চট্টগ্রাম: দীর্ঘ দুই যুগ পরে আগামীকাল মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তবে সম্মেলন আগামীকাল হলেও সোমবার (৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায়ও সম্মেলনে কারা কাউন্সিলর থাকছেন, কারা থাকছেন ডেলিগেট সে বিষয়ে জানেন না নেতাকর্মীরা।
কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে একাধিক নেতার নাম শোনা যাচ্ছে। আগামীকাল মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) সকালে বাঁশখালী সারকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে সম্মেলন শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
জানা গেছে, সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছিল। এরপর মাঝখানে জাতীয় নির্বাচনে বিরোধীতা করায় তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলমকে বরখাস্ত করা হলে অধ্যাপক আব্দুল গফুরকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। দুই নেতা এতদিন দায়িত্ব পালন করলেও গত তিনবছর ধরে দুইজনের মধ্যে বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। বর্তমানে ৫১ সদস্যের অধিকাংশ নেতাই মারা গেছেন। জীবিত নেতাদের মধ্যে মাত্র ৫ জন নেতা রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন বলে জানা গেছে।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও হুইপ আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, সম্মেলন উদ্বোধন করবেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ এমপি, প্রধান বক্তা হিসেবে থাকবেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান।
এদিকে গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে বাঁশখালী উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ওয়ার্ড সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে না গিয়ে ওয়ার্ড সম্মেলন করা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এ সম্মেলন প্রক্রিয়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজেই যাননি। গঠনতন্ত্র বিরোধী এই সম্মেলন নিয়ে কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল নেতাদের কাছে সাংসদের বিরুদ্ধে নালিশ দিয়েছেন জেলার দায়িত্বশীল নেতারাও।
নিয়মানুযায়ী ওয়ার্ড সম্মেলনে ওয়ার্ড সভাপতি সভাপতিত্ব করবেন, সাধারণ সম্পাদক সঞ্চালনা করবেন। প্রধান অতিথি থাকবেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি। একইভাবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সঞ্চালনা করবেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সম্মেলনে প্রধান অতিথি থাকবেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। এই নিয়ম না মেনে স্থানীয় সংসদ সদস্য নিজেই প্রতিটি ওয়ার্ড সম্মেলনে জেলার দায়িত্বশীল নেতাদের পাশ কাটিয়ে প্রধান অতিথি ছিলেন। যেখানে সংসদ সদস্যের অপছন্দের নেতারা ইউনিয়নের দায়িত্বে আছেন সেখানে কাউকে অতিথি রাখা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল গফুরের মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে। যদিও সোমবার (৫ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সংবাদ সম্মেলনে দুইজনকে এক সঙ্গে দেখা গেছে। সম্মেলন নিয়ে দুইজনের মধ্যে সমন্বয় হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আগামীকাল সম্মেলন হলেও আজকে পর্যন্ত কাউন্সিলর তালিকা নিয়ে ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারেনি দুই নেতা।
জানা গেছে, সংসদ সদস্যদের উপজেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব না দেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও আবারও সভাপতি হিসেবে সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী থাকতে চাইছেন। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল গফুর, উপজেলা চেয়ারম্যান চৌধুরী মো. গালিব সাদলী, চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম, মুজিবুল হক চৌধুরী, আনম শাহদাত আলম প্রার্থী হচ্ছেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে ।
নেতাকর্মীরা জানান, প্রধানমন্ত্রীর জনসভার পরপর এ সম্মেলন হওয়ায় প্রস্তুতি নিতে পারেনি উপজেলা আওয়ামী লীগ। মাঝখানে একদিন সময় পেয়েছে মাত্র। বাঁশখালী আওয়ামী লীগে দুইধারায় বিভক্ত। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্তমান অনেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্যের বিরোধী। এই বিরোধীপক্ষগুলো সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল গফুরের সঙ্গে রাজনীতি করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের কয়েকজন নেতা জানান, দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন হয়নি। তাই নতুন-পুরোনোদের সমন্বয়ে একটি গ্রহণযোগ্য কমিটি হবে বলে তাঁরা প্রত্যাশা করেন।
বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল গফুর জানান, মঙ্গলবার সকালে বাঁশখালী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ও দক্ষিণ জেলার নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বাংলানিউজ বলেন, আগামীকাল বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। কাউন্সিলর নিয়ে দ্বিতীয় অধিবেশন পরে নগরে অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২২১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০২২
এমআই/পিডি/টিসি