ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ছাত্রলীগের এক গ্রুপের দখলে ৩ হল, আসন বরাদ্দ কোন প্রক্রিয়ায়? 

মোহাম্মদ আজহার, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২২
ছাত্রলীগের এক গ্রুপের দখলে ৩ হল, আসন বরাদ্দ কোন প্রক্রিয়ায়?  ...

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: দীর্ঘদিন পর আবারও আবাসিক হলে আসন বরাদ্দের নোটিশ দিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) কর্তৃপক্ষ।  তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলো আবাসিক হল বর্তমানে শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন উপ-গ্রুপের দখলে রয়েছে।

দখলদারিত্বে সবচেয়ে এগিয়ে ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক উপ-গ্রুপ বিজয়। গ্রুপটি দখল করে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি আবাসিক হল।
 

এছাড়া একটি করে হল দখলে আছে বগিভিত্তিক উপগ্রুপ সিক্সটি নাইন, সিএফসি এবং এপিটাফ গ্রুপের কাছে। অন্যদিকে কয়েকটি গ্রুপ সম্মিলিতভাবে দখলে রেখেছে ছাত্রদের বাকি আবাসিক হলটিও।  

ছাত্রদের ৭ হলের কোনটি কার দখলে

বিজয় গ্রুপের দখলে রয়েছে- চবির এএফ রহমান, আলাওল এবং সোহরাওয়ার্দী হল। সিক্সটি নাইন গ্রুপের দখলে শাহজালাল হল, সিএফসি গ্রুপের দখলে চবির আমানত হল এবং এপিটাফ গ্রুপের দখলে মাস্টারদা সূর্য সেন হল। এছাড়া চবির শহীদ আবদুর রব হল সম্মিলিতভাবে দখল করে আছে বাংলার মুখ, ভার্সিটি এক্সপ্রেস (ভিএক্স), সিএফসি, কনকর্ড এবং উল্কা।  

হল দখলের এমন পরিস্থিতিতে ঠিক কিভাবে এবার আবাসিক হলে আসন বরাদ্দ দিবে কর্তৃপক্ষ- শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের কাছে এটাই এখন বড় প্রশ্ন।  

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলেন, আসন বরাদ্দের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও হলগুলো ছাত্রলীগের দখলে। অবৈধভাবে হলে অবস্থানকারী অছাত্রদের হল থেকে বের করার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের  তেমন কোনও প্রস্তুতি আছে বলে মনে হয় না। শেষ পর্যন্ত হয়তো হলের আসনগুলো ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপের মাঝেই ভাগ করে দিবে কর্তৃপক্ষ।  

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের থাকার পরিবেশ নেই। ছাত্রলীগের বিভিন্ন প্রোগ্রাম, মিছিল-মিটিং, মারামারিতে যেভাবে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করা হয়- এটা হলে থাকা শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে ভালো জানেন। আর কর্তৃপক্ষ ছাত্রলীগের দখলে থাকা কোনও কক্ষে যদি বৈধ একজন সাধারণ শিক্ষার্থীকে থাকার সুযোগও দেন, সেটা নিয়েও শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ চড়াও হবে। তাই আবাসিক হলে আসন বরাদ্দ দেওয়া যেমন সময়ের দাবি, তেমনি হলে শিক্ষার পরিবেশ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও এখন জরুরি। প্রশাসন এ বিষয়গুলো কিভাবে সামাল দিবে অথবা এ বিষয়ে প্রশাসনের আদৌ কোনও প্রস্তুতি আছে কি-না সেটাই এখন দেখার বিষয়।  

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে সর্বশেষ আসন বরাদ্দ দেওয়া হয় ২০১৭ সালের জুন মাসে। এরপর গত ৫ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও আবাসিক হলে আসন বরাদ্দ দিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ পর্যন্ত আসন বরাদ্দের জন্য ৩ বার বিজ্ঞপ্তি দিলেও অজ্ঞাত কারণে আলোর মুখ দেখেনি প্রশাসনের এ উদ্যোগ। তবে কি এবার আসন বরাদ্দ হবে? নাকি আরও একবার শিক্ষার্থীদের আবেদন জমা নিয়ে ঘুমিয়ে পড়বে কর্তৃপক্ষ, সেটা বুঝা যাবে কিছুদিন পরেই।

গত ২০ সেপ্টেম্বর আবাসিক হলে আসন বরাদ্দ সংক্রান্ত সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ২১ অক্টোবর পর্যন্ত সকল আবাসিক হলে আসন বরাদ্দের জন্য আবেদন করতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে ২০১৯ সালের ২১ মার্চ, ০৯ এপ্রিল এবং ১৭ জুন আসন বরাদ্দের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সে সময় আবেদনকারী শিক্ষার্থীরা এখনও হলে কোনও আসন পাননি। আবেদনকারী অনেকেরই ইতিমধ্যে শিক্ষাজীবন শেষ পর্যায়ে, কেউ পাস করে বের হয়ে গেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আসন বরাদ্দ শুরু হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে যেকোনও সময় বিশেষ পরিদর্শক টিম ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালাবে। তখন অবৈধভাবে হলে অবস্থানকারী কাওকে পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া সুষ্ঠুভাবে আসন বরাদ্দের জন্য আমাদের বেশকিছু পরিকল্পনা রয়েছে। হল প্রভোস্টরা বিষয়টি দেখবেন। ফাঁকা আসনগুলোতেই বরাদ্দ দেওয়া হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২২
এমএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।