চট্টগ্রাম: সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের ৭টি টিম নগরের ২৫টি কনটেইনার ডিপো পরিদর্শন করেছেন। এসময় ডিপো কর্তৃপক্ষ থেকে সব ধরনের কাগজপত্র সংগ্রহ করেন তারা।
শনিবার (১১ জুন) থেকে চট্টগ্রামের কনটেইনার ডিপোগুলো পরিদর্শন শুরু করে ফায়ার সার্ভিস। ২৫টির মধ্যে ২২টি কনটেইনার ডিপো সচল রয়েছে।
বুধবার (১৫ জুন) পরিদর্শক দল তাদের প্রতিবেদন দাখিল করবেন। সেই প্রতিবেদন ঢাকা হেডকোয়ার্টারে প্রেরণ করা হবে। সেখান থেকে ফিরতি আরেকটি চিঠির মাধ্যমে যেসব ডিপোতে অনিয়ম রয়েছে সেসব ডিপোগুলোকে সতর্ক করা হবে।
মঙ্গলবার বিএম কনটেইনার ডিপোসহ সীতাকুণ্ডের আরও চারটি ডিপো থেকে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্সসহ সব ধরনের কাগজপত্র সংগ্রহ করেছে ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক দল।
আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক ফারুক হোসেন সিকদার বাংলানিউজকে বলেন, পরিকল্পিত উপায়ে ডিপোতে কনটেইনার রাখতে ডিপো কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে। পরে তাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ডিপোগুলোর ভেতর কী কী পণ্য রাখা আছে, কীভাবে সেগুলোর ব্যবস্থাপনা হয়, নিরাপত্তাব্যবস্থা কী, সেসব খতিয়ে দেখার পাশাপাশি বিভিন্ন নথি ও তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। যেসব ডিপোতে অগ্নিনিরাপত্তামূলক পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই, তাদের সেগুলো বাস্তবায়ন করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
শ্রম আইন অনুযায়ী, কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি বিভাগে কর্মরত শ্রমিকদের কমপক্ষে ১৮ শতাংশকে অগ্নিনির্বাপণ, জরুরি উদ্ধার ও প্রাথমিক চিকিৎসা এবং বহনযোগ্য অগ্নিনির্বাপণযন্ত্রের ব্যবহার সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শ্রমিকদের মধ্য থেকে অগ্নিনির্বাপণ দল, উদ্ধারকারী দল ও প্রাথমিক চিকিৎসা দল (প্রতিটি দলে ছয়জন করে) গঠন করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
জানা গেছে, সীতাকুণ্ডের ছয়টি কনটেইনার ডিপোর তিনটিতে ফায়ার হাইড্রেন্ট (অগ্নিনির্বাপণকাজে ব্যবহৃত বিশেষ পানিকল) ও নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ নেই। ছয়টি কনটেইনার ডিপোর মধ্যে শুধু পোর্ট লিংক কন্টেইনার ডিপোতে রাসায়নিকের কনটেইনার রাখার তথ্য পেয়েছে ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক দল। সেখানে কনটেইনারগুলো অপরিকল্পিতভাবে রাখা আছে। সেগুলোকে পরিকল্পিতভাবে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ডিপো ব্যবস্থাপনায় রাসায়নিকে ভর্তি কনটেইনারগুলোকে অন্যান্য কনটেইনার থেকে আলাদা রাখার জন্য বলেছে ফায়ার সার্ভিস টিম। এ জন্য দেওয়াল নির্মাণের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
গত ৪ জুন সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের সদস্য ১০ জন। আহত হয়ে চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হন দুই শতাধিক মানুষ। দুর্ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শন ও লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টি যথাযথ ছিল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ জন্য চট্টগ্রামের সব কটি কনটেইনার ডিপো ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা পরিদর্শনের উদ্যোগ নেয় ফায়ার সার্ভিস।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০২২
বিই/এসি/টিসি