ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘লাল-সবুজের পতাকার সঙ্গে জীবন কাটিয়ে দিতে চাই’   

সোহেল সরওয়ার, সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০২১
‘লাল-সবুজের পতাকার সঙ্গে জীবন কাটিয়ে দিতে চাই’    ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় পতাকার মূল নকশাকার ছাত্রনেতা শিবনারায়ণ দাস। ১৯৭০ সালের ৬ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলের একটি কক্ষে তিনি যে পতাকার নকশা এঁকেছিলেন, সেই পতাকাই ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় উত্তোলিত হয়।

সবুজ জমিনের ওপর লাল সূর্যের মাঝে হলুদ রঙের বাংলার মানচিত্র খচিত পতাকার এই রূপটি ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি সরকারিভাবে গৃহীত হয়। তবে এর আগে ১২ জানুয়ারি পতাকা থেকে মানচিত্রটি সরিয়ে ফেলা হয়, ফুটিয়ে তোলার অসুবিধার কারণে।

সবুজ রং বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতি ও তারুণ্যের প্রতীক, বৃত্তের লাল রং উদীয়মান সূর্য, স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারীদের রক্তের প্রতীক। একাত্তরে ত্রিশ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত মহান স্বাধীনতার প্রতীক আমাদের জাতীয় পতাকা।

শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার এ পতাকা সেলাই করে জীবন পার করছেন আবু খলিফা। চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানাধীন লয়েল রোডের সাফা কমপ্লেক্সে আবু খলিফার ‘পতাকা বিতান’ নামের দোকানটি ছেয়ে আছে পতাকায়।  

আসছে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস, বিজয় দিবস, বিজয় র‌্যালি। তাই প্রতি বছরের ডিসেম্বর মাস এলেই আবু খলিফার ব্যস্ততা বেড়ে যায়। সকাল আটটা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত পতাকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটছে তার। বিভিন্ন আকারের বাংলাদেশি পতাকায় ভরিয়ে তুলছেন দোকান।  

আবু খলিফা বাংলানিউজকে বলেন, আমার নাম আবু আহমেদ। চট্টগ্রামে দর্জিদের খলিফা সম্বোধন করা হয়। তাই আমার নাম হয়ে গেছে আবু খলিফা। আশির দশকে ফেনীর লালপোল থেকে চট্টগ্রামে এসেছিলাম সিনেমা প্যালেস এলাকার ‘আবদুল মান্নান অ্যান্ড সন্স’ নামের পতাকার দোকানে চাকরি নিয়ে।  আমি দোকানে বেশিরভাগ পতাকা সেলাই করতাম। বাংলাদেশের জাতীয় দিবস, বিশ্বকাপ ফুটবল ও ক্রিকেটকে ঘিরে পতাকার চাহিদা ছিল বেশি। দোকানটি বন্ধ হয়ে গেলে নিজেই পতাকার দোকান খুলেছি।

পতাকা সেলাই ও বিক্রি করেই সংসার চলে আবু খলিফার। এক মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। এক ছেলেকে সৌদি আরব পাঠিয়েছেন। আরেক ছেলে পড়াশোনা করে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পতাকা তৈরি করি মনের তাগিদে। বিক্রি হবে কি হবে না জানি না। না হলেও দুঃখ নেই। ব্যবসা হয় বিশ্বকাপ ফুটবলের সময়। আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, ইতালি, জার্মানি, জাপানসহ বিভিন্ন দেশের পতাকা ভালো বিক্রি হয়।

‘টেরিবাজার থেকে পাইকারি কাপড় কিনে পতাকা তৈরি করি আমি। পলিয়েস্টার কাপড়ের পতাকায় খরচ কম পড়ে তাই বিক্রিও হয় বেশি। উন্নতমানের সুতোর কাপড়ের পতাকা বানাই অর্ডার পেলে। আমার তৈরি পতাকা নগরের রিয়াজউদ্দিন বাজার, বিভিন্ন উপজেলায় পাইকারি নিয়ে যান। অনেক মৌসুমি ফেরিওয়ালাও নিয়ে যায় ডিসেম্বরে’।  

আবু খলিফা বলেন, ‘পতাকা হচ্ছে সম্মান ও গর্বের। এই লাল-সবুজের পতাকার সঙ্গে জীবনটা কাটিয়ে দিতে চাই।  পতাকা সবাই সেলাই করতে পারে না। সঠিক মাপের পতাকা না হলে আইনি ঝামেলা পোহাতে হয়। আমি দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও বৃত্তের সঠিক মাপের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকি। সর্বনিম্ন ৩ টাকা থেকে ৩০০ টাকা দামের পতাকাও তৈরি করি’।  

বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০২১
এসএস/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।