ঢাকা, বুধবার, ২৩ আশ্বিন ১৪৩২, ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ রবিউস সানি ১৪৪৭

ক্রিকেট

‘স্পন্সররা মানবে না’, ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ বন্ধের প্রস্তাব নিয়ে বলল বিসিসিআই

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২:৪৮, অক্টোবর ৮, ২০২৫
‘স্পন্সররা মানবে না’, ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ বন্ধের প্রস্তাব নিয়ে বলল বিসিসিআই সংগৃহীত ছবি

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) টুর্নামেন্টগুলোতে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ এড়ানোর পরামর্শ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিআই)। সম্প্রতি ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল অ্যাথারটন আইসিসিকে এমন সূচি তৈরি করা বন্ধ করতে বলেছিলেন, যা প্রতিটি বড় টুর্নামেন্টে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার ম্যাচ নিশ্চিত করে।

একটি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিসিসিআই-এর এক কর্মকর্তা ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে পরামর্শ দেওয়াকে ‘সহজ’ বলে অভিহিত করেছেন। তবে তিনি যুক্তি দিয়েছেন যে, সম্প্রচারকারী সংস্থাগুলো এমন কোনো সূচিতে রাজি হবে না যেখানে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই দলের মহারণ থাকবে না।

বিসিসিআই-এর ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এসব নিয়ে কথা বলা সহজ, কিন্তু স্পন্সর এবং সম্প্রচারকারীরা কি এতে রাজি হবে? আজকের পরিস্থিতিতে শুধু ভারত নয়, যেকোনো বড় দল যদি কোনো টুর্নামেন্ট থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেয়, তাহলে স্পন্সর আকর্ষণ করাই কঠিন হয়ে পড়বে। ’

গত মাসে শেষ হওয়া টি-টোয়েন্টি এশিয়া কাপ ২০২৫-কে ঘিরে তৈরি হওয়া উত্তেজনা এবং বিতর্কের কারণেই অ্যাথারটন এই মন্তব্য করেন। ওই টুর্নামেন্টে ফাইনালসহ মোট তিনবার মুখোমুখি হয়েছিল ভারত ও পাকিস্তান। টুর্নামেন্টটি উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের কারণে বিতর্কিত হয় এবং ভারতের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব পাকিস্তানি অধিনায়ক সালমান আঘার সঙ্গে হাত মেলাতেও অস্বীকার করেন।

এই বৈরিতা শুধু পুরুষদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। রবিবার কলম্বোতে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপের ম্যাচে পাকিস্তানের অধিনায়ক ফাতিমা সানা এবং ভারতের অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌরও ম্যাচ শেষে হাত মেলানো থেকে বিরত থাকেন।

যুক্তরাজ্যের 'দ্য টাইমস'-এ লেখা নিজের কলামে অ্যাথারটন স্বীকার করেছেন যে, আইসিসি টুর্নামেন্টে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ রাখার পেছনে শক্তিশালী বাণিজ্যিক এবং কূটনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে অনুষ্ঠিত হওয়া ১১টি আইসিসি ইভেন্টের সবকটিতেই গ্রুপ পর্বে মুখোমুখি হয়েছে এই দুই দল।

অ্যাথারটন লিখেছেন, ‘এই ম্যাচ খুব কম হয় বলেই হয়তো এর বিশাল অর্থনৈতিক প্রভাব রয়েছে। ’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘আইসিসি টুর্নামেন্টের সম্প্রচার স্বত্ব এত চড়া দামে বিক্রি হওয়ার এটি একটি অন্যতম কারণ, ২০২৩-২৭ চক্রের জন্য যার মূল্য প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার। ’

তিনি উল্লেখ করেন, দ্বিপাক্ষিক ক্রিকেটের আর্থিক মূল্য কমে যাওয়ায় আইসিসি ইভেন্টগুলোর গুরুত্ব বেড়েছে, যা ভারত-পাকিস্তান ম্যাচকে সম্প্রচারকারী এবং অংশীদারদের জন্য একটি অপরিহার্য বিষয়ে পরিণত করেছে। তবে অ্যাথারটনের যুক্তি, এই ম্যাচটি এখন আর নিছক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা নয়, বরং রাজনৈতিক এবং আবেগ প্রদর্শনের একটি প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘ক্রিকেট একসময় কূটনীতির বাহন হলেও, এখন তা স্পষ্টতই বৃহত্তর উত্তেজনা এবং প্রচারণার প্রতিভূ হয়ে উঠেছে। একটি গুরুতর খেলার জন্য শুধুমাত্র অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যে টুর্নামেন্টের সূচি পরিবর্তন করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে যেভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, তাতে এই অনুশীলন চালিয়ে যাওয়ার কারণ আরও কমে যায়। ’

সবশেষে ৫৭ বছর বয়সী এই সাবেক ক্রিকেটার ভবিষ্যতের টুর্নামেন্টের ড্র স্বচ্ছ রাখার জন্য আইসিসির প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘পরবর্তী সম্প্রচার স্বত্ব চক্রের জন্য, ম্যাচের ড্র স্বচ্ছ হওয়া উচিত এবং যদি প্রতিবার ভারত ও পাকিস্তান মুখোমুখি না হয়, তবে তাই হোক। ’

এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।