ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ক্রিকেট

‘নতুন হাথুরু’ শ্রীরামের চাওয়া ‘ইমপ্যাক্ট’

মাহমুদুল হাসান বাপ্পি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২২
‘নতুন হাথুরু’ শ্রীরামের চাওয়া ‘ইমপ্যাক্ট’ সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন শ্রীরাম শ্রীধরন/ছবি: শোয়েব মিথুন

রবীন্দ্র সংগীত শোনার জন্য দিনটা একদম ঠিকঠাক। কানে হেডফোন, ‘আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদল দিনে’ গান, বেশ একটা ব্যাপার।

সঙ্গে এক প্লেট খিচুরী হলে তো জমে ক্ষীর। এমন দিনেই কি না বিশ্বকাপ দল ঘোষণা! 

এই আনুষ্ঠানিকতার পর আলোচনা-সমালোচনাই নিয়তি। এমনিতে ফেসবুকে দেখতে হয়তো মন্দ লাগে না। কিন্তু ঢাকার তীব্র যানজট পেরিয়ে এসব শোনার যন্ত্রণা যার আছে-কেবল সে-ই বুঝবে। কিন্তু আজ মিরপুরের সংবাদ সম্মেলনটাতে যিনি যাননি, তার দুঃখও শোনার মতোই হওয়ার কথা। কেন?

তর্ক থাকতে পারে, তবে সম্ভবত বাংলাদেশ ক্রিকেটে কোনো কোচের সেরা সংবাদ সম্মেলন আজ করেছেন শ্রীধরন শ্রীরাম। ভদ্রলোক বাকপটু, বলার উপায় খুব একটা নেই। তবে ধারাভাষ্য দেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে, কথা তাই তেমন মন্দও বলেন না।

কিন্তু শ্রীরামের সংবাদ সম্মেলনকে সেরা বলার কারণ নিশ্চয়ই তার বাকপটুতা নয়। বরং কথার মূল্য, ক্রিকেট বোধের গভীরতা, আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি এবং অতি অবশ্যই তার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা। ক্রিকেটারদের নিয়ে অল্প দিনে তার জানাশোনাও একটা কারণ অবশ্যই।

এসব অবশ্য অস্ট্রেলিয়াতে তিনি বহুবার করেছেন। স্টিফ ও'কফি একবার ১২ উইকেট নিয়েছিলেন পুনেতে, লাঞ্চে দেওয়া শ্রীরামের টোটকাতেই এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে জানা যায়। ভারত সফরের আগে যুজবেন্দ্র চাহাল আর কুলদীপ যাদবকে নিয়ে চিন্তার শেষ নেই; অজিদের সহকারী কোচ তখন ভারত থেকে উড়িয়ে নিয়েছিলেন একই ধরনের স্পিনার। ব্যাটারদের নেটে বল করেছেন তারা, তা কাজেও দিয়েছে ভীষণ।

সেসব থাকুক, বুধবার শ্রীরাম শুরুটা করেছিলেন সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে। বলেছেন, ক্রিকেট নিয়ে এই দেশে আগ্রহ তাকে মুগ্ধ করেছে। সাংবাদিকদের ধন্যবাদ দেওয়ার কারণ অবশ্য বোঝা যাওয়ার কথা শেষের একটা ঘটনা বললে।

সংবাদ সম্মেলন কক্ষ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময়ে থামলেন শ্রীরাম; কয়েকজন সাংবাদিক ঘিরে ধরেছেন তাকে। রসিকতাই হচ্ছে বেশি। শ্রীরাম ঘুরেফিরে এত আগ্রহে নিজের মুগ্ধতার কথা বলছেন। এক সাংবাদিক এর মধ্যেই বললেন, ‘‘তোমার সঙ্গে কথা হলো, অথচ বললে না ‘আস্ক রাবিদ ভাই’, এটা কিছু হলো!’’ 

‘রাবিদ ভাই’ মানে রাবিদ ইমাম, বিসিবির মিডিয়া ম্যানেজার। শ্রীরাম বাংলাদেশে পা রাখার আগেই সাক্ষাৎকার বহু আবদার পাওয়ার কথা অনুমান করা যায়। তার মুগ্ধতার শুরু কিংবা প্রথমেই সাংবাদিকদের ধন্যবাদ দেওয়ার কারণ এটাই কি না, তা অবশ্য জানা হলো না। ভদ্রলোক হয়তো সবার মেসেজের রিপ্লাই দিতে পারেননি, তাই একসঙ্গে সবাইকে বলে দিলেন!

কিন্তু শ্রীরাম যখন সিরিয়াস কথা শুরু করলেন, আশার আলোর দেখাই মিলল তাতে। শান্তকে নিয়ে প্রশ্ন তার দিকে ছুঁটে গেছে তিরের মতো। এই ক্রিকেটার এশিয়া কাপে ছিলেন না। তাকে কোনো ম্যাচে আগেও দেখেনওনি শ্রীরাম।  

অথচ তিনি এসে বললেন শান্তকে নিয়েছেন, কারণ তিনি বিশ্বাস করেন শান্ত ‘ইমপ্যাক্ট’ রাখতে পারবেন। এটা তিনি কীভাবে বুঝলেন? শ্রীরাম জবাব দিলেন, ‘বাউন্সি উইকেটে খেলার মতো সামর্থ্য ওর আছে, হরিজেন্টাল শট খেলতে পারে। ’ শান্ত আদৌ পারবেন কি না, ভিন্ন প্রশ্ন। তবে শ্রীরাম যে শুধু তার নাম দেখে দলে নেওয়ার সম্মতি দেননি, ব্যাপারটা স্পষ্ট হওয়া গেল। বাংলাদেশের ক্রিকেটে এটাও কি কম ব্যাপার!

শ্রীরামের সংবাদ সম্মেলনের মিনিট পাঁচেক আগেই দল ঘোষণা হয়েছিল। নির্বাচকরা ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, শ্রীরামের পরিকল্পনা মাথায় রেখেই স্কোয়াড দেওয়া হয়েছে। রিয়াদের বাদ পড়ার দায়ও তাই স্বাভাবিকভাবেই তার ঘাড়ে পড়ে। কী ব্যাখ্যা দেবেন?

শুরুতে রিয়াদকে ধোনির মতো দেখেন, জানালেন এমন কথা। এরপর মনে করিয়ে দিলেন নির্মম বাস্তবতা, ‘সম্মান’ আর ‘অবদানের দায় স্বীকার’ করতে করতে বাংলাদেশের ক্রিকেট যেটা একদম ভুলেই গেছে। শ্রীরাম বললেন, ধোনি কিন্তু চিরদিন থাকেনি!

টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট হিসেবে বাংলাদেশে নিজের প্রথম সংবাদ সম্মেলন। শত শত ক্যামেরা, বুম আর আলোর ভিড়ে নির্জলা সত্য বলতে পিছপা হননি শ্রীরাম। তিনি বললেন, তার কাছে টি-টোয়েন্টিতে পারফরম্যান্স স্রেফ ‘ওভাররেটেড’ ব্যাপার। তাহলে মানদণ্ড কী? ইমপ্যাক্ট। কেমন?

শ্রীরাম ব্যাখ্যা করলেন, ‘বাংলাদেশ তখনই জিতবে, যখন সাত-আট জন ক্রিকেটার ইম্প্যাক্ট রাখতে পারবে। উদাহরণ হিসেবে বলি, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে এশিয়া কাপের ম্যাচে রিয়াদ আউট হলো; এরপর হাসারাঙ্গার ওভারে মোসাদ্দেক যা করেছে, সেটাই ইম্প্যাক্ট। একটা দল পারফরমার থাকলে হারতে পারে। কিন্তু যদি আমাদের ইমপ্যাক্ট বেশি থাকে, জেতার সুযোগও বেশি। ’

শ্রীরামকে চেনাতে বোধ করি উপরের কথাটুকুই যথেষ্ট। তবুও তার কাছে প্রশ্ন, ফিলোসোফি নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। রাসেল ডমিঙ্গোর ফিলোসোফি পছন্দ হয়নি বলে তাকে টি-টোয়েন্টি থেকে বিদায় বলা হয়েছে। আপনার টি-টোয়েন্টি ফিলোসফি কেমন, একটু কী ব্যাখ্যা করবেন? শ্রীরাম জবাব দিলেন এক কথায়, ‘ইমপ্যাক্ট’।

তিনি অবলীলায় বললেন, সবার সঙ্গে কথা বলেছেন; মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে কথোপকথন সহজ ছিল না একদমই। মেনে নিলেন, রিয়াদের বাদ পড়ায় ‘ব্যাডম্যান’টা তাকেই হতে হবে।  

প্রশ্ন এলো, শান্তকে নেটে দেখে সবারই ভালো লাগে। তাকে জাতীয় দলে নেওয়া হয়। এরপর তিনি আর পারেন না। আপনার ক্ষেত্রেও কি তেমনই হচ্ছে? শ্রীরাম বললেন, উত্তরটা পরের প্রেস কনফারেন্সেই দেবেন।

বেরিয়ে যাওয়ার সময় এক কৌতূহলী মনের প্রশ্ন অবধারিতভাবেই এলো, ‘পড়াশোনা করে এসেছো...?’ শ্রীরাম মুখে মুচকি হাসি এনে বললেন, ‘আমার পারফরম্যান্স কেমন সেটা বলো...। ’ তার পারফরম্যান্স কেমন ওই উত্তর এক সাংবাদিকের কাছ থেকেই পাওয়া গেল।  

বিড়বিড় করতে করতে তিনি বললেন, ‘নতুন হাথুরুসিংহে চলে এসেছে’; ধারনা করা যায়, ইতিবাচক অর্থেই বলেছেন তিনি। ভাবনায়, সাফল্যে শ্রীলঙ্কার সাবেক কোচের মতো ‘ইমপ্যাক্ট’ কি এখন অবধি কেউ রাখতে পেরেছে?

ক্রিকেটারদের দিয়ে শ্রীরাম কতটুকু ‘ইমপ্যাক্ট’ রাখতে পারবেন, ওই উত্তর মাঠেই মিলবে। তিনি ‘হাথুরুসিংহে লাইট’ হবেন কি না, তা বলবে সময়। তবে আপাতত এটুকু নিশ্চিত করা যায় শ্রীরামের সংবাদ সম্মেলনের ভাবনাগুলো বাংলাদেশ ক্রিকেটে অবশ্যই ‘ইমপ্যাক্ট’ রাখতে পারে। দর্শক, ক্রিকেট বোর্ড, সংবাদ মাধ্যম চাইলে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতেই পারে...!

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২২
এমএইচবি/এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।