাপন। এদিন ৩৯৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করবে এই মোটর র‌্যালি।  
 
২৬ নভেম্বর গৌহাটি থেকে ফ্ল্যাগ অফ। এরপর শিলং ধরে শিলচর পৌঁছাতে দলটি অতিক্রম করবে ৩৪৪ কিলোমিটার পথ। ১৪তম দিনে শিলচর থেকে রওনা করে আগরতলা যেতেই সন্ধ্যা হয়ে যাবে। এর মধ্যেই দূরত্ব অতিক্রান্ত হবে ২৯০ কিলোমিটার।  

১৫তম দিনে বাংলাদেশে প্রবেশের পালা। সকালেই আগরতলা থেকে রওনা করে বিলোনিয়া সীমান্ত পার হয়ে ফেনী পৌঁছানোর কথা রয়েছে দলটির। রাতে চট্টগ্রামে অবস্থান। এদিন ২১৬ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করবে র‌্যালিটি।
 
র‌্যালির ১৬ তম দিনে, ২৯ নভেম্বর চট্টগ্রামে ফ্ল্যাগ অফ হওয়ার পর ২৫৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ঢাকায় পৌঁছে রাত্রিযাপন। ৩০ নভেম্বর ঢাকায় গুরুত্বপূর্ণ সেমিনারে অংশ নিবে র‌্যালি।
 
ডিসেম্বরের প্রথম দিনটি র‌্যালির ১৮তম দিন। ঢাকায় ফ্ল্যাগ অফ হয়ে যশোর, বেনাপোল হয়ে কলকাতা পৌঁছাতে ৩২৯ কিলোমিটারের দীর্ঘ পথ অতিক্রম করবেন অংশগ্রহণকারীরা।
 
চার হাজার ২২৩ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে কলকাতায় ২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে সেমিনার।
 
** মহারাজার পথে পথে সংবর্ধনা
** তাদের জন্য যত ভক্তি
** ভুবনেশ্বর থেকে রাঁচির পথে মোটর র‌্যালি
** মন্দিরের শহরে...
** ওড়িশায় বিবিআইএন র‌্যালির উদ্বোধন
** পুরির বাতাসে....
** ১৯ দিনে ৩ দেশে ৪২২৩ কিলোমিটার মোটর র‌্যালি
** বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল মৈত্রী মোটর র‌্যালিতে মাজেদুল নয়ন
** আই.আই..আই...চেন্নাই এক্সপ্রেস!
** রামহরি মিস্ত্রী লেনের কথা
** রাস্তায় দাঁড়িয়ে স্যান্ডউইচ আর ভেলপুরি
** নিউমার্কেটে হ্যাপি দিওয়ালি
** পুরুষ প্রবেশ নিষেধ
** ‘আমি সীমানায় বিশ্বাসী নই’

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৫
এসএইচ/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।