ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৮ মে ২০২৪, ১৯ জিলকদ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

রাঙামাটির হ্রদে ভাসমান বাজার সমতা ঘাট

সোহেল সরওয়ার, সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৪ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২২
রাঙামাটির হ্রদে ভাসমান বাজার সমতা ঘাট ছবি: বাংলানিউজ

রাঙামাটি থেকে ফিরে: একের পর এক সারি সারি নৌকা এসে ভিড়ছে ঘাটে। নৌকাভর্তি মৌসুমি ফল শ্রমিকরা ঝুড়িতে নিয়ে ট্রাকে তুলছেন।

সেই ট্রাক যাচ্ছে আড়তে, সেখান থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র।

রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে এই ভাসমান বাজার, অবস্থান বনরুপা বাজারে।

এটি সমতা ঘাট নামে পরিচিত। এখানে জমজমাট বিকিকিনির দৃশ্য দেখতে আসেন পর্যটকরাও।

শুধু মৌসুমি ফল নয়, পাহাড়ের বাসিন্দাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ পাহাড়ে উৎপাদিত সব পণ্যই পাওয়া যায় এই ভাসমান বাজারে। রাঙামাটির বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই কেউ নৌকা আবার কেউ ইঞ্জিনচালিত বোটে পাহাড়ে উৎপাদিত ফলমূল নিয়ে আসেন সমতা ঘাটে।  

ঘাটের তীর ঘেঁষে সারি সারি ভাসমান নৌকাগুলো দোলে ঢেউয়ের তালে। সেখানেই চলে ব্যাপারীদের সঙ্গে দর কষাকষি। অনেকে আগে থেকেই বায়না করে রাখেন। চলতি মৌসুমে চলছে আনারস, তরমুজ, কাঁঠাল, বিভিন্ন জাতের কলা, কদবেল, লিচু, পেঁপে, জাম্বুরা সহ হরেক ফলমূলের বেচা-কেনা। তবে ফল সংরক্ষণের জন্য এখানে নেই হিমাগার।

ব্যবসায়ীরা জানান, সপ্তাহের প্রতি শনিবার, সোমবার, মঙ্গলবার ও বুধবার সমতা ঘাটে এই ভাসমান বাজার বসে। ঢাকা-চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন জেলার পাইকারি ব্যবসায়ীরা এখানে আসেন। এসব ফলমূল রাঙামাটি জেলার চাহিদা মিটিয়ে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। হিমাগার না থাকায় প্রতি বছর হাজার টন ফল পচে যায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রাঙামাটি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ বছর মার্চ-এপ্রিল মাসে বৃষ্টি হওয়ায় আম, কাঁঠাল, আনারস, লিচুসহ অন্যান্য মৌসুমি ফল উৎপাদনের উপযোগী আবহাওয়া ছিল। চলতি মৌসুমে জেলায় দুই হাজার একশ হেক্টর জমিতে হানিকুইন জাতের আনারস চাষ করা হয়েছে। আম্রপালির ফলনও ভালো হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, রাঙামাটিতে ২ হাজার ৯৫৫ হেক্টরে আম, ৩ হাজার ৮৬৩ হেক্টরে কাঁঠাল, ১ হাজার ৪৯৫ হেক্টরে লিচু, ১৩ হাজার ৭৫০ হেক্টরে কলা, ১ হাজার ২০০ হেক্টরে জাম্বুরা, ৭৬০ হেক্টরে কমলা ও ১৩৫ হেক্টরে তরমুজের চাষ হয়। প্রতিবছর আবাদ বাড়ছে, লাভের মুখ দেখায় খুশি ফল চাষিরা।

ভাসমান বাজারের ব্যবসায়ী দীপ্তিময় চাকমা জানান, নানিয়ারচর উপজেলা থেকে ইঞ্জিনচালিত বোটে করে দুই দফা আনারস নিয়ে এসে বনরূপা সমতাঘাটে বিক্রি করছেন। এ বছর ১০ একর জমিতে আনারস চাষ করেছেন। উৎপাদনও হয়েছে ভালো। তবে বাজারে আনারসের দাম পূর্বের তুলনায় কিছুটা কম।

আরেক ভাসমান বাজারের ব্যবসায়ী দীপংকর চাকমা জানান, লংগদু উপজেলা থেকে নৌকায়  কাঁঠাল নিয়ে এসে শহরের বনরূপা সমতাঘাটে বিক্রি করেন তিনি। তাঁর কাছ থেকে  ব্যাপারীরা কাঁঠাল পাইকারি দামে কিনে নেন। সপ্তাহে দুইদিন আসেন এই ঘাটে।

সরেজমিন দেখা গেছে, সমতা ঘাট ঘুরে তবলছড়ি, পৌর ট্রাক টার্মিনাল এবং রিজার্ভ বাজারে নেওয়া হচ্ছে মৌসুমি ফল। এসব ফল ট্রাকে করে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কপথেও যাচ্ছে ফলবোঝাই ট্রাক।

রাঙামাটি শহরের বাতাসে এখন ভাসছে মৌসুমি ফলের ঘ্রাণ। সমতা ঘাটে এলে সেই ঘ্রাণ নাকে আসে সহজেই। উৎপাদিত ফসল নৌকায় এনে বিক্রির পর পাহাড়ের মানুষগুলোর মুখে ফুটে ওঠে এক চিলতে হাসি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২২
এসএস/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।