ঢাকা, শনিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

নদীর নামে চারটি সাদা বাঘ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৮ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০২২
নদীর নামে চারটি সাদা বাঘ চারটি বাঘশাবকের পরিচর্যা করছেন চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর।

চট্টগ্রাম: পদ্মা, মেঘনা, সাঙ্গু ও হালদা। নদীমাতৃক বাংলাদেশের চারটি নদীর নামে নামকরণ করা হয়েছে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় জন্ম নেওয়া চারটি সাদা বাঘ শাবকের।

হালদা বাঘিনী, বাকি তিনটি বাঘ। এ চিড়িয়াখানায় জন্ম নেওয়া প্রথম সাদা বাঘটির নাম রাখা হয়েছিল শুভ্রা।
 

গত ৩০ জুলাই চারটি সাদা বাঘের জন্মের পর এক মাস আলাদা একটা খাঁচায় মা ‘পরী’র সঙ্গে রাখা হয়েছিল। সোমবার (২৯ আগস্ট) বিকেলে বাঘ শাবকগুলোকে প্রথম জনসমক্ষে আনা হয়। এ সময় বাঘগুলোর নামকরণ করেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও চিড়িয়াখানা নির্বাহী কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ মমিনুর রহমান।

চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ বাংলানিউজকে জানান, প্রতিটি বাঘ শাবকের বর্তমান ওজন প্রায় দেড় কেজি। এখনো মায়ের দুধ পান করে বেড়ে উঠছে তারা। এক মাস পর মুরগির মাংস খেতে দেওয়া হবে বাঘ শাবকদের। চিড়িয়াখানায় এখন বাঘের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৬টি। এর মধ্যে পাঁচটি দুর্লভ সাদা বাঘ, তিনটি ছেলে ও দুইটি মেয়ে।   

তিনি জানান, সাদা বাঘের শাবকগুলো দেখতে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় দর্শকদের ভিড় বাড়ছে। জনপ্রতি টিকিটের দাম ৫০ টাকা। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত চিড়িয়াখানা খোলা থাকছে। এখানে ৬৬ প্রজাতির ৬২০টি পশুপাখি রয়েছে।  

সূত্র জানায়, বেশ কয়েক বছর ধরে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা নিজস্ব আয়ে ব্যাপক উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে। নতুন নতুন পশুপাখি সংগ্রহ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, খাঁচা সম্প্রসারণসহ দৃশ্যমান পরিবর্তন এসেছে। পাশাপাশি চিড়িয়াখানার তহবিলও বড় হয়েছে, প্রায় ৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা উদ্বৃত্ত রয়েছে এখন। শিগগিরই আফ্রিকা ও নেদারল্যান্ডস থেকে ক্যাঙারু, উট, ম্যাকাউ, ওয়াইল্ড বিস্ট, সিংহ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন চিড়িয়াখানা ও সাফারি পার্কের সঙ্গে পশু বিনিময়ের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে এখন আমদানি করা বাঘের বংশবৃদ্ধি হওয়ায় দেশের বিভিন্ন চিড়িয়াখানা ও সাফারি পার্কের সঙ্গে পশুর বিনিময়ে বাঘ দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বিশেষ করে জলহস্তী, জিরাফ ইত্যাদি আনতে চায় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।  উন্নয়ন ও পশুপাখিতে চিড়িয়াখানাকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি কর্মীদের সুযোগ-সুবিধাও বাড়াচ্ছে কর্তৃপক্ষ। চালু করা হয়েছে তাদের প্রভিডেন্ট ফান্ড। চিড়িয়াখানার প্রাণী ও খাদ্য পরিবহন ও বিবিধ কাজের জন্য কেনা হয়েছে একটি পিকআপ গাড়ি। আগ্রহী দর্শকরা যাতে ঘরে বসে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার টিকিট কাটতে পারেন সেই লক্ষ্যে চালু হয়েছে ই টিকিটিং সিস্টেম।  

একসময় চার বছর বাঘশূন্য থাকা চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে দরপত্রের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার প্রজাতির বাঘ-বাঘিনী আমদানি করা হয়। বাঘগুলোর বৈজ্ঞানিক নাম ‘প্যানথার টাইগ্রিস টাইগ্রিস’। এর মধ্যে বাঘটির বয়স ছিল ১১ মাস, বাঘিনীর বয়স ৯ মাস। দুটি কাঠের বাক্সসহ বাঘ দুটির ওজন ছিল ৪২০ কেজি। এগুলোর গড় আয়ু ১৪-১৫ বছর। তবে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় ভীম নামের একটি বাঘ ২৩ বছর বেঁচেছিল। বাঘগুলো চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া বাবদ ৩৩ লাখ টাকা খরচ হয়।  

১৯৮৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় ২০০৩ সালে ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে দুটি বাঘ আনা হয়েছিল। ২০০৬ সালে বাঘ ‘চন্দ্র’ মারা যায়। ২০০৯ সালে তার সঙ্গী ‘পূর্ণিমার’ ক্যান্সার ধরা পড়ে। ২০১২ সালের ৩০ অক্টোবর পূর্ণিমা মারা যায়। এরপর বাঘশূন্য ছিল চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা।  

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বর্তমানে শতাধিক প্রজাতির অর্ধসহস্রাধিক পশু ও পাখি আছে। পশুর মধ্যে আছে সিংহ, পুরুষ ভাল্লুক, কুমির, চিত্রা হরিণ, মায়া হরিণ, উল্টোলেজি বানর, উল্লুক, হনুমান, গয়াল, সজারু, শেয়াল, মেছোবাঘ, গন্ধগোকুল, জেব্রা ইত্যাদি রয়েছে। রয়েছে ময়ূর, উটপাখি, ইমু, তিতির, টিয়া, চিল, শকুন, টার্কি, পায়রাসহ একটি পক্ষীশালা এবং প্রচুর অজগর সাপ।

বাংলাদেশ সময়:  ১০৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০২২ 
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।